নয়াদিল্লি: লকডাউনের জেরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারগুলি। প্রাথমিকভাবে জুলাইয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খোলার কথা মাথায় রেখে এনসিআরটি গাইডলাইন তৈরীর কাজ শুরু করলেও দেশে করোনা সংক্রামণ যে ভয়াবহ আকার নিয়েছে তাতে ফের নতুন করে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। এই পরিস্থিতিতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থী যারা এনআইওএস (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং) এর সিনিয়র সেকেন্ডারি বোর্ড পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের সমস্যার কথা জানিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে খোলা চিঠির লিখলেন পরীক্ষার্থীদের মায়েরা।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বা শিক্ষাসংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে তাদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে সম্মানজনক উদ্দেশ্য নিয়ে ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রনালয় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি বোর্ড হল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং। দেশজুড়ে প্রায় ত্রিশ লক্ষ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এটি বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম।
চলতি শিক্ষাবর্ষে গত এপ্রিলে এনআইওএস বোর্ডের সিনিয়র সেকেন্ডারি পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা পিছিয়ে সম্ভবত জুলাই অথবা আগস্টে নেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে তাদের লেখা অথবা পড়ায় সহায়তা করার জন্য একজন সহায়ক থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে সমস্ত সতর্কতা অবলম্বন করে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীরা কিভাবে পরীক্ষা দেবেন তার নিয়ে চিন্তিত মায়েরা।
চিঠিতে যে মূল সমস্যাগুলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে-
সামাজিক দূরত্বের সমস্যা: অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে তোতলানো, ক্ষীণ কন্ঠে কথা বলা ইত্যাদির মতো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। পরীক্ষার সময় তাদের কথা শোনা এবং লেখার জন্য সহায়কদের তাদের খুব কাছাকাছি বসতে হবে। ফলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না যা শিক্ষার্থী এবং সহায়ক উভয়ের ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
গুরুতর কমোরিবিডিটি সম্পর্কিত সমস্যা: বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের অনেকেরই অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি কোমরবিডিটির সমস্যাও রয়েছে ফলে অন্যান্য সুস্থ সবল মানুষের তুলনায় তাদের সংক্রামণ আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
সংবেদনশীল বিষয়গুলি: বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের মধ্যে মানসিকভাবে সংবেদনশীল তারা তাদের অনেকের পক্ষে মুখে মাস্ক পরে থাকা কঠিন যা তাদের উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ক্লাস্ট্রোফোবিক বা আবদ্ধতার অনুভূতি সংক্রান্ত ভয় এবং সংবেদনশীল সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরীক্ষা কেন্দ্রে তিন ঘন্টা মাস্ক এবং গ্লাভস পরে থাকা তাদের জন্য কঠিন হবে।
সহায়কদের প্রাপ্যতা: বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে সহায়তা করার ক্ষেত্রে সয়হাকদের অভিভাবকরাও সংক্রমণের ভয়ে নিজের সন্তানদের সহায়কের দায়িত্ব পালনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একইভাবে উদ্বিগ্ন।
তাই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করার জন্য অন্য কোনো বিশেষ উপায়ের আবেদন জানিয়েছেন। অন্যথায় তাদের টিউটর মার্কড অ্যাসাইনমেন্টস (টিএমএ) এবং প্রাকটিক্যাল বোর্ড পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে উত্তীর্ণ করা যেতে পারে যা ইতিমধ্যে ২০২০ সালে অন্যান্য বোর্ডের পরীক্ষার ক্ষেত্রে করা হয়েছে।
এই পরিকল্পনার মাধ্যমে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন অক্ষমতা আইনের আওতায় থাকবে অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুরক্ষাও নিশ্চিত হবে বলেই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন অভিভাবকরা।