হাতিদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় পোষ্যের নামে জমি লিখে দিলেন পশুপ্রেমী

সরকার হাতিদের সুরক্ষায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। বন্য হাতিরা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। আক্ষেপের সুরে আখতার বলেছেন ” সেইসময় আর দূরে নেই যখন হাতিদের অস্তিত্ব শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় থাকবে।”

নয়াদিল্লি: সম্প্রতি যখন কেরলে একটি হাতিকে আনারসের মধ্যে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে খেতে দেওয়া এবং এরপর ওই হাতির মৃত্যুর ঘটনায় যখন দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে তখন নিজের পোষা দুই হাতির আজীবন সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিলেন বিহারের এক পশুপ্রেমী। নিজের হাতিদের নামে ৬.২৫ একর জমি উইল করে দিলেন মহম্মদ আখতার। যদিও তাঁর একটি অন্য পরিচয় আছে। পাটনার ফুলওয়ারি শরিফের নিকটবর্তী জুনিপুরের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের আখতার এশিয়ান এলিফ্যান্ট রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ অ্যানিম্যাল ট্রাস্ট নামে এক স্বচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান। সংবাদ মাধ্যম 'আউটলুক'-কে তিনি জানিয়েছেন হাতি পোষা  তাঁদের পারিবারিক ঐতিহ্য।

সেই হাতিদের বর্তমান প্রজন্মের দুজন হল ২০ বছরের মোতি আর ১৫ বছরের রাণী। জন্মের পর থেকেই হাতিদের সঙ্গে বড় হয়েছেন আখতার। শুধু তাই নয় এদের মধ্যে মোতি একদিন আততায়ীদের হাত থেকে তাঁর প্রাণ রক্ষা করেছে। সেদিন কিভাবে মোতি তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিল সেদিনের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছেন আখতার। একবার মোতি মাহুতের সাথে ভোজপুর জেলার শাহপুর এলাকায় গেছিল, সেখানে সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তার চিকিৎসার জন্য আখতারকে সেখানে ছুটে যেতে হয়েছিল। সেখানে একদিন মোতির গর্জনে ঘুম  ভাঙে তাঁর। তিনি লক্ষ্য করেন জানলা থেকে তাঁর দিকে বন্দুক তাক করে আছে কেউ। তখনই সেখান থেকে সরে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যান আখতার। 

রাণী আর মোতির  দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাহুত। কিন্তু তাঁর অবর্তমানে পরম আদরের এই দুটি হাতির ভবিষ্যতৎ কি হবে সেই দুশ্চিন্তা থেকেই ওদের খাদ্য আর বাসস্থান সুনিশ্চিত করতে নিজের ৬.২৫ একর জমি লিখে দিয়েছেন ওদের নামে। সাধারণত পরিবারের সদস্যদের নামেই এই ধরণের উইল করা হয় বলে আমরা জানি। তবে আখতারের কথায় এই দুটি হাতি তাঁর পারিবারের সদস্যের মতো।

আখতার জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন সহৃদয় ব্যক্তি হাতিদুটি তাঁর কাছ থেকে কিনে নিয়ে তাদের দেখভালের দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন। আবার এমন কিছু মানুষ আছে যারা এই হাতিদুটিকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আখতারের। চিন্তার বিষয়, তারা ওনার পরিবারেরই সদস্য। পশুব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হাতিদুটিকে প্রাণে মারার পরিকল্পনা করছে। তাই হাতিদের নামে জমি লিখে দেওয়ার পরেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেননা। কারণ এই পদক্ষেপের জন্য তিনি এখন নিজের পরিবারের সদস্যদের কাছে চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন। পারিবারিক সদস্যদের কাছ থেকে হত্যার হুমকিও পেয়েছেন। নিজের এবং নিজের আদরের দুই হাতির জীবন সংশয়ের আশংকায় পাটনার চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডন এবং পাটনা থানার পুলিশ প্রধানকেও চিঠি দিয়েছেন। 

তবে শুধু নিজের মোতি আর রাণী নয়। মানুষের আধিপত্যে বন্য হাতিদের জীবন নিয়েও শঙ্কিত পশুপ্রেমী আখতার। তার মতে সরকার হাতিদের সুরক্ষায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। বন্য হাতিরা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। আক্ষেপের সুরে আখতার বলেছেন ” সেইসময় আর দূরে নেই যখন হাতিদের অস্তিত্ব শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় থাকবে।”

পৃথিবীতে মানুষের আধিপত্যে পশুকুলের অস্তিত্ব সংকট দিন দিন বেড়েই চলেছে। একদিকে মানুষ যেমন নিজেদের আস্তানা গড়ে তুলতে পশুপাখিদের নিশ্চিন্ত আশ্রয় কেড়ে নিচ্ছে খাবারের অভাব সৃষ্টি করছে। খাবারের অভাবে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে নীরিহ পশুদের। অন্যদিকে নির্বিচারে পশুপাচার করছে নিজেদের অন্ন সংস্থানের উপায় করতে। বিশ্বজুড়ে করোনার তান্ডব যে এই পশুকুলকে বিপদে ফেলারই চরম পরিণতি এবিষয়ে বার বার সতর্ক করেছেন পরিবেশবিদ থেকে ভাইরাসবিদেরাও। এভাবে চলতে থাকলে মনুষ্য জাতিও যে চরম অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হতে পারে সেবিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাটাই এখন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × four =