দোরে দোরে সংবাদপত্র বিক্রি করে বিশেষ শিশুদের মুখে ভাত জোটান তরুণী

দোরে দোরে সংবাদপত্র বিক্রি করে বিশেষ শিশুদের মুখে ভাত জোটান তরুণী

তিরুবনন্তপুরম: বিশেষভাবে সক্ষম মানুষগুলোকে সবাই একটু আড় চোখেই দেখে। তাদের সাহায্য করা তো দূরে থাক, তাদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখতেই বেশিরভাগ মানুষ একটু স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। আর তাদেরকেই আপন করে নিয়েছে তিনি। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে তিনি বাড়ি বাড়ি পেপার বিক্রিও করেছেন। তিনি আর কেউ নন, আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো এক নারী। কিন্তু মানুষের দুঃখটি তিনি অনুভব করে পারেন। তাঁর নাম জলি জনসন।

হেল্পিং হ্যান্ড অর্গানাইজেশন বা এইচ টু ও  নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করেছেন তিনি। সেখানে মূলত অটিস্টিক চাইল্ড কিংবা অন্যান্য ধরনের বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের সাহায্য করা হয়। সেখানে দেওয়া হয় মিউজিক থেরাপি, ভোকেশনাল ট্রেনিং কিংবা বিভিন্ন পশুপালন জাতীয় শিক্ষা দেওয়া হয় বিজ্ঞানসম্মতভাবে। প্রায় দুই হাজার শিশুকে জলি জনসন সাহায্য করছেন। আর জলিকে সাহায্য করছে প্রায় ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী।

কোথা থেকে মানুষের কী পরিবর্তন আসে, তা কেউ বলতে পারে না। আর সেই পরিবর্তন থেকেই সমাজের একটা মুখ হয়ে ওঠেন অতি সাধারণ মানুষেরা। শুধু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা থেকে তাঁরা সামাজের একজন দায়িত্ববান নাগরিকে পরিণত হন। ৩৩ বছরের জলি বলেন, ‘সেই দিনটার কথা আমি আজও ভুলতে পারিনি। কোনওদিন ভুলতে পারব না। আমি একটা বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলাম। সেখানের একজন বৃদ্ধা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। আমি প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি। তবে তাঁদের সেই কান্নাতে আমার চোখের জল ভিজে গিয়েছিল। পরে বুঝতে পেরেছিলাম, ওই বৃদ্ধা আমাকে তাঁর মেয়ে মনে করেছিলাম। কিন্তু সেই দিন, সেই মুহূর্ত আমার জীবনে বিশাল বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। আমি মনে মনে সেই মুহূর্তে ঠিক করে নিয়েছিলাম, যাঁদের জীবনে বিশেষ সাহায্যের প্রয়োজন, আমি তাঁদের পাশে দাঁড়াব। তারপরেই আস্তে আস্তে আমি এই এনজিওটা তৈরি করে ফেলি।’

কেরালার রাজধানী তিরুবনন্তপুরমের থেকে একটু দূরে একটা গ্রামে জলি বেড়ে ওঠেন। ছোটবেলা থেকে চার্চের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই  মানুষের সঙ্গে কাজ করার মানুসিকতাটা সেখান থেকেই গড়ে উঠেছিল। ক্লাস টেন পাশ করার পর থেকেই তিনি সপ্তাহে দুই দিন বৃদ্ধাশ্রমে যেতেন। কলেজ জীবন থেকেই বিভিন্ন এনজিওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান।

কথায় কথায় জলি জানান, তিনি প্রথম দিকে খুব কম বেতনে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের বিভিন্ন থেরাপি দিতেন। কিন্তু পরে একদিন ছাত্রদের বাড়ি গিয়ে বুঝতে পারেন, এই সামান্য বেতন তাঁদের জন্য অনেক, তাই তিনি বিনা বেতনে কাজ করা শুরু করেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তাঁর এমজিও এইচ টু ও গড়ে ওঠে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + nine =