বাল্য বিবাহের প্রথা ভেঙে স্বপ্নের উড়ান ১৫ বছরের চান্দনি

বাল্য বিবাহের প্রথা ভেঙে স্বপ্নের উড়ান ১৫ বছরের চান্দনি

পাটনা: খুব ছোট বসয়েই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তাঁর বাবা-মায়ের৷ এবার ছিল সাত ভাই-বোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান চান্দনির পালা৷ চিরাচরিত প্রথা মেনে তাকেও যে সেই পথেই ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা হবে, তাতে আর আশ্চর্যের কি!  

বিহারের সমস্তিপুরের দামোদরপুর মাহুলির ছোট্ট গ্রামে আজও বাল্য বিবাহ এবং শিশু শ্রমের প্রচলন অব্যাহত রয়েছে৷ ছোট থেকেই শিশুদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয় কাজের দায়িত্ব৷ সংসারের বোঝা৷ পরম্পরার এই শিকল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা কোনও ভাবেই সহজ ছিল না তার৷ তবুও লড়াই করে পাঁচ সপ্তাহের জন্য ‘সংবিধান লাইভ! বি এ জাগরিক’ –এ যোগ দেওয়ার জন্য পরিবারকে রাজি করায় ১৫ বছরের চান্দনি৷ যার মধ্যে দিয়ে জীবনে বেঁচে থাকার এক স্বতন্ত্র স্বাদ পায় সে৷ অবগত হয় শিশুদের অধিকার সম্পর্কে৷ 

‘এন্ডিং চাইল্ড ম্যারেজ, এ প্রোফাইল অফ প্রগ্রেস ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক UNICEF- এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রতি তিনজন নাবালিকা বধূর মধ্যে একজন রয়েছে ভারতে৷ বিশ্বের ২২৩ মিলিয়ন নাবালিকা বধূর মধ্যে ১০২ মিলিয়ন রয়েছে আমাদের দেশে৷ ১৫ পার হওয়ার আগেই যাদের পরিচয় হয় ‘বালিকা বধূ’৷ এই ২২৩ মিলিয়ন মেয়ের মধ্যে চান্দনিও হয়তো একজন হতো৷ ১৮ পেরনোর আগেই তাকেও বেঁধে ফেলা হতো বিয়ের বন্ধনে৷ কিন্তু নিজের উদ্যমে নিজের ভাগ্যকে বদলেছে সে৷ 

জওহর জ্যোতি বাল বিকাশ কেন্দ্র (জেজেবিভিকে) এমন একটি সংগঠন যা ৩০ হাজার কিশোর-কিশোরীকে আত্মনির্ভর করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে৷ বিহারের সমস্তিপুরের ৩০০ কিশোর-কিশোরীও এই অভিযানে সামিল৷  প্রথম প্রথম সমস্যা হয়েছিল চান্দনির৷ কিন্তু পরে যখন তাঁকে ভারতের সংবিধানের প্রাথমিক প্রস্তাবনা, শিশু অধিকার সম্পর্কে বোঝানো হয়, তখন আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় সে৷ 

মৌলিক অধিকার আর কর্তব্যের দৃষ্টিতে নিজের অতীত জীবনকে দেখার পর তা পরিবর্তনের সংকল্প নেয় চান্দনি৷ আগে যা অসম্ভব ছিল, সেটাই সম্ভব করে দেখায় সে৷ এই পরিবর্তন সাধনের জন্য দায়বদ্ধতার বোধ জন্মায় তার মধ্যে৷ বাল্য বিবাহের  বিষয়টি আরও গভীরভাবে বুঝতে শুরু করে চান্দনি৷ কেন এই প্রথা বন্ধ হওয়া দরকার, সে বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে যায় তার কাছে৷ এর পর কী করতে হবে তা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় চান্দনি৷ 

সবার আগে সে কথা বলে তার পরিবারের সঙ্গে৷ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে৷ এই কাজটা একেবারেই সহজ ছিল না৷ কিন্তু তার যুক্তির কাছে হার মানে তার পরিবারের কুসংস্কার৷ পরিবারের কাছ থেকে সে ছিনিয়ে নেয় তার বেঁচে থাকার অধিকার৷ শিক্ষার অধিকার৷ চান্দনি শুধু নিজেরই নয়, বাল্য বিবাহের এই পাক থেকে বাঁচিয়ে আনেন তার মতন আরও তিন নাবালিকাকে৷ নিজের হাতে লেখেন নিজের ভবিষ্যৎ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 3 =