‘বাঁধ ষড়যন্ত্র’, নদীর জলকে অস্ত্র বানিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাশা বদলাতে চাইছে চিন

‘বাঁধ ষড়যন্ত্র’, নদীর জলকে অস্ত্র বানিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাশা বদলাতে চাইছে চিন

 

নয়াদিল্লি: প্রতি বছরই মরশুমে বানভাসী হয় ভারতে একাধিক রাজ্য৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ বছরের পর বছর ধরে বন্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও প্রকৃতির সামনে বারবার অসহায় হতে হয়েছে ভারতকে৷ তবে প্রকৃতির তাণ্ডব ছাড়াও, ভারতের একাধিক রাজ্যে বন্যা সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে প্রতিবেশি চিন৷ নিজেদের ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে নদীর জলকে সামরিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে বেজিং৷ নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে একাধিক দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করছে তারা৷ 

অভিযোগ, ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের দেশের নদীগুলিকে হাতিয়ার করার পন্থা নিয়েছে চিন৷ বলা হয়ে থাকে পরবর্তী বিশ্বযুদ্ধ হবে জলকে কেন্দ্র করে৷ কিন্তু চিন জলকে হাতিয়ার করেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লড়তে চাইছে৷ একাধিক দেশে বন্যা বা খরা পরিস্থিত তৈরি করা এখন চিনের হাতে৷ এই কৌশলে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের মতো দেশের স্বার্থে আঘাত হানতে চিন অনেকটাই সফল হয়েছে৷ তবে জলকে অস্ত্র করতে চিন যে বাঁধ তৈরি করেছে, সেটাই বুমেরাং হয়ে আঘাত হেনেছে তাদের উপরে৷ এই বছর বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে দেশের ৪ কোটিরও বেশি মানুষ৷ প্রতি বছরই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় চিনকে৷

গত কয়েক দশকে আশ্চর্যজনকভাবে দেশের নদীর উপরে ৮৭ হাজারেরও বেশি বাঁধ তৈরি ফেলেছে চিন৷ এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে, কেন এই বিপুল পরিমাণ বাঁধের নির্মাণ করল তারা? সাধারণত, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন বা চাষের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়৷ কিন্তু বাঁধ তৈরির পিছনে অন্য অভিসন্ধি রয়েছে চিনের৷ নদীন জলকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার ছক কষেছে তারা৷ তিনটি নদীর উদাহরণ দেখলেই চিনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে যাবে৷ 

প্রথমত, চিনের সবচেয়ে বড় নদী ইয়াংৎসি এবং তার শাখা নদীর উপর সাত বছর আগে ১০০টি বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছিল চিনে৷  এতদিনে আরও কত বাঁধ নির্মাণ হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়৷ এরপর আসা যাক মেকং নদীর কথায়৷ এশিয়ার সপ্তম দীর্ঘ এই নদীর উপর ১১টি বাঁধ বানিয়েছে চিন৷ দক্ষিণ চিনের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মায়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামে ঢুকে পড়েছে এই নদী৷ এই নদীর জলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখাই বাঁধ তৈরি মূল উদ্দেশ্য৷ মেকং এবং এর শাখানদী দক্ষিণ এশিয়ার ৬ কোটিরও বেশি মানুষের জীবন রেখা৷ বাঁধ নির্মাণ করে এই ছয় কোটি মানুষের ভাগ্য নিজের হাতে বন্দি করতে চাইছে চিন৷ 

তৃতীয় উদাহরণ হল ব্রহ্মপুত্র নদী৷ চিনের তিব্বত থেকে উৎপত্তি হওয়ার এই নদী ভারতের উপর দিয়েও বয়ে চলেছে৷ ২০১৫ সালে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর জাম-মু বাঁধ নির্মাণ করে চিন৷ তিব্বতে এই নদীর উপর আরও তিনটি বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে৷  ব্রহ্মপুত্র আমাদের দেশের অরুণাচলপ্রদেশ, অসম সহ উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে৷ ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর নির্মিত এই বাঁধকে হাতিয়ার করেই উত্তর-পূর্ব ভারতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে চিন৷ 

চিন এটা করতে পারছে তার ভৌগলিক অবস্থানের জন্য৷ চিনই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখান থেকে উৎপত্তি হওয়া নদী ১৮টি দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে৷ প্রকৃতির এই দিক্ষিণ্যের সুযোগ নিচ্ছে তারা৷ নদীর জল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ব্যাপকভাবে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়েছে শি জিংপং-এর দেশ৷ চিনের উপর দিয়ে বয়ে আসার নদীর জল কোন দেশে কখন, কতটা মাত্রায় বইবে তা নিয়ন্ত্রণ করছে বেজিং৷ কোনও দেশে খরার পরিস্থিতি তৈরি করবে, আর কোনও দেশকে বন্যার জলে ভাসিয়ে দেবে তা অনেকটাই চিনের হাতে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − 5 =