কাশ্মীরে মানবাধিকার বলতে পুলিশ-নিরাপত্তারক্ষীদের যা ইচ্ছে তাই করার অধিকার?

কাশ্মীরে মানবাধিকার বলতে পুলিশ-নিরাপত্তারক্ষীদের যা ইচ্ছে তাই করার অধিকার?

 

তপন মল্লিক চৌধুরী: জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ প্রতিনিধি দল জানাচ্ছে, ভয়াবহ আকার নিয়েছেকাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি। তারা এও জানিয়েছে, ভারত সরকার এখনও যদি এই বিষয়ে কোনো পদক্ষে না করে, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকেই পদক্ষেপ করতে হবে।

জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল স্পষ্টভাবেই বলেছেন, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর থেকে কাশ্মীরের মুসলিম বাসিন্দাদের উপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের এক বছর পূর্ণ হল। আর ওই দিনই জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ প্রতিনিধি দলের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকে কাশ্মীরের মানুষের জীবন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়তই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে ভারত সরকারের এখনই সেখানকার মুসলিম নাগরিকদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। অবিলম্বে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে পরে পরিস্থিতি সামলানো মুশকিল হয়ে পড়বে। তখন বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।

তবে এই প্রথম নয়, গত এক বছর ধরে ওই প্রতিনিধি দল ভারত সরকারকে কাশ্মীরে মুসলমান নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং তাদের ওপর অত্যাচারের ব্যাপারে অন্তত তিন থেকে চারটি চিঠি দিয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার আজ পর্যন্ত তার কোনো জবাব দেয়নি। শুধু তাই নয়, গত বছরের অক্টোবর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের মানবাধিকার কমিশন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে প্রশাসন যখন তখন কাউকে আটক করে বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে তখন তার আইনগতভাবে জবাব চাওয়ার মতো আর কেউ থাকে না।  

কিছুদিন আগে দেশের বিভিন্ন পেশায় যুক্ত সংবেদনশীল কিছু  মানুষ  জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন, চিফ জাস্টিস অব ইন্ডিয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী এবং প্ল্যানিং কমিশনের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিটি ১০ জুলাই কাশ্মীর টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে  ওঁরা লিখেছেন যে, যেভাবে গোটা কাশ্মীরজুড়ে রোজ অতিরিক্ত পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর লোকজন নিরীহ কাশ্মীরবাসীর ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে তাতে তাঁরা উদ্বিগ্ন।

২৯ জুন অনন্তনাগে পুলিশ-আধাসামরিক বাহিনী গুলি চালালে ৩ জন সাধারণ নাগরিকের প্রাণ গেল। এরপর ৫ ও ৬ জুলাই পুলিশ-আধাসামরিক বাহিনী ফের গুলি চালালে ৪জন নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়। সব মিলিয়ে গত তিন সপ্তাহে ১৫ জন কাশ্মীরবাসী পুলিশের গুলিতে অথবা টিয়ার গ্যাসের শেল লেগে কিংবা ভয়ে পালাতে গিয়ে বা অত্যাচারে প্রাণ হারিয়েছে। পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই বিক্ষোভকে দ্রুত থামিয়ে দিতে গুলি চালিয়ে দিচ্ছে। তা নিয়ে প্রতিবাদে আরেকটি বিক্ষোভের জন্ম হচ্ছে। পুলিশ সেটার ওপর গুলি চালিয়েই প্রত্যুত্তর দিচ্ছে। এমনকী অ্যাম্বুলেন্সকে পযর্ন্ত ছাড় দিচ্ছে না পুলিশের গুলি। শ্রীনগরের সাফাকাদাল এবং সঙ্গম অঞ্চলে অ্যাম্বুলেন্সের ওপর গুলি চালিয়েছে সিআরপিএফ। ওই চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে ১৯৯৬ সালে বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী জলীল আন্দরাবির মৃত্যুর কথা।

জলীল আন্দরাবিকে তাঁর অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণ করা হয়েছিল। তিন সপ্তাহ পর তাঁর পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরে পুলিশ রিপোর্ট ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাধ্য হয়ে যে তদন্ত কমিশন বসে তাতে দেখা যায় রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের কাজ এটা। কোর্টে মেজর জেনারেল অবতার সিং দোষী সাব্যস্ত হন। কিন্তু তাঁর কোনও শাস্তি হয়নি। মজার ব্যাপার হল, বেশিরভাগ অভিযোগ দায়ের করার পরও কিছুই প্রমাণিত হয় না।

কাশ্মীর টাইমসে ১৩ এপ্রিল ২০০৯-এর একটি প্রতিবেদনের বক্তব্য অনুযায়ী, গত সাত বছরে ১১৯টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তদন্তের আদেশ দেওয়া হলেও মাত্র ১২টি প্রমাণিত হয়েছে। আসল ঘটনা হল, ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত পিডিপি-কংগ্রেস কোয়ালিশন, তারপর এনসি কোয়ালিশন সবাই যে কোনও ঘটনায় চাপের মুখে তদন্তের আদেশ দিলেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু কোনও তদন্ত হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × three =