নয়াদিল্লি: ‘‘দায়িত্ব পালনই আমার জীবনের প্রথম অগ্রাধিকার৷ আমি আমার দেশকে ভালোবাসি৷’’ এটাই ছিল লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল বি সন্তোষ বাবুর জীবনের মন্ত্র৷ প্রায় সময়ই এ কথা স্ত্রীকে বলতেন তিনি৷ স্ত্রীকে বলা তাঁর শেষ কথা ছিল ‘সাহসী হও’৷
আরও পড়ুন- ‘LOC থেকে LAC, শত্রুদের তাদের ভাষাতেই জবাব দিয়েছে ভারত’, কড়া বার্তা নমোর
সন্তোষ বাবুর স্ত্রী বি সন্তোষী ৮ বছরের মেয়ে ও ৪ বছরের ছেলেকে নিয়ে দিল্লিতে থাকতেন। গত ১৪ জুন স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয় তাঁর৷ এর ঠিক পরের দিনই গালওয়ান উপত্যকায় দেশ রক্ষায় নিজের জীবন বলিদান দেন ৩৭ বছরের এই বীর সেনা৷ ওই দিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা লাল ফৌজের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শহিদ হয়েছিলেন ২০ জওয়ান৷
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রমোশন পেয়ে ১৬ বিহার রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন বি সন্তোষবাবু৷ দু’বছরের জন্য তাঁকে নিজের রাজ্য তেলেঙ্গানার সেকেন্দরাবাদে বদলি করা হয়েছিল। নতুন বছরে ঘরে ফেরার পরিকল্পনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন৷ নিহত কর্নেল বলতেন, ‘এ বার পরিবারের সঙ্গে থেকে নিজের রাজ্যকে সেবা করার সুযোগ পাব।’
আরও পড়ুন- স্বাধীনতা দিবসে নয়া রেকর্ড প্রধানমন্ত্রী মোদীর, ভাঙলেন বাজপেয়ীর রেকর্ড
সন্তোষ বাবুর স্ত্রী বি সন্তোষী বলেন, ‘‘নতুন পোস্টিং নিয়ে অক্টোবর মাসে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর৷ একসঙ্গে অনেক পরিকল্পনা করেছিলাম আমরা৷ নিজের ইউনিটের পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে, সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর অপেক্ষায় ছিলেন তিনি৷ এই নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক কথা হতো৷ কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না ওঁর৷’’ ৯ বছর আগে সন্তোষ বাবুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সন্তোষীর৷ স্বামীর মৃত্যুর পরও সন্তানদের সামনে ভেঙে পড়েননি তিনি৷ সন্তোষী বলেন, ‘‘সন্তানরা যখন বাবার কথা জিজ্ঞাসা করে, তখন তাঁদের বলি বাবা অফিসের কাজে আছে৷ বাবা ফিরে আসবে৷’’ সন্তোষ বাবুর মৃত্যুর পর তেলেঙ্গানায় ডেপুটি কালেক্টর পদে নিয়োগ করা হয়েছে সন্তোষীকে৷ কিন্তু সন্তোষের মৃত্যুতে যে অপূরীয় ক্ষতি হয়েছে, কোনও কিছুতেই তা পূরণ হওয়ার নয়৷ সন্তোষ বাবুর ৮ বছরের মেয়ে অবশ্য জানে বাবা আর নেই৷ প্রতি রাতে চোখের জলে বাবাকে মনে রাখতে চায় সে৷
আরও পড়ুন- এক দেশ, এক স্বাস্থ্য! স্বাধীনতা দিবসে ‘জাতীয় হেলথ ডিজিটাল মিশনে’র ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
এই বীর জওয়ানের মৃত্যুর পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার চিঠি পেয়েছে তাঁর পরিবার৷ তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা, সমর্থন জানিয়েছেন দেশের মানুষ৷