নয়াদিল্লি: লকডাউন ঘোষণার আগে থেকেই দেশের অর্থনীতির অবস্থা সন্তোষজনক৷ করোনার জেরে লকডাউন ঘোষণার পরে তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিন্তু এই সময়েও কেন্দ্রীয় সরকার অনাদায়ী ঋণ আদায়ে লাগাতার ছাড় দিয়ে চলেছে৷ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ৷
গত বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা। সেখানে ২০২০ এর এই মহামারী পরিস্থিতিতেও এই সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। সিপিআইএম সীতারাম ইয়েচুরি টুইটে মন্তব্য করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার জনগণের অর্থ লুট করছেন৷ তিনি প্রশ্ন করেছেন, করোনা পরিস্থিতির এই সংকটের সময় কি করে কেন্দ্র কর্পোরেট ঋণ মুকুবের নামে জনগণের টাকা লুট করছে? রিজার্ভ ব্যঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা বছরেও দেশের ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে এত টাকার ঋণ মকুব হয় না। সুতরাং পরিকল্পনা মতোই মোদী সরকার কর্পোরেটদের এই ঋণ মুকুব করে চলেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে৷
ঋণ মুকুবের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পাশাপাশি বেসরকারি ব্যঙ্কগুলিও জড়িয়ে আছে। চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে কর্পোরেট অনাদায়ী ঋণ মুকুবের অঙ্কে স্টেট ব্যাঙ্ক ৪ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ৩ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা, কানাড়া ব্যাঙ্ক ২ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক ১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা এবং ইনডাস ব্যাঙ্ক ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার ঋণ মকুব করেছে। ক্ষুদ্র শিল্পের থেকেও বেশি পরিমানে স্বল্প সুদের ভিত্তিতে ঋণ বিলির উদ্যোগ নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
তথ্য পরিসংখ্যান সংস্থা এইসিআরএ’র রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে মোট ঋণ মুকুব হয়েছে ৪ লক্ষ ৫৮৪ কোটি টাকা। সেখানে মোদী সরকার ক্ষমতায় ছিল ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, এই ৪ বছরে মোট ৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকার কর্পোরেট ঋণ মকুব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৮০ শতাংশ কর্পোরেট ঋণ মুকুব করা হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর আমলেই। এই চার বছরে ঋণ মুকুবের পরিমাণ ক্রমশ বেড়েছে। ২০১৪ সালে অনাদায়ী ঋণ মকুবের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, সেই অঙ্ক ২০১৫ এ বেড়ে হয়েছিল ৪৬ হাজার ১৭৯ কোটি টাকায়। ২০১৬ সালে তা আরও বেড়ে হয় ৬১ হাজার ১২১ কোটি, ২০১৭ সালে ৭৫ হাজার ৯২৯ কোটি এবং ২০১৮ সালে ১ লক্ষ ২০ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। ২০১৯ এ তা ২ লক্ষ ছাড়িয়েছে। করোনা পরিস্থিতি তথা দেশের অর্থনীতির এই বেহাল দশায় চলতি বছর এই অঙ্ক কোথায় দাঁড়ায় সেটাই বিবেচ্য৷