মুম্বই: সুপ্রিম নির্দেশে সিবিআই সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুরহস্যের তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর থেকেই খুলতে শুরু করেছে একের পর এক জট৷ মৃত্যুর আগে শেষ কয়েক ঘণ্টা কী ভাবে কাটিয়েছিলেন সুশান্ত, সিবিআই-কে এবার তার বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন এই মামলার প্রধান চার সাক্ষী৷ সুশান্তের সঙ্গে বান্দ্রার ফ্ল্যাটে থাকতেন এই চার জন৷
গত ১৪ জুন বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় সুশান্ত সিং রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ৷ এই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন সুশান্তের ফ্ল্যাটমেট সিদ্ধার্থ পিঠানি, পরিচারক নীরজ, রাঁধুনি কেশব এবং হাউসকিপার দীনেশ সাওয়ান্ত৷ কয়েক ঘণ্টা টানা জেরার পর সুশান্তের জীবনের শেষ দিনের বর্ণনা দেন তাঁরা৷
জানা গিয়েছে, ১৩ জুন রাতে এবং ১৪ জুন সকালে অধিকাংশ সময়টাই ঘর বন্ধ করে কাটিয়েছিলেন সুশান্ত৷ দীপেশ জানান, ১৪ জুন সকালে সবার আগে তিনিই ঘুম থেকে উঠেছিলেন৷ দীপেশ সিবিআই-কে জনান, ‘‘আগের দিন রাতে সুশান্ত স্যারকে যখন ডিনারের কথা বলেছিলাম, ডিনার করতে চাননি তিনি৷ আমাকে ম্যাঙ্গো সেক দিতে বলেন৷’’ দীপেশের কথা অনুযায়ী নিজে না খেলেও, তাঁদেরকে খেয়ে নিতে বলেছিলেন সুশান্ত৷ রাতের খাওয়ার খেয়ে মোবাইলে ফোন দেখতে শুরু করেন দীপেশ৷ রাতে সুশান্তের ফোন কল করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু সাড়া মেলেনি৷
আরও পড়ুন- ভারতীয় বায়ুসেনায় যুক্ত হচ্ছে রাফাল, ঘুম ছুটছে চিন-পাকিস্তানের
পর দিন সকাল সাড়ে পাঁচটার সময় ঘুম থেকে ওঠেন দীপেশ৷ প্রতিদিনের মতো নিয়মমাফিক কাজ শেষ করে উপরে সুশান্তের ঘরে যান তিনি৷ গিয়ে দেখেন ইতিমধ্যেই উঠে পড়েছেন সুশান্ত৷ একা বসে আছেন বিছানার উপর৷ পাখা চলছে৷ পর্দাটা অর্ধেক টানা৷ সুশান্ত চা খাবেন কিনা জানতে চান দীপেশ৷ কিন্তু চা-জলখাবার কিছুই খেতে চাননি অভিনেতা৷ সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙে কেশব এবং নীরজের৷
নীরজ সিবিআই অফিসারদের জানান, সকাল ৮ টা থেকে ৮টা ১৫ মিনিটের মধ্যে সুশান্তকে ডেকেছিলেন তিনি৷ সেই সময় সিঁড়িতে এসে ঠাণ্ডা জল দিতে বলেছিলেন ‘স্যার’৷ এর এক ঘণ্টা পর বেদানার জুস এবং ডাবের জল নিয়ে সুশান্তের ঘরে যান কেশব৷ তখন ৯টা ১৫ মিনিট হবে৷ সেই সময়ই সুশান্তকে শেষবার দেখেছিলেন তাঁরা৷ কেশব তদন্তকারী অফিসার এবং পুলিশকে জানান, এর পর ‘স্যার’ দুপুরে কী খাবেন জানতে গিয়ে দেখি তাঁর ঘর ভিতর থেকে বন্ধ৷ যা স্বাভাবিক ছিল না৷ এর পরেই সিদ্ধার্থ পিঠানিকে বিষয়টি জানান তাঁরা৷ সুশান্তের ঘরের ঠিক উল্টোদিকের ঘরটাতেই থাকতেন সিদ্ধার্থ৷ দীপেশ বলেন, সাড়ে দশটা নাগাদ সিদ্ধার্থ স্যার এসে জানান সুশান্ত স্যার ভিতর থেকে দরজা আটকে দিয়েছেন৷ সেই সময় আমরা সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম৷ কারণ রিয়া ম্যডাম না থাকলে ঘর বন্ধ করতেন না স্যার৷ ১৫ মিনিট পর আবার তাঁর ঘরের কড়া নাড়া হয়৷ কিন্তু সাড়া মেলেনি৷
আরও পড়ুন- BREAKING: নিতেই হবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা, চূড়ান্ত রায় সুপ্রিম কোর্টের
সিদ্ধার্থ জানান, ইতিমধ্যে সুশান্তের দিদি মিতু ফোন করেন৷ তাঁকে জানাই, সুশান্ত দরজা খুলছে না৷ মিতু ক্রমাগত দরজা খোলার চেষ্টা করতে বলেন৷ ওঁরা জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কা দিতে থাকে৷ কিন্তু দরজা খোলনি৷ সাড়াও দেননি সুশান্ত৷ ১১ টা ১৫ হবে, তাঁরা চারজনেই চাবি খুঁজতে শুরু করেন৷ সুশান্তের ম্যানেজার স্যমুলেয় মিরান্ডার কাছে চাবি আছে কিনা জানার জন্য তাঁকেও ফোনও করা হয়৷ কিন্তু মিরান্ডার কাছেও চাবি ছিল না৷ এর পর চাবিওয়াবাকে ডাকা হয়৷
পিঠানি ফ্ল্যাটের গার্ড রাজুকে বলেছিলেন, ঘরের দরজা জ্যাম হয়ে গিয়েছে৷ চাবিওয়ালা তালা ভাঙার পরই তাঁকে টাকা দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়৷ দরজা খুলে সিদ্ধার্থ এবং দীপেশই প্রথম সুশান্তের ঘরে ঢোকেন৷ সেই সময় বাইরেই দাঁড়িয়েছিলেন নীরজ এবং কেশব৷ ঘরের আলো নেভানো ছিল৷ পর্দাও টানা ছিল৷ আলো জ্বালাতেই তাঁরা হতচকিত হয়ে যায়৷ তাঁরা ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন সুশান্তকে৷ সঙ্গে সঙ্গেই মিতুকে ফোন করে বিষয়টি জানান সিদ্ধার্থ৷ মিতুর স্বামী দেহ নামিয়ে আনতে বলেন৷ ১০৮ ডায়েল করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন সিদ্ধার্থ৷ পাঁচ মিনিটের মধ্যে সুশান্তের দেহ নামিয়ে আনা হয়৷