কাজের মধ্যেই জীবনের দুঃখ ভুলে থাকার আশ্রয় খুঁজতেন একনিষ্ঠ প্রণব

 ২০১৫ সালে সহধর্মিণী ৫৮ বছর বয়সী  সুভ্রা মুখার্জির মৃত্যুর পর শোকাহত প্রণব মুখার্জি কাজের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছিলেন দুঃখকে জয় করার পন্থা। স্ত্রী'র শেষকৃত্যে অংশ নেওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যেই অফিসে ফিরে আসেন তিনি।

নয়াদিল্লি:  কংগ্রেস দলের একনিষ্ঠ কর্মী থেকে শুরু করে ভারতের রাষ্ট্রপতি, উৎসুক পাঠক থেকে শুরু করে কঠোর তত্ত্বাবধায়ক প্রণব মুখার্জি ছিলেন  ভারতের সর্বকনিষ্ঠ অর্থমন্ত্রী। ১৯৮২ সালে ৪৭ বছর বয়সে দেশের অর্থমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যিনি 'প্রণব দা' নামেই সকলের কাছে সমাদৃত ছিলেন, সেই প্রণব মুখার্জি কংগ্রেসের শাসনকালে দেশের একাধিক পদের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সর্বোপরি ভারতের ১৩ তম রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন।

 

প্রণব মুখার্জি সম্পর্কে জেনে রাখার মত দশটি বিষয়:  পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে উপনির্বাচনের সময় প্রথমবার ইন্দিরা গান্ধীর চোখে পড়েন তিনি।  যেখানে তিনি ভি কে কৃষ্ণ মেননের নির্বাচনী প্রতিনিধি ছিলেন। প্রণব মুখার্জীর সংসদীয় যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৯ সালে রাজ্যসভা থেকে। ২০০৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের জাঙ্গিপুর থেকে প্রথমবার নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের নেতৃত্ব দিয়েছেন – বিদেশ বিষয়ক, প্রতিরক্ষা ও অর্থ – এবং এই ক্ষেত্রগুলিতে তাঁর উৎকর্ষতাই তাঁর জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা খুলে দিয়েছিল। ঐতিহাসিকভাব তিনিই একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি প্রধানমন্ত্রী পদে না থেকেও আট বছর লোকসভায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।

রাজনৈতিক সূক্ষ্মদর্শিতা এবং সমগ্র দল জুড়ে ঐকমত্য গঠনে দক্ষতার পরিচায়ক, প্রণব মুখার্জি  ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব নেওয়ার  সময় ৩৯ টি মন্ত্রীর গোষ্ঠীর (জিওএম) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২০০৪-১২র মধ্যে তিনি ৯৫ টি মন্ত্রীর গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব করেছিলেন। ২০১৫ সালে সহধর্মিণী ৫৮ বছর বয়সী  সুভ্রা মুখার্জির মৃত্যুর পর শোকাহত প্রণব মুখার্জি কাজের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছিলেন দুঃখকে জয় করার পন্থা। স্ত্রী'র শেষকৃত্যে অংশ নেওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যেই অফিসে ফিরে আসেন তিনি। লেখক হিসেবেও নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় রেখেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি আটটি বই লিখেছিলেন।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ ২০১৯ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান, ভারতরত্ন দিয়ে ভূষিত করেছিলেন প্রণব মুখার্জীকে। ২০০৮ সালে তাঁকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক পুরষ্কার পদ্ম বিভূষণেও ভূষিত করা হয়েছিল। পাঁচ দশক ব্যাপী একটি রাজনৈতিক কর্মজীবনে অন্যান্য মন্ত্রকের পদ ছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী, লোকসভার নেতা হিসেবে দায়িত্বভার পালন করেছিলেন প্রণব মুখার্জি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁর একের পর এক বিচক্ষণ পদক্ষেপ তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও খ্যাতির সম্পন্ন করে তুলেছিল। 'ইউরোমনি' ম্যাগাজিনের সমীক্ষা অনুসারে, প্রণব মুখার্জিকে বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী (১৯৮৪) হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তথ্য সংক্রান্ত দৈনিক পত্রিকা 'ইমার্জিং মার্কেটস' তাঁকে  ২০১০-এর 'ফিন্যান্স মিনিস্টার অফ দা এশিয়া'র স্বীকৃতি দিয়েছে(২০১০)। সেবছরই প্রণব মুখার্জিকে 'ফিন্যান্স মিনিস্টার অফ দা ইয়ার'এর স্বীকৃতি দিয়েছিল 'দ্য ব্যাংকার'।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + seven =