নয়াদিল্লি: চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি কমার আশঙ্কা করা হয়েছিল আগেই। সেই আশঙ্কাই বাস্তবরূপ নিল। এপ্রিল থেকে জুন মাসে দেশের জিডিপির কাঁটা নেমেছে ২৩.৯ শতাংশে। করোনার জেরে মার্চ থেকেই দেশের অর্থনীতি থমকে গিয়েছিল ফলে সেক্ষেত্রে যে জিডিপি কমবে তা একপ্রকার নিশ্চিত ছিলই। সেখানে দেখার বিষয় ছিল তার পরিমাণ হবে কতটা। আজ জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের পেশ করা রিপোর্ট বলছে, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হারে ২৩.৯ শতাংশ সংকোচন হয়েছে, যা গত ৪ দশকে নজির গড়েছে।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথায়, ২০১৯ থেকে ২০২০ অর্থবর্ষের শেষ থেকে জিডিপি প্রায় ২০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যদিও আগে থেকেই এমনটা যে হতে পারে তার উল্লেখ করেছিলেন। মোদী সরকারের তরফেও এর কারণ হিসাবে করোনার জেরে লকডাউনকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারের কথায়, আমেরিকা, ব্রিটেন কিংবা জাপানে এর থেকেও বেশি হারে জিডিপি সংকোচন হয়েছে। এই প্রথম ৪৭ শতাংশ লগ্নি কমেছে, যা ইতিহাসে প্রথম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী মাসেও জিডিপির সংকোচন চলতে থাকবে।
কোন সরকারি খাতে কত শতাংশ জিডিপি সংকোচন ঘটেছে? পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন শিল্পে জিডিপি কমেছে ২৩.৩ শতাংশ। পাশাপাশি নির্মান শিল্প ও হোটেল, পরিবহণ, যোগাযোগ শিল্পে কমেছে যথাক্রমে ৫০.৩ শতাংশ এবং ৪৭ শতাংশ। আবাসন, আর্থিক পরিষেবা শিল্পে ও সরকারি প্রশাসন, প্রতিরক্ষা শিল্পে এর পরিমাণ যথাক্রমে ৫.৩ শতাংশ এবং ১০.৩ শতাংশ।
অন্যদিকে অর্থমন্ত্রকের দাবি, আনলক পর্ব যেহেতু চালু হয়েছে, তাই দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরবে। অথচ সোমবার দেখা গিয়েছে, জুলাই মাসেও আটটি প্রধান পরিকাঠামোয় জিডিপি সংকোচন হয়েছে। পরিকাঠামো শিল্পে জুলাই মাসে এর পরিমান ৯.৬ শতাংশ। পাশাপাশি ইস্পাত, সিমেন্ট উৎপাদনেঅ জিডিপির কাঁটা নেমেছে। লকডাউনে খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধ উৎপাদন ছাড়া বাকি সব উৎপাদনই বন্ধ ছিল। তবে পরিসংখ্যানের রিপোর্টে কৃষিতে বৃদ্ধির হার মাত্র ৩.৪ শতাংশ। এর জন্য মোদী সরকারের উদাসীন মনোভাবকেই দায়ী করেছেন চিদম্বরম। তিনি জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রীর উচিত চাষীদের ধন্যবাদ জানানো, কেননা ভারী বৃষ্টির পরেও তারা চেষ্টা করেছেন কৃষিকাজ চালিয়ে যেতে।
প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের মতে, এই বিপদ এখনই থেমে যাবে না, জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসেও জিডিপি ১২ থেকে ১৫ শতাংশ কমতে পারে। আর্থিক মূল্যায়ন সংস্থা আইসিআরএ'য়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার জানিয়েছেন, লকডাউনের আগে থেকেই দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করেছিল। গত আর্থিক বছরেও বৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছিল ৪.২ শতাংশে। এবছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। তাঁর কথায়, ১৭ বছরেও বৃদ্ধির হার এত কমেনি।
অর্থ মন্ত্রক বলছে, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্ষার মরসুম ভাল না হলে এবং কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে খাদ্য সুরক্ষা, জনস্বাস্থ্য, একশো দিনের কাজ, ইত্যাদিতে নগদ ভর্তুকিতে টাকা বরাদ্দ না করলে অর্থনীতির সংকোচন আরও বাড়ত। তিন মাসে সরকারি খরচ বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। করোনায় ভারতের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি দেশের বাজার বা কেনাকাটা ধাক্কা খেয়েছে। সেখানে সংকোচন হার ২৭ শতাংশ। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও কমেছে। ফলে সামগ্রিক ভাবে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, অসংগঠিত ক্ষেত্রের ছবি পরিসংখ্যানে ধরা সহজ নয়। অথচ লকডাউনের জেরে সব থেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছে এই ক্ষেত্রই। ফলে বাস্তব ছবি আরও ভয়াবহ। জিডিপি কমার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দেশে বেকারত্ব। মার্চে বেকারত্বের যে সংখ্যা ৮.৭৫ শতাংশ ছিল, সেই সংখ্যা ৩০ আগস্টের পরও ৮ শতাংশের নিচে নামেনি। ফলে দেশের অর্থনীতির অবস্থা যে শোচনীয়, এ কথা বলাই বাহুল্য।