সরকারি আর্থিক প্যাকেজ যথেষ্ট নয়, দেশের জিডিপি নিয়ে নয়া আশঙ্কা রঘুরাম রাজনের

 রঘুরাম রাজনের মতে আরও বেশি কিছু করার ক্ষেত্রে সরকারের উৎসাহ আংশিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ সরকার সম্ভাব্য ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণে বেশি উৎসাহী।

 মুম্বই:  দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকার এবং তাঁর আধিকারিকদের নিজের আত্মতৃপ্তিকে ভয় পাওয়া উচিত। দেশে জিডিপির ঐতিহাসিক পতন নিয়ে এভাবেই সরকারকে সতর্ক করে রীতিমত আশঙ্কা প্রকাশ করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। জিডিপির এই চিত্র ‘উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করে 'লিংকডইন'-এ একটি প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, যে দেশগুলিতে করোনা পরিস্থিতি আরও বেশি সঙ্কটজনক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার থেকেও সঙ্গিন অবস্থা ভারতে।

সরকারের আর্থিক সাহায্য ছাড়া অর্থনীতিতে বৃদ্ধির হারে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। সেক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত ২০ লক্ষ টাকা আর্থিক প্যাকেজ মোটেই যথেষ্ট নয় বলেও উল্লেখ করেছেন এই অর্থনীতিবিদ। বিশেষত গ্রামীণ ও দরিদ্রদের ক্ষেত্রে জরুরীভাবে সংস্কার ও ত্রাণের প্রয়োজন ছিল।  তিনি আরও লিখেছেন যে সরকার সরবরাহিত ত্রাণ এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা পর্যাপ্ত নয়। মূলত দরিদ্র পরিবারগুলিতে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য; এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) সংস্থাগুলিকে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলিতে ঋণের নিশ্চয়তা রয়েছে, সেখানে এই পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। তাঁর মতে আরও বেশি কিছু করার ক্ষেত্রে সরকারের উৎসাহ আংশিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ সরকার সম্ভাব্য ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণে বেশি উৎসাহী।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, অর্থনীতিকে রোগী মনে করা হলে তাকে রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে হবে। আর এখানে সহায়তার অর্থ আর্থিক সহায়তা। ‘‘ভারতে এখনও করোনার প্রাদুর্ভাব মারাত্মক। তাই বিনোদনমূলক খাতে খরচ, যেমন রেস্তোরাঁয় খাওয়া এসব ক্ষেত্রে  মানুষ কম খরচ করবেন।  করোনা যত দিন থাকবে, এইধরণের খরচ কমাবেন সাধারণ মানুষ।’’ তাই অর্থনীতির এই রোগ যে সহজে নির্মুল হওয়ার নয়, তেমনটাই মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

কেন্দ্রের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি সঙ্কোচনের হার ২৩.৯ শতাংশ, যা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে ১৯৯৬ এর পর বিগত ২৫ বছরে ইতিহাস। ভারতে ২৩.৯ শতাংশ সংকোচন যা আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে মারাত্মক করোনা প্রভাবিত উন্নত দুটি দেশ  ইতালির ১২.৪ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯.৫ শতাংশ হ্রাসের সঙ্গে তুলনা করে ভারতের পরিস্থিতি আরও খারাপ বলেই উল্লেখ করেন। এর সঙ্গে অসংগঠিত ক্ষেত্রের লোকসান যোগ করে জিডিপি বৃদ্ধির প্রকৃত পরিসংখ্যান প্রকাশিত হলে সেই চিত্র আরও করুণ হতে পারে।

রাজন বলেছেন, ‘‘সরকারের উচিত সুচতুরভাবে ব্যায় করা, যাতে অর্থনীতিতে সদর্থক গতি আসে। সরকারের এমন সব পদক্ষেপ করা উচিত যাতে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।’’এরজন্য স্বনির্ভর প্রকল্পগুলিকে অবহিত করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অবকাঠামো তৈরি করা। এই ধরনের ব্যয়ের জন্য নেতৃত্বকে সময় দিতে হবে সময়। সংস্কারগুলি উৎসাহ প্রদানের একটি রূপ হতে পারে। খুব দ্রুত না হলেও এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের একটি সময়সীমা বর্তমান বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশ্ব ভারতের তুলনায় আগে সুস্থ হয়ে উঠবে, সুতরাং রফতানি ভারতের অগ্রগতির একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।  সরকারকে তার সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্বল্প মূল্যে আমদানি করা যায়। একবার শুল্ক পুনর্নির্ধারণ করার পর পিছু হটা সম্ভব নয়। তাই অবিলম্বে সরকারের উচিত এগুলিকে সঠিকভাবে সংস্কার করা। তানাহলে বিশ্বে প্রতিযোগিতার কথা বিবেচনা করে রফতানি দ্রব্য উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে ভরসা পাবেনা সংস্থাগুলি।

 

  

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − 3 =