শাম্মী হুদা: বেড়াতে যেতে আমরা কে না পছন্দ করি। আর সেই ঘোরাফেরা যদি কোনও আনকোরা জায়গায় হয় তো কথাই নেই। মনের সঙ্গে পা – ও তখন রেডি। শুধু ঝোলা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেই হল। এবার আসি গন্তব্যের কথায়। সুন্দরী কেরালা, ঈশ্বরের আপন দেশ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন উপচে পড়েছে গোটা কেরালা জুড়ে। কোথাও আদিগন্ত চা বাগান তো কোথাও কফির ক্ষেত। উপরে ঝকঝকে নীল আকাশ নিচে সবুজের সমারোহ, তারই মধ্যে পাহাড়ি জনজাতির বসবাস। মন ভাল করা আনন্দ আপনাকে ছুঁয়ে থাকবে। রয়েছে মশলার বাগান, আয়ুর্বেদিক গাছগাছালির জঙ্গল। কাকে ছেড়ে কার কথা বলি।
কেরালায় একই ঋতুতে বিভিন্ন আবহাওয়ার সমাবেশ ঘটে। এই জানুয়ারিতে যদি মুন্নারে ঘুরতে যান তাহলে অবশ্যই দার্জিলিংয়ের ঠান্ডার কথা মনে করে শীত পোশাক সঙ্গে রাখুন। পেরিয়ার ফরেস্ট দেখতে গেলে হেমন্তের হালকা ঠান্ডা পাবেন। আবার রাজধানী শহর তিরুবনন্তপুরম ঘুরতে এলে গরম লাগতে বাধ্য একেবারে ভাদ্র মাসের পচা গরম যাকে বলে। একই অবস্থা কোচি এবং এরনাকুলাম এও। যদি আলেপ্পি শহর দেখতে ব্যাক ওয়াটারে বোটিংকরার ইচ্ছে থাকে তাহলে দুচোখ ভরে দেখুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আবহাওয়ার কথা ভুলে যেতে হবে কেননা চোখ শান্তি পেলেও শরীর শান্তি পাবে না। প্যাচপ্যাচে গরমে ঘেমে নেয়ে একসা হবেন।
তবে ঈশ্বরের আপন দেশে এমনও কিছু দ্রষ্টব্য স্থান রয়েছে যা ভ্রমণকারীদের অজানাই থেকে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মাঝেমধ্যে সে সব জায়গায় ঘুরতে গেলেও ভিন রাজ্যের ভ্রমন প্রিয় মানুষদের চোখে সেসব জায়গা এখনও অধরা। আজকে চলুন সেসব জায়গাতেই একবার চোখ বুলিয়ে নেই। কেরালার ওয়ানাদ জেলায় বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে যেগুলি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। এর একটি হলো চেম্বারা শৃঙ্গ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ২১০০মিটার, এই জেলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এটি। স্থানীয় ভ্রমণপিপাসুরা এই জায়গায় আসেন লিঙ্গের উপরে যে বেস ক্যাম্প আছে সেখানেই রয়েছে হৃদয় আকৃতির একটা হ্রদ স্থানীয় ভাষায় যার নাম হৃদয়া সরস। প্রকৃতির এই আপন খেয়াল দেখার মতো। ঘুরে আসতে পারেন কুরুভা দ্বীপে। এই জেলার আর এক দ্রষ্টব্য প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য বুকে নিয়ে আপনারই অপেক্ষা করছে। কাবিনি নদীর দ্বীপ হল এই কুরুভা। নির্জনতা , বিলুপ্তপ্রায় পাখি ও হাজারো আয়ুর্বেদিক গাছগাছালির ভান্ডার এই দ্বীপে আসতে নৌকা প্রয়োজন। রাজ্য পর্যটন দপ্তর থেকে তার ব্যবস্থা করা হয়।
এডাককাল গুহা দেখতে এলে প্রাচীন প্রস্তর যুগের হদিশ পাবেন। তিন ধরনের পাথর আপনাকে এই গুহায় স্বাগত জানাবে। প্রায় সাত হাজারেরও বেশি প্রাচীন এই সভ্যতার নিদর্শন দেখতে পাবেন একমাত্র কেরালাতেই। স্থানীয় বানাসুরা সাগর ড্যাম দেখতে আসতেই হবে। পাহাড় ঘেরা বনাসুরা সাগর যেন প্রকৃতির রানি। শুধু হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাইছে। প্রকৃতি তার আপন মহিমায় পাথর সাজিয়ে যেন কংকালের আকৃতি দিয়েছে। যার নাম ফ্যান্টম রক, স্থানীয় ভাষায় চিঙ্গারি মালা এই নিদর্শন দেখতে আপনাকে আসতেই হবে অফবিট ডেস্টিনেশন আম্বালা ভয়ালে।
ওয়ানাদ ভ্রমর অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি না হাজার বছরের প্রাচীন বিষ্ণু মন্দির দেখা হয় জায়গাটি থিরুনেলি নামে পরিচিত। পাহাড় আর জঙ্গল ঘেরা উপত্যকায় অবস্থিত এই বিষ্ণুমন্দির গ্রানাইট পাথরের তৈরি। প্রায় ৩০টি স্তম্ভ রয়েছে, প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে দেবতা বিষ্ণুর পায়ে। দূর থেকে দেখলে একখানা পিকচার পোস্টকার্ড মনে হতে পারে এই মন্দির চত্বরকে। কেরালারয় সাধারণত খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস একটা সময় যে এখানে জৈন রা থাকতো সেটা কেউ বুঝতেই পারবে না যদি না ওয়ানাদ এর পানারামা এলাকায় আসে।এখানেই এখনো বেশ কিছু জৈন মন্দিরের নিদর্শন রয়েছে, সেই সময়কার স্থাপত্যকলা দেখবার মতো। সভ্যতা ধ্বংস হলেও সেই সৃষ্টির উৎস যে কিছুটা সময়ের ধারক হিসেবে থেকে যায় তার অন্যতম প্রমাণ এই পানারামা মন্দির।