নয়াদিল্লি: অনলাইন কেনাকাটায় ‘খাদি’ এই নামটির গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বজুড়ে। তবে নাম থাকলেও আসল খাদির পরিবর্তে বেশিরভাগ নকল খাদি বিক্রি করেই লাভবান হচ্ছিল বিপণী সংস্থা৷ বিষটি আঁচ করে এর বিরুদ্ধে জোরদার পদক্ষেপ নেয় খাদি ও গ্রামীণ শিল্প কমিশন(কেভিআইসি)। তাঁদের পদক্ষেপের পর এবার অন্যান্যদের পাশাপাশি ‘খাদি’ ব্র্যান্ড নামে পণ্য বিক্রয়কারী ১৬০ টি লিঙ্ক সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হল অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট ও স্ন্যাপডিলের মতো ই-কমার্স পোর্টালগুলি। শনিবার এমনটাই জানিয়েছে কমিশন।
কেভিআইসি-জানিয়েছে ‘খাদি ইন্ডিয়া’ নাম ব্যবহারকারী এক হাজারেরও বেশি সংস্থাকে আইনী নোটিশ পাঠানোর পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছে। এই ব্র্যান্ডের নামে পণ্য বিক্রির ফলে তাদের খ্যাতি এবং শিল্পী কারিগরদের কাজের ক্ষতি হচ্ছিল। এদিন কমিশনের তরফে একটি বিবৃতিতে এবিষয়ে বেশ কিছু তথ্যও তুলে ধরা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে গত মাসেই খাদি’র নামে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রসাধন সামগ্রী ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির জন্য দুটি সংস্থা, ‘খাদি এসেনশিয়ালস’ ও ‘খাদি গ্লোবাল’কে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে কেভিআইসি-র পক্ষ থেকে। এই নাম ব্যবহারের জন্য ‘ফ্যাব ইন্ডিয়া’র কাছে ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে মুম্বাই হাই কোর্ট একটি মামলাও চলছে।
এদিকে কেভিআইসির আইনী নোটিশ পাওয়ার পরেই ‘খাদি গ্লোবাল’ ইতিমধ্যে তার ওয়েবসাইট khadiglobalstore.com ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে এবং টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যম থেকেও নিজেদের পেজগুলি সরিয়ে দিয়েছে। এই ব্র্যান্ডের নাম রয়েছে সেই জাতীয় সমস্ত বিষয়বস্তু এবং পণ্য সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁরা দশ দিন সময় চেয়েছে বল বিবৃতিতে জানিয়েছে কমিশন। কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই নাম অনলাইন ক্রেতাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা তৈরি করেছিল যে এই পণ্যগুলি আসল খাদি পণ্য,” সরিয়ে দেওয়া বেশিরভাগ পণ্যই কোনো এক আয়ুশ ই-ট্রেডাররা বিক্রি করছিল। কেআইভিসি-র পদক্ষেপের ফলে দেশব্যাপী এমন বেশ কয়েকটি স্টোর বন্ধ হয়ে গেছে যারা নকল খাদি পণ্য বিক্রি করছিল।
এই ব্র্যান্ডের নামটি ব্যবহার করে বিভিন্ন বিক্রেতার মাধ্যমে খাদির মাস্ক, ভেষজ সাবান, শ্যাম্পু, প্রসাধনী, ভেষজ মেহেন্দী, জ্যাকেট, কুর্তাসহ আরও অনেক জিনিস বিক্রি করছিল ই-কমার্স পোর্টালগুলি।বিবৃতিতে এও বলা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীর দেশীয় পণ্য কেনার আবেদন করার পর থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে খাদির জনপ্রিয়তা বহুগুণে বেড়েছে। ফলে খাদি ট্রেডমার্কের লঙ্ঘন আরও বেশি বেড়ে গেছে। এই সুযোগে বেশ কয়েকটি অনলাইন বিক্রয়কারী খাদি’র নামে নকল জিনিস বিক্রি শুরু করে। এছাড়াও বিভিন্ন শহরে কয়েকশো দোকানের মাধ্যমেও এরা নকল জিনিস বিক্রি করছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, বিশেষত লকডাউনের সময়, এই জাতীয় প্রতারণামূলক অনলাইন বিক্রেতারা বেশ জাঁকিয়ে বসেছিল।
তবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনলাইন গ্রাহকদের খাঁটি খাদি পণ্য কেনার সুযোগ করে দিতে এবার কমিশনও ই-পোর্টাল চালু করেছে।কেভিআইসির চেয়ারম্যান বিনয় কুমার স্যাক্সেনা জানিয়েছেন,খাদি’র নামে পণ্য বিক্রি বন্ধ করতে, কমিশনের নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের কাছ থেকে বড়সড় ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তিনি বলেন,খাদি কারিগরদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই বিভিন্ন সংস্থাকে আইনী নোটিশ জারি করা হয়েছে। এই ট্রেডমার্ক নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে তাঁদের যে কারিগররা প্রকৃত হস্তশিল্পজাত পণ্য তৈরি করে তাদের জীবিকার উপর সরাসরি প্রভাব পড়ছে। এটি খাদির নামে বিক্রি হওয়া অননুমোদিত পণ্যগুলির একটি নিয়মিত ও ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ এবং সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য একটি নিবেদিত আইনী দল নিয়োগ করেছে।
বিনয় কুমার আরও বলেন, কেআইভিসি তাদের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সমস্ত খাদি সংস্থাগুলিকে এই ধরণের পণ্য তৈরির প্রশিক্ষিণ দিয়ে থাকে এবং কেভিএসি-র অনুমোদন প্রাপ্ত সংস্থা ছাড়া ‘খাদি’ ট্রেডমার্ক বা ‘খাদি ইন্ডিয়া’ লোগো ব্যবহারের জন্য অন্য কোনো সংস্থাকেই অনুমতি দেওয়া হয়না। সেক্ষেত্রে তাদের উপযুক্ত লাইসেন্স নিতে হবে। শনিবার কমিশনের পক্ষে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অনুমোদন ছাড়াই খাদির নামে বিক্রি হওয়া পণ্যগুলির বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য একটি নিয়মিত ও ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে বিশেষ আইনী দলও নিয়োগ করা হয়েছে।