রাজ্যকে বঞ্চিত করে ক্ষতিপূরণের টাকা অন্য কাজে লাগিয়েছে কেন্দ্র: ক্যাগ

 জিএসটি কম্পেনশেন সেস ফান্ডে টাকা না পাঠিয়ে, সিএফআইতে এই টাকা ফেরত দিয়েছে সরকার। অডিটে দেখা গিয়েছে, স্টেটমেন্ট ৮, ৯, ১৩-তে  শুল্ক সংগ্রহের যে তথ্য রয়েছে, আর যে অর্থ জিএসটি ক্ষতিপূরণ শুল্কের ফান্ডে পাঠানো হয়েছে তাতে বড়সড় গরমিল রয়েছে।

নয়াদিল্লি:  সংসদে পেশ হওয়া কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল একের পর এক রিপোর্ট রীতিমত অস্বস্তি বাড়িয়ে চলেছে কেন্দ্রের। এবার তাদের রিপোর্টে উঠে এল জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের আইনলঙ্ঘণের বিস্ফোরক তথ্য। করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে যখন জিএসটি ক্ষতিপূরণের  দাবিতে সোচ্চার পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যগুলি, তখন গত সপ্তাহে সংসদের বাদল অধিবেশনের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সংসদের উভয় কক্ষে জানিয়েছেন, কনসলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়া বা সিএফআইয়ের বাইরে রাজ্যগুলির জিএসটি রাজস্ব ঘাটতিতে  ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আইনে কোনও বিধি নেই৷ অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শ অনুসারেই তাঁর এই দাবি বলেও জানান তিনি৷

কিন্তু সেই ‘সিএফআই’ ফান্ডের হিসেবেই বড়সড় গড়মিল রয়েছে বলে রিপোর্টে তুলে ধরল ক্যাগ। ক্যাগের রিপোর্টে দেখানো হয়েছে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজ্যগুলির প্রাপ্য জিএসটির ৪৭,২৭২ কোটি টাকার আটকে রেখেছে অর্থমন্ত্রক। জিএসটি কম্পেনশেন সেস ফান্ডে টাকা না পাঠিয়ে, সিএফআইতে এই টাকা ফেরত দিয়েছে সরকার। অডিটে দেখা গিয়েছে, স্টেটমেন্ট ৮, ৯, ১৩-তে  শুল্ক সংগ্রহের যে তথ্য রয়েছে, আর যে অর্থ জিএসটি ক্ষতিপূরণ শুল্কের ফান্ডে পাঠানো হয়েছে তাতে বড়সড় গরমিল রয়েছে। ফলে ফান্ডের অর্থ কম করে দেখানো হয়েছে, যাকে শর্ট ক্রেডিটিং বলা যায়। এই শর্ট-ক্রেডিটিং ২০১৭র ক্ষতিপূরণ শুল্ক আইন, লঙ্ঘন ছিল বলেই ক্যাগ-এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

জিএসটি আইনে সমস্ত রাজ্যগুলিকে জুলাই ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তাদের জিএসটি আয়ের ১৪% বার্ষিক প্রবৃদ্ধির আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। জিএসটি বাস্তবায়নের ফলে রাজস্ব ঘাটতির ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির জন্য ত্রাণ হিসাবে এই আইন চালু হয়েছিল। এই আইনে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে কেন্দ্র নির্ধারিত ১৪% এর কম বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাদের রাজস্ব ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্রর। এই আশ্বাস দেওয়ার পরেই কিছু বিলাসবহুল পণ্যের উপর জিএসটি চাপিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রের তরফে।

জিএসটি কম্পেনসেশন সেস অ্যাক্টের আইন অনুযায়ী, সারা বছরে যে শুল্ক সংগৃহীত হবে তা  জিএসটি কম্পেনসেশন ফান্ডে রাখতে হবে। একে  পাবলিক অ্যাকাউন্ট হিসাবে গণ্য করা হয়। রাজস্ব ক্ষতিপূরণ বাবদ এই অ্যাকাউন্ট থেকেই রাজ্যগুলিকে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। নিয়ম অনুসারে সংগৃহীত ক্ষতিপূরণ শুল্ক ভারতের ‘সিএফআই’ বা একীভূত তহবিলে যায় এবং পরে ভারতের পাবলিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে একটি জিএসটি ক্ষতিপূরণ শুল্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টে সংগৃহীত তহবিল থেকেই রাজ্যগুলিকে রাজস্ব ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। 

ক্যাগ-এর পর্যবেক্ষণ অনুসারে  জিএসটি ক্ষতিপূরণ তহবিলে মোট জিএসটি শুল্কের পরিমাণ হস্তান্তরের পরিবর্তে কেন্দ্র এই তহবিলগুলি ভারতের একীভূত তহবিলে ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং ‘অন্যান্য উদ্দেশ্যে’ এটি ব্যবহার করা হয়েছিল। অডিটে দেখা গেছে, রাজস্বের অর্থের এই ত্রুটিপূর্ণ পরিচালনা অনুদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে  জিএসটি ক্ষতিপূরণ শুল্ক রাজ্যগুলির অধিকার এবং এটি কোনও অনুদান নয়। এবিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রককে সুপারিশ করেছে ক্যাগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 − two =