লখনউ: উত্তরপ্রদেশের হাথরাস গণধর্ষণ মামলার তদন্ত এবার করবে সিবিআই। হাথরসে ২০ বছর বয়সী দলিত মহিলাকে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা এবং এলাহাবাদ হাইকোর্ট কর্তৃক সমালোচিত হয়ে যোগী আদিত্যনাথ সরকার গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) দ্বারা তদন্তের সুপারিশ করেছিল। যদিও ক্ষমতাসীন বিজেপি এই বিক্ষোভকে ‘রাজনৈতিক স্টান্ট’ হিসাবে উল্লেখ করে উড়িয়ে দিয়েছে।
গণধর্ষণ ও খুনের পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে মহিলার পরিবারের উপর যে অত্যাচারের যে অভিযোগ উঠেছে, তারও তদন্ত হবে বলে শোনা যাচ্ছে। মহিলার পরিবারের তরফে অভিযোগ জানানো হয়, যেদিন হাসপাতালে নির্যাতিতার মৃত্যু হয় সেদিন রাতে তাদের মেয়ের তড়িঘড়ি শেষকৃত্য সম্পন্ন করে পুলিশ। তাদের শেষ দেখা দেখতেও দেওয়া হয়নি। বরং তাদের বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল। ২০ বছর বয়সী ওই মহিলাকে ১৪ সেপ্টেম্বর তার গ্রামের চারজন পুরুষ ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ করা হয়। দু’সপ্তাহ পরে সেই বর্বর হামলায় ভয়াবহ আঘাতের পরে মারা যান সেই নির্যাতিতা। অনেকে সেই ঘটনাকে ২০১২ সালে দিল্লিতে ঘটে যাওয়া নির্ভয়া গণধর্ষণ মামলার সঙ্গে তুলনা করে।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত উত্তরপ্রদেশ পুলিশ দাবি করেছে যে ঘটনাটি কোনও ধর্ষণ কাণ্ড ছিল না। একটি ফরেনসিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতিও দেয় পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে যে কোনও বীর্যের নমুনা মেয়েটির শরীরে পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত হামলার ১১ দিন পরে বীর্যের নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসনের বিরুদ্ধেও উচ্চবর্ণের ঠাকুরদের উপর দোষী অপরাধ ঢাকা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে পুলিশ ১৯টি এফআইআর করেছে। সেগুলি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নয়। রাজ্য সরকারকে কুখ্যাত করার ষড়যন্ত্রের জন্য ‘অজানা কোনও ব্যক্তি’র বিরুদ্ধে।
হাথরসের ঘটনার পরের দিনগুলিতে উল্লিখিত একই ধরণের অনেক বর্বর অপরাধের দ্বারা উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের সুরক্ষার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা আরও আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্য রাজ্যেও নারীদের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে ঝাড়খণ্ড হাই কোর্ট রাজ্য পুলিশকে ১৫ বছরের এক কিশোরীর ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে অনুপযুক্ত তদন্তের জন্য তিরস্কার করেছিল। গত মাসে রাজস্থান থেকে দুটি ধর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। যদিও পরীক্ষায় একটি মামলায় ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। গত মাসে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, গত বছর ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮৭ টি ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। যা ২০১৮ সালের তুলনায় সাত শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালের চিত্রটিও এর আগের বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১৭ সালে ৩২ হাজার ৫৫৯টি এবং ২০১৮ সালে ৩৩ হাজার ৩৫৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল।