তিন আইপিএসকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনের নির্দেশ ঘিরে সমালোচনা

তিন আইপিএসকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনের নির্দেশ ঘিরে সমালোচনা

13f64b050f8baa2e12821916d94befe1

 নয়াদিল্লি: বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডার কনভয়ে হামলাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের জল গড়াল আরও একধাপ। রাজ্যের তিন আইপিএস রাজীব মিশ্র, প্রবীণ কুমার এবং ভোলানাথ পাণ্ডেকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে কাজ করার নির্দেশিকা জারি করল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।  রাজ্যের এই তিন আইপিএস অফিসারই জেপি নাড্ডার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। ডায়মন্ডহারবারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে, দক্ষিণবঙ্গ এডিজি রাজীব মিশ্র এবং ডিআইজি প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ প্রবীণ কুমারকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে কাজ করার জন্য ডেকে পাঠআনিয়েছে অমিত শাহের মন্ত্রক। পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস দলের তরফেও এর বিরোধিতা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এভাবে চিঠি দিয়ে রাজ্যের আইপিএস আধিকারিকদের রিপোর্ট করতে বলতে পারে না বলে পাল্টা চিঠি দিয়ে জানাল রাজ্য। পাশাপাশি তৃণমূলের তরফে সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “আইপিএস আধিকারিকদের পোস্টিং হয়ে যাওয়ার পর রাজ্য ক্যাডার হিসেবেই তাঁরা কজ করেন। পরে তাঁদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে নেওয়ার কথা জানালে, তাঁদের ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওযার অধিকার রয়েছে রাজ্যের।”

বুধবার দুদিনের রাজ্য সফরে কলকাতায় পা রাখেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। সেদিন ভবানীপুরে একাধিক কর্মসূচীতে যোগ দেন তিনি। বৃহস্পতিবার ডায়মন্ডহারবারে দলীয় কর্মসূচীতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন বিজেপি সভাপতি, সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় সহ বিজেপি নেতারা। ডায়মন্ডহারবার যাওয়ার পথে শিরাকোলে নাড্ডার কনভয়ে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। বিজেপির দাবি, প্রথমসারির কয়েকজন নেতা এবং দলীয় কর্মীরা আহত হয়েছেন। টেলিভিশন চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এবং ছবিতে দেখা গিয়েছে, কনভয় লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছোঁড়া হচ্ছে। তবে বুলেট প্রফুপ গাড়িতে থাকায় জেপি নাড্ডার কোনও আঘাত লাগেনি। যদিও কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায় আহত হন। সেদিনই সন্ধ্যায় রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র এবং মুখ্যসচিব আলাপান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে রিপোর্ট তলব করেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সাংবাদিক সম্মেলনও করেন। রাজ্যপালের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই শুক্রবার রাজ্যের দুই আধিকারিক, ডিজি বীরেন্দ্র এবং মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ১৪ ডিসেম্বর তাঁদের দিল্লিতে বেলা ১২.১৫টায় হাজিরা দিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় যোগ দিতে বলা হয়।

এদিকে, রাজ্যের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, বৈঠকে যোগ দিতে যাবেন না তাঁরা। মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লাকে চিঠি লিখে জানান, যেহেতু রাজ্য 
সরকার বিষয়টি নিয়ে যথাযথ তদন্ত করে দেখেছে, ফলে তাঁদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে রেহাই দেওয়া হোক। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও এর বিরোধিতা করে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি লিখে জানান, যেহেতু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রাজ্যের বিষয়, ফলে কেন্দ্রীয় সরকার এভাবে চিঠি লিখে রাজ্যের আমলাদের ডেকে পাঠাতে পারেন না। আজ সকালে পাঠানো চিঠিতে তিনি পুরো বিষয়কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মন্তব্য করেন।  

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে লেখা চিঠিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “আমরা আপনাকে প্রথমেই জানিয়ে রাখি, ভারতের সংবিধানের ৭তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘রাজ্যের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে।  কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আপনি দুই আধিকারিককে ডেকে পাঠাতে পারেন?”তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ভারতের সংবিধান বা যে কোনও আইনের অধীনে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন কি?এটাতে মনে হচ্ছে, একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং আপনার মন্ত্রী, যিনি ভারতীয় জনতা পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য, তাঁর জন্য আপনি এই উল্লেখিত চিঠিটি ব্যবহার করেছেন।” কেন্দ্রীয় সরকারকে লেখা চিঠিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেন, এটাতে মনে হচ্ছে যে, “আপনার দফতরে মুখ্যসচিব এবং ডিজিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ডেকে পাঠানোর বিষয়টি ক্ষমতার রং লাগানো হয়েছে অথবা মন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি তৈরির জন্য আপনাকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে”। ফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে একদিকে যেমন কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত জোরদার হচ্ছে তেমনই চড়ছে বঙ্গ রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *