নয়াদিল্লি: ৬ দফা আলোচনাতেও জট কাটেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিল প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় দিল্লির সীমানায় বিক্ষোভরত কৃষকরা। তারমধ্যেই বুধবার ফের একদফা আলোচনার জন্য বিক্ষোভরত কৃষকদের আমন্ত্রণ জানাল কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও আজ ফের একবার কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর জানিয়ে দিলেন, দেশব্যাপি কৃষি বিলের পক্ষে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। পাশাপাশি একমাসের বেশি সময় ধরে দিল্লির সীমানায় চলতে থাকা কৃষকদের বিক্ষোভ নিয়েও সমাধানের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী। এদিন একটি অনুষ্ঠানে তোমর অভিযোগ করেন, কিছু মানুষ তিনটি কৃষি বিলকে হাতিয়ার করে কৃষকদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। কৃষকদের তরফে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে, ইংরাজি নববর্ষের পরেই তাঁরা দেশব্যাপি আন্দোলনে নামবেন এবং এই নিয়ে দেশের মানুষকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
কৃষকদের জানানো হয়েছে, বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ নয়াদিল্লির বিজ্ঞানভবনে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করবে সরকার। একইসঙ্গে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, কৃষকদজের সমস্যার দ্রুত সমাধানে আগ্রহী কেন্দ্রীয় সরকার। অন্যদিকে, আজই মহারাষ্ট্রের সাঙ্গোলা থেকে হাওড়ার শালিমার পর্যন্ত কিষাণ রেলের উদ্বোধন করে প্রদানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “আমি দেশের কোটি কোটি কৃষককে অভিনন্দন জানাই। কিষাণ রেল নেটওয়ার্ককে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে কোভিড ১৯ এবং তা বাড়ানোও হয়েছে গত চারমাসে, এই নিয়ে ১০০তম রেলের উদ্বোধন করা হল।” এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর, এবং রেলমন্ত্রী পিযুষ গোয়েল। তিনি বলেন, “কৃষকদের ক্ষমতায়ন এবং তাঁদের আয় বৃদ্ধি করার কাজে বড় পদক্ষেপ কিষাণ রেল।” প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্পদ যোজনায় মেগা ফুড পার্ক, কোল্ড চেইন পরিকাঠামো থেকে শুরু করে এগ্রো প্রোসেসিং এর মতো ৬,৫০০ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। মাইক্রো-ফুড প্রোসেসিং ক্ষেত্রের জন্য আত্ম নির্ভর ভারত প্রকল্পের আওতায় মঞ্জুর করা হয়েছে ১০,০০০ কোটি টাকা। ”
কৃষকরা অনশন শুরুর সময়েই দেশবাসীকে ২৩ ডিসেম্বর কিষাণ দিবসে একবারের খাবার গ্রহণ না করার আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে তাঁদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাতে এই পথেই হাঁটেন হরিয়ানা, পঞ্জাব থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের আন্দোলনরত কৃষকরা। এছাড়াও ২৫ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরিয়ানার টোল প্লাজাকে নিঃশুল্ক করার ডাক দেন তাঁরা। গত বাদল অধিবেশনে কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের অঙ্গ হিসেবে তিনটি বিল পাস করায় মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার এই বিল পাস করানোর সঙ্গে সঙ্গেই সংসদের ভিতরে বাইরে শুরু হয়ে যায় তুমুল বিক্ষোভ। ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লির বিভিন্ন সীমানায় আন্দোলন শুরু করে হাজারও কৃষক। দিল্লি চলো ডাক দেওয়া হয় আন্দোলনকে আরও জোরদার করে তুলতে। যদিও দিল্লি আসার পথে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনরত কৃষকরা। সিঙ্ঘু, গাজিয়াবাদ থেকে শুরু করে চিলা সীমানায় চলছে কৃষকদের আন্দোলন, অনশন। তারমধ্যে সিঙ্ঘু সীমানায় সবচেয়ে বড় ও জোরদার আন্দোলন চলছে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলেরও নজর কেড়েছে কৃষকদের আন্দোলন। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে প্রায় ৬ থেকে ৭ রাউন্ড আলোচনার পরেও বরফ গলেনি। আন্দোলনরত কৃষকদের জানিয়েছেন, সরকার এই আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।