কমিশনের নির্দেশকেই এবার অস্ত্র বানালেন ক্ষুব্ধ ভোট কর্মীরা, কীভাবে জানেন?

কলকাতা: এবার নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পুস্তিকা হাতিয়ার করে ভোটের কাজ কয়কটের ডাক ভোটকর্মীদের৷ ভারতের নির্বাচন কমিশনের অনুমতিক্রমে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দেওয়া ‘প্রসাইডিং অফিসারদের জন্য নির্দেশ পুস্তিকা’য় কেন্দ্রীয় বাহিনী সংক্রান্ত নির্দেশ তুলে ধরে এবার আন্দোলন আরও জোরদার করার প্রস্তুতি৷ পুস্তিকায় ৭.১১ নম্বরে অনুচ্ছে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে৷

কমিশনের নির্দেশকেই এবার অস্ত্র বানালেন ক্ষুব্ধ ভোট কর্মীরা, কীভাবে জানেন?

কলকাতা: এবার নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পুস্তিকা হাতিয়ার করে ভোটের কাজ কয়কটের ডাক ভোটকর্মীদের৷ ভারতের নির্বাচন কমিশনের অনুমতিক্রমে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দেওয়া ‘প্রসাইডিং অফিসারদের জন্য নির্দেশ পুস্তিকা’য় কেন্দ্রীয় বাহিনী সংক্রান্ত নির্দেশ তুলে ধরে এবার আন্দোলন আরও জোরদার করার প্রস্তুতি৷

পুস্তিকায় ৭.১১ নম্বরে অনুচ্ছে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে৷ সেখানে ৭.১১.১ নম্বর অনুচ্ছেদের শেষ অংশে লেখা হয়েছে, ‘কোনও কারণে কোনও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী না পৌঁছোতে পারে, সেখানে ভোটগ্রহণ শুরু করা যাবে না৷’ আর এই নির্দেশিকা হাতিয়ার করে নিরাপত্তা ও সব বুথে বাহিনীর দাবি জানিয়ে জোলায় জেলায় ক্ষোভ-বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন ভোট কর্মীদের একাংশ৷

কমিশনের নির্দেশকেই এবার অস্ত্র বানালেন ক্ষুব্ধ ভোট কর্মীরা, কীভাবে জানেন?ভোট কর্মীদের দাবি, এই নির্দেশিকার অর্থ কি? যেখানে ৬০শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে না! তাঁদের দাবি, যখন আধা সামরিক বাহিনী ছাড়া ভোট শুরু করা যাবে না, প্রিসাইডিং অফিসারদের জন‌্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা সাফ জিয়েছে দিয়েছে, তখন কেন ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা ছাড়াই ভোটকেন্দ্র পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে? নির্বাচন কমিশনের দেওয়া বুকলেটের সপ্তম অধ‌্যায়ের ৩৪ পৃষ্টায় ৭.১১.১ নির্দেশিকাতে স্পষ্ট বলা আছে ‘আধা সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা কর্মীর উপস্থিতি ছাড়া ভোটগ্রহন কেন্দ্রে ভোট শুরু করা যাবে না৷’ এরপরেও কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট হয় কি করে? প্রশ্ন ভোটকর্মীদের একাংশের৷

দাবি ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করানো৷ ভোটকর্মীদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে পদক্ষেপও নিয়েছিল কমিশন৷ তবে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর পরিবর্তে কোচবিহারের জন্য দু’জন পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগের কথা জানানো হলেও নিজেদের দাবিতে এখনও অনড় ভোট কর্মীদের একাংশ৷ শুক্রবার পরপর তিনটি এলাকায় বিক্ষোভ দেখানোর পর আজ, শনিবার ফের ভোটকর্মীদের অবস্থান বিক্ষোভে উত্তাল মাথাভাঙা কলেজ চত্বর৷ নিরাপত্তার দাবিতে ভোট কর্মীদের পথ অবরোধের জেরে এবার আটকে পড়লেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক৷ তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয় বলেও অভিযোগ৷ ভোটকর্মীদের দাবি, সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকালে ভোটের কাজে যাবেন না ভোটকর্মীরা৷

অন্যদিকে, মাথাভাঙার সঙ্গে সঙ্গে একই দাবিতে উত্তাল হাওড়া৷ ভোটের কাজে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে ভোটকর্মীদের বিক্ষোভ৷ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা চেয়ে বিক্ষোভ দেখান শ’পাঁচেক ভোট কর্মী৷ শনিবার হাওড়ার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভোট কর্মীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা৷

কমিশনের নির্দেশকেই এবার অস্ত্র বানালেন ক্ষুব্ধ ভোট কর্মীরা, কীভাবে জানেন?ভোট কর্মীদের দাবি, প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না হলে ভোট করাতে যাবে না তাঁরা৷ কারণ, ভোটের কাজে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হলে এর দায় নেবে কে? নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ভোটের প্রশিক্ষণ ও কাজ বন্ধ রাখার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা৷ তাঁদের দাবি, ‘‘ভারতীয় সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদ আমাদের প্রত্যেকের জীবন রক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা মনে করি প্রকৃত নিরাপত্তা ছাড়া এই ভোটকর্মী হিসেবে শিক্ষক নিযুক্তিকরণ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং অমানবিক। তাই আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া এই ঝুঁকিপূর্ণ ভোটের কাজ অত্যাবশ্যক হতে পারে না৷’’

শুক্রবার ভোট প্রশিক্ষণ বয়কট করে কোচবিহারে ভোটকর্মীরা বিক্ষোভ দেখান৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করা হয়৷ নিরাপত্তার দাবিতে পৃথক তিনটি স্থানে পথ অবরোধ করেন ক্ষুব্ধ ভোটকর্মীদের একাংশ৷ শুক্রবার ভোটের প্রশিক্ষণ বানচাল করে নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে কোচবিহারের তিন প্রাণকেন্দ্রের রাজপথে বসে পড়েন ভোটকর্মীদের একাংশ৷ ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট করাতে যাচ্ছি না, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে চলবে এবার ভোট বয়কটের পালা’- এই স্লোগান তুলে আজ পৃথক পৃথক ভাবে শহর কোচবিহার, মাথাভাঙা ও দিনহাটায় দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধ করে রাখানে ভোটকর্মীদের একাংশ৷

কমিশনের নির্দেশকেই এবার অস্ত্র বানালেন ক্ষুব্ধ ভোট কর্মীরা, কীভাবে জানেন?লোকসভা নির্বাচনে আবার হতে চাই না রাজকুমার৷’ এই স্লোগান তুলে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ভোটকর্মীদের৷ পর্যাপ্ত কেন্দ্র বাহিনী ছাড়া কোনও ভাবেই ভোটের কাজ করা হবে না, শুক্রবার এই দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখালেন শ’পাঁচেক ভোটকর্মী৷ কোচবিহার জেলা শাসকের দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ ভোটকর্মীদের৷ নিরাপত্তা সংক্রান্ত লিখিত জবাব না পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে বলেও ভোটকর্মী ঐক্যমঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে৷ এদিন নিরাপত্তার দাবিতে পথ অবরোধও করেন ভোটকর্মীদের একাংশ৷

প্রতিটি বুথকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে, এই দাবিতে এদিন কোচবিহার ভোটকর্মী ঐক্যমঞ্চের কোচবিহারের মাথাভাঙা শহরে বিক্ষোভ দেখানো হয়৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া রাজ্যের পুলিশ দিয়ে ভোট করানো হলে কাজ বয়কচটেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে৷ তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যের বাহিনী দিয়ে ভোট করালে কোনও ভোটকর্মী ভোট করাতে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাবেন না৷

পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় গত ১৪ মে ইটাহারে ভোট গ্রহণের কাজে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন ৪৮ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার রায়গঞ্জের বাসিন্দা রাজকুমার রায়। পরদিন ১৫ মে সন্ধ্যায় রায়গঞ্জের সোনাডাঙা এলাকায় রেললাইনের ধার থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।

কমিশনের নির্দেশকেই এবার অস্ত্র বানালেন ক্ষুব্ধ ভোট কর্মীরা, কীভাবে জানেন?এই ঘটনায় পর ভোটকর্মীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনও রাজকুমার রায়ের মৃত্যু রহস্য প্রকাশ্যে আসেনি৷ এবারের নির্বাচনেও যাতে এমন কোনও ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নিরাপ্তার দাবি জানিয়ে এসেছেন ভোট কর্মীদের একাংশ৷ কিন্তু, বারবার অভিযোগ জানানো হলেও মেলেনি সমাধান৷ মূলত, এবারের নির্বাচনে পর্যপ্ত নিরাপ্তা নিশ্চিত করতে আজ বিক্ষোভ দেখান ভোটকর্মীদের একাংশ৷

ভোটের কর্মীদের বিক্ষোভ দেখে মাঠে নামে কমিশন৷ নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, আগামী ১১ এপ্রিল কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে ভোট৷ শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে এবার ওই দুটি কেন্দ্রের জন্য তিন জন পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত কমিশনের৷ কোচবিহারের জন্য দু’জন পুলিশ পর্যবেক্ষক অলোক কুমার রায় ও কে জগদেশন এবং আলিপুরদুয়ারের জন্য পুলিশ পর্যবেক্ষক বিনোদ কুমারকে নিয়োগ করা হচ্ছে বলে খবর৷

অন্যদিকে, ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আগামী ৮ এপ্রিল শহর কলকাতার বুকে মহামিছিলে ডাক ভোট কর্মীদের একাংশের৷ রাজ্যের সমস্ত জেলায় শিক্ষক শিক্ষা কর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের ব্যানারে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে৷ আগামী ৮ এপ্রিল, দুপুর ১২টায় কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ঐক্য মঞ্চের প্রতিবাদ মিছিল ও নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে ডেপুটেশন নেওয়া হয়েছে বলে খবর৷

প্রতিটি জেলা থেকে ভোট কর্মীদের সংগঠিত করে সারা রাজ্যজুড়ে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে তা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী রাজ্যের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষা কর্মী শিক্ষানুরাগীদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, আগামী ৮ এপ্রিল সারা জেলার আন্দোলনের ধারা কলকাতায় মিলিত হয়ে বৃহৎ আকার ধারণ করবে। নিজেদের নিরাপত্তা মান মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে এই মিছিলে সকলকে শামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 6 =