কৃষ্ণনগর: ফিরিয়ে আনতে হবে নিখোঁজ নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়কে৷ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ফিরিয়ে না আনা হলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের৷ রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ঐক্যমঞ্চের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নোডাল অফিসার অর্ণব রায়কে ফিরিয়ে আনতে না পারলে ২৫ এপ্রিল কৃষ্ণনগরে জেলাশাসকের দপ্তরে অভিযান হবে৷
রাত পোহালেই নির্বাচন৷ চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ ইভিএম নিয়ে বুথের দিকে রওনা হয়েছেন ভোটকর্মীরাও৷ সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকায় এখনও আতঙ্কে কাঁপছেন ভোটকর্মীদের একাংশ৷ উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে অর্ণব রায়ের নিখোঁজ রহস্য৷
চারদিন পরেও খোঁজ নেই নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়ের। তিনি ইভিএম ওসির দায়িত্বে ছিলেন। স্বামীর সন্ধান না পেয়ে উদ্বিগ্ন অর্ণববাবুর স্ত্রী৷ আসানসোল থেকে তাঁর বাবা হারাধন রায় ও মা সুলেখা রায় কৃষ্ণনগরে পৌঁছে গিয়েছেন৷ অনিশাদেবী সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন, কেন স্বামী নিখোঁজ হলেন। প্রকৃত ঘটনা উঠে আসুক। আমার স্বামী অবসাদগ্রস্ত ছিলেন না।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে জেলা প্রশাসনের ওসি ইভিএম অর্ণব রায় নিখোঁজ। তাঁর দু’টি মোবাইল এখনও বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন তাঁর স্ত্রী অনিশা যশ। অনিশাদেবীও নদীয়া জেলাশাসকের দপ্তরে ডব্লিউবিসিএস অফিসার হিসেবে কর্মরত। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় অনিশা যশ বলেন, ‘‘সবার সহযোগিতা পাচ্ছি ঠিকই? কিন্তু, পুলিশকেও আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত৷ তিন দিন ধরে পাগলের মতো এখানে-ওখানে ঘুরছি৷ অথচ, কেউ কিছুই বলতে পারছেন না৷ কোথায় গেলে, কীভাবে পাব আমার স্বামীর খোঁজ৷’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘তিন দিন হয়ে গেল, অথচ কেউ আমার স্বামীর খোঁজ দিতে পারল না৷ আমি চাই ও সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক৷ জেলা প্রশানের লোকজন সবরকম চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন৷ তবে, এখনও পর্যন্ত আমার স্বামীর কোনও খোঁজ পাইনি৷’’
তিনি আশাবাদী, ‘‘আমার স্বামী কোনও ভাবেই মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত বা বিভ্রান্ত ছিলেন না৷ তার কারণ, আমি বৃহস্পতিবার স্বামীর অফিসে গিয়েছিলাম৷ সব ঠিকঠাক ছিল৷’’ কমিশনের তরফে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখানো হলেও তাঁর সাফ জবাব, ‘‘উনি আমার স্বামী৷ সেদিন ওর সঙ্গে ছ’বার কথা হয়েছিল৷ কিন্তু, হঠাৎ যে কী হল…৷’’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমি করজোড়ে প্রার্থনা করছি, সবাই মিলে চেষ্টা করুন, আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷ ওর বাবা-মায়ের এক ছেলে৷ ওঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে৷ ওঁদের কাছে অর্ণবকে ফিরেয়ে দিন প্লিজ৷ কেউ আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷’’
এই নিখোঁজ সংবাদ অন্য সাধারণ ভোটকর্মীদের মধ্যেও আশংকা তৈরি করেছে। শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে কিংকর অধিকারী জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন একরম দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন অফিসারের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বর্তায় নির্বাচন কমিশনের ওপর৷ তিনি দ্রুত অর্ণববাবুর সুস্থভাবে ফিরে আশার কামনাও করেন। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির রাজ্য নেতা কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও এত গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন অফিসারের জন্য নির্বাচন কমিশনের আরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল। এই অবস্থায় কত শীঘ্র অর্ণববাবুর সন্ধান পাওয়া যায়, সেটাই সকল ভোটকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে দেখার বিষয়।
এই ঘটনা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনিমেষ হালদার৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে কীভাবে নিশ্চিত নিরাপত্তার মাধ্যমে ভোট কর্মীরা ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন? তাঁর পরিবারের সঙ্গে উদ্বিগ্ন বাংলার সমস্ত ভোটকর্মী। আমরা অবিলম্বে সুস্থ অবস্থায় নোডাল অফিসার অর্ণব রায়কে উদ্ধার করা দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনা গত পঞ্চায়েত ইলেকশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিখোঁজ রায়গঞ্জের রাজকুমার রায়কে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। উপযুক্ত তদন্ত করে তাঁকে খুঁজে বের না করে ঘটনার মোড় অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে সারা বাংলা জুড়ে আবার ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদের ঝড় তুলবে৷’’