জালোর: রাজস্থানের মরুভূমিতে হাঁটতে হাঁটতে তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে মারা গেল ৬ বছরের এক শিশুকন্যা৷ তার ঠাকুমাকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। প্রশাসনের ধারণা, দু’জনেই মরুভূমির মধ্যে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলেন৷ আর তাতেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে রাজস্থানের জালোর জেলার রানিওয়ারায়৷ মরুভূমির মাঝখানে জল তেষ্টায় শিশুকন্যার মৃত্যুর ঘটনায় শুধু রাজস্থান নয়, শিউরে উঠেছে দেশবাসী৷
রাজস্থানে এখন তীব্র দাবদাহে তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুমা দুপুরের তীব্র গরমের মধ্যেই প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে নিজের বোনের বাড়িতে যাওয়ার জন্য দিয়েছিলেন৷ সুখী নামে ওই বৃদ্ধা কম দূরত্বের রাস্তা পার করতে মরুভূমির পথে হাঁটা শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু পথেই অসুস্থ বোধ করেন দু’জনে এবং চড়া রোদে মাঝপথেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তাঁরা৷ জালোরের কাছে রাস্তাতেই বসে পড়েন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য৷ কিন্তু সেখানে বসে বসেই আরও অসুস্থ বোধ করতে থাকে শিশুটি। তাঁদের কাছে জলও ছিল না৷ ওই শিশুকন্যার ঠাকুমা জানিয়েছেন, ‘কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে জল খেতে চাইলেও, কেউ এগিয়ে আসেনি। কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেনও না৷ শেষে জলের অভাবে নেতিয়ে পড়ে মেয়েটা।’ এক পশুপালকই প্রথম ওই বৃদ্ধা এবং তাঁর নাতনিকে মরুভূমির মাঝখানে পড়ে থাকতে দেখেন৷ তিনিই গিয়ে স্থানীয় গ্রামের প্রধানকে খবর দেন৷ তারপরপ পুলিশে খবর দেওয়া হলে তারা এসে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে৷
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলেই জলের অভাবে মৃত্যু হয় ওই শিশুটির। গুরুতর অসুস্থ হয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েন বৃদ্ধা। তিনি চিকিৎসাধীন৷ স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ওই বৃদ্ধার মানসিকভাবেও অসুস্থ ছিলেন৷ ছ’ বছরের নাতনিকে নিয়ে একাই থাকতেন তিনি৷ এই ঘটনার পর প্রশাসনের তরফে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কয়েক মাস ধরে নিজেদের বরাদ্দ রেশনও তুলছিলেন না ওই বৃদ্ধা৷ নাতনিকে নিয়ে কোনও রকমে ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালাতেন তিনি৷ স্থানীয় বাসিন্দারাও নাতনি এবং ঠাকুমাকে মাঝেমধ্যে খাবার দিতেন৷
জেলাশাসক ভর্ষনে সংবাদমাধ্যমকে জানান, কয়েক বছর আগে শিশুটির মা দ্বিতীয় বার বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে যান৷ এরপর থেকে ঠাকুমার কাছেই বড় হচ্ছিল সে৷ ওই বৃদ্ধার এক আত্মীয়ের সঙ্গে প্রশাসনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছে৷ ঘটনার পর রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিজেপি। বিজেপি-র রাজস্থানের রাজ্য সভাপতি সতীশ পুনিয়া বলেছেন, ‘স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও শিশুমৃত্যুর ঘটনা সত্যিই উদ্বেগের।’