নয়াদিল্লি: সময়ের চাকা অনেক রাজ রাজরাদের পথের ভিখারি করে ছেড়েছে৷ আবার অনেকে ভিখারি থেকে ধনী হয়েছেন৷ যেমন মাত্র দু’মাসেই রাস্তার ভিখিড়ি থেকে হাজার হাজার টাকার মালিক হয়েছিলেন বাবা কা ধাবা রেস্তোরাঁর মালিক কান্তা প্রসাদ৷ তবে সেই সুখ তাঁর জীবনে চিরস্থায়ী হল না৷ ফলে ফের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফিরতে হল সেই পুরনো ঠিকানায়৷ ঝাঁ চকচকে রেস্তোরাঁ ফিরে গেলেন নিজের সেই ভাঙাচোরা টিনের এক চিলতে দোকানে৷
এই তো এক বছর আগের কথা৷ গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের দৌলতে তিনি রাতারাতি সংবা শিরোনামে এসেছিলেন, ঝাঁ চকচকে একটি রেস্তোরাঁর মালিক হয়ে৷ এবারও সেই লকডাউনের জেরেই তাঁকে পুরনো জীবনে ফিরে যেতে হল৷ একেই কি বলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি! গত বছর অক্টোবর মাসের আগে তাঁর নাম অবশ্য কেউই জানত না। দীর্ঘ লকডাউনের জেরে তখন দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোগাড় করতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছিল কান্তা প্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী বাদামী দেবীর। ‘বাবা কা ধাবা’ নামে ছোট্ট একটি গুমটিতে মটর পনির আর ডাল বিক্রি করতেন তাঁরা। অথচ একজন ক্রেতাও না আসায় প্রতিদিন তাঁদের খাবার নষ্ট হত। এভাবে সব পুঁজি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তখন চোখের জলই ছিল তাঁদের নিত্য দিনের সঙ্গী৷
কিন্তু একদিন ফুড ব্লগার গৌরব ওয়াসন ‘বাবা কা ধাবা’ নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে প্রকাশ করতেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। কান্তা আর বাদামীর দুর্দশা সকলের চোখে পড়ে৷ তারপরই ঘটে মিরাকেল৷ পরের দিন সকাল থেকেই ‘বাবা কা ধাবা’র সামনে ক্রেতাদের লাইন পড়ে যায়। তাঁদের বিক্রি বেড়ে যায়৷ পাশাপাশি জীবনের মোড়ও বদলে যায়৷ কয়েক দিনের মধ্যে গুমটি ছেড়ে দিল্লির মালব্য নগরে বড়সড় এক রেস্তোরাঁ খোলেন কান্তা আর বাদামী। সেই রেস্তোরাঁয় ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ ফুড পাওয়া যেত৷ গোটা দেশে জনপ্রিয় হয়ে যান ৮০ বছরের কান্তা প্রসাদ আর বাদামী৷ নতুন এই রেস্তোরাঁয় জোম্যাটোর মাধ্যমেও খাবার পাওয়া যেত। বাজারের সমস্ত দেনাও পরিশোধ হয়ে গিয়েছিল৷ নিজের ও পরিবারের জন্য স্মার্ট ফোনও কিনেছিলেন। কিন্তু ফের সময়ের চাকায় তাঁদের সেই সুদিনও চিরস্থায়ী হল না৷
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় আবার সব পালটে গেল৷ দিল্লিতে করোনার বাড়বাড়ন্ত শুরু হওয়ায় তাঁদের রেস্তোরাঁয় প্রচুর ক্ষতি হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে ফের ব্যবসার পতন শুরু হয়৷ একে একে ক্রেতা কমতে থাকে৷ এক ধাক্কায় দৈনিক আয় ৩৫০০ থেকে মাত্র ১ হাজারে এসে দাঁড়ায়। এই টাকায় কান্তার ৮ জনের সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে ফের বন্ধ হতে চলেছে কান্তার নতুন রেস্তোরাঁ। নতুন রেস্তোরাঁর জন্য কান্তা প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ঢেলেছিলেন। ৩ জন কর্মচারী কাজ করতেন সেখানে। কান্তার কথায়, এই বিরাট অঙ্কের টাকা জোগাড় করতে এখন হাবুডুবু খাচ্ছেন তিনি৷ নতুন রেস্তোরাঁ খোলাটা একদম ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না৷ এখন চেয়ার, টেবল, বাসনপত্র, কুকিং মেশিন বিক্রি করে তিনি মাত্র ৩৬ হাজার টাকা জোগাড় করেছেন৷ বাকি টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না কান্তা প্রসাদ।