মুম্বই: করোনা আবহে মুম্বইয়ের সেন্ট জর্জ হাসপাতাল কোভিড আক্রান্তদের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন লিঙ্গ পরিবর্তনকারীরা৷ মুম্বইয়ের খ্যাতনামা প্লাস্টিক সার্জেন চিকিৎসক রজত কাপুর প্রত্যেক দিনই অসমের হোজাই জেলার এক রোগীর মেসেজ পান৷ এছাড়াও বিহার, মহারাষ্ট্র থেকেও অন্যান্য রোগীরা ফোন করে জানতে চান হাসপাতালে কবে থেকে আবার অস্ত্রোপচার শুরু হবে৷ তিনি প্রত্যেককেই বলেন, এখনও অতিমারি আবহ কাটেনি৷
২০১৯ সালে অসমের বাসিন্দা ৩৪ বছরের রীতা দেবী লিঙ্গ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন৷ যদিও পেশায় চাষি রীতা দেবী গত বছর নাম পরিবর্তন করে রীত কুমার হয়েছেন৷ পুরুষ হতে অস্ত্রোপচারের জন্য বন্ধুদের থেকে টাকা জোগাড় করে ট্রেন ধরে সোজা মুম্বই এসেছিলেন গত বছরের মার্চ মাসে৷ স্ত্রী যৌনাঙ্গ বাদ দিয়ে পুরুষাঙ্গ স্থাপন করার কথা ছিল৷ কিন্তু করোনা নামক অতিমারির জেরে সেই সুযোগ পাননি তিনি৷ কারণ মুম্বইয়ের লিঙ্গ-পরিবর্তনের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট সেন্ট জর্জ হাসপাতালটিকে সম্পূর্ণ কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে৷ এর আগে তাঁর শরীর থেকে স্তন কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যরা ভয় পাচ্ছিল এই অস্ত্রোপচার নিয়ে৷ কিন্তু আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল৷ আমি নারী থেকে পুরুষ হতে চাইছি৷’
অসমের সমাজকর্মী এবং রীতের বন্ধু প্রসেনজিৎ পাল তাঁকে লিঙ্গ পরিবর্তন করতে অস্ত্রোপচারের জন্য অনেকগুলি কাউন্সেলিং করে মানসিক প্রস্তুতি নিতে পাশে থেকেছেন ৷ রীতার শরীরে পুরুষালি ছাপ আনতে প্রয়োজনীয় হরমোন থেরাপির টাকা জোগাড় করে দিয়েছেন৷ রীতা থেকে রীত হওয়ার বিষয়টি ব্যয়সাপেক্ষ, যা চাষাবাদ করে জোগাড় করা সম্ভব নয়৷ আর যাঁরা লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চাইছেন, অথচ ব্যয়ভার বহন করার অর্থ নেই, তাঁদের জন্য সেন্ট জর্জ হাসপাতালই একমাত্র ভরসা৷ কারণ যাঁরা অনেক খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে অক্ষম সেইসব গরিবদের কথা মাথায় রেখে এই রাজ্যই কম খরচে লিঙ্গ পরিবর্তন করার সুবিধা দিয়ে থাকে৷ যে কোনও জায়গায় লিঙ্গ পরিবর্তন করতে ৪-১০ লক্ষ টাকা খরচ হলেও, সেন্ট জর্জ হাসপাতালে ৬০-৭০,০০০ টাকায় সেটা করা সম্ভব৷
২০১৮ সালে এখানে চিকিৎসক রজত কাপুরের তত্ত্বাবধানে রূপান্তরকামী মানুষদের জন্য একটি সাপ্তাহিক বহির্বিভাগ চালু হয়৷ সবাইকে কাউন্সেলিংয়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তুলনায় অনেক কম খরচে কারও কারও হরমোনাল থেরাপি শুরু হয়৷ দু’জনের লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ হলেও, অতিমারিতে আপাতত সব থমকে গিয়েছে৷ অসম, বিহার, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ আর মহারাষ্ট্র থেকে প্রায় ১৮ জন প্রান্তিক আর গরিব মানুষ অপেক্ষায় রয়েছেন সেন্ট জর্জ হাসপাতালে আবার অস্ত্রোপচার শুরু হওয়ার৷