বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে বিজেপি, এটা প্রমাণিত: তৃণমূল

কলকাতা: বিজেপির তোলা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি জানাল তৃণমূল৷ বেশ কিছু হামলার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে সংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েন৷ দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বিদ্যাসাগর কলেজে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ডেরেক বলেন, ‘‘হামলা চালিয়েছে বিজেপি৷ ভিডিওতে স্পষ্ট, বিজেপির গুন্ডারা কলেজের মধ্যে ঢুকে হামলা চালিয়েছে৷ বিজেপি দাবি করছে, তারা হামলা করেনি৷ কিন্তু, ভিডিও-ছবিগুলি কি

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে বিজেপি, এটা প্রমাণিত: তৃণমূল

কলকাতা: বিজেপির তোলা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি জানাল তৃণমূল৷ বেশ কিছু হামলার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে সংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েন৷ দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বিদ্যাসাগর কলেজে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ডেরেক বলেন, ‘‘হামলা চালিয়েছে বিজেপি৷ ভিডিওতে স্পষ্ট, বিজেপির গুন্ডারা কলেজের মধ্যে ঢুকে হামলা চালিয়েছে৷ বিজেপি দাবি করছে, তারা হামলা করেনি৷ কিন্তু, ভিডিও-ছবিগুলি কি মিথ্যা কথা বলছে৷ দাঙ্গা করাটাই বিজেপির রাজনৈতিক নীতি৷’’

মঙ্গলবার কলকাতায় বহিরাগত বিজেপি ‘গুন্ডারা’ যে তান্ডব চালিয়েছে তার ভিডিও প্রমাণ সহ আজ বিকেল সাড়ে ৪টেয় নির্বাচন কমিশন গিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা অভিযোগ জানবেন বলেও দাবি জানান ডেরেক৷ বলেন, ‘‘কলকাতা শহর সবার জন্য৷ যে কেউ এখানে আসতে পারেন৷ আপনি মিছিল করতেই পারেন৷ কিন্তু, বহিরাগতদের নিয়ে মিছিল করতে হল কেন? আমি জানতে চাই, মিছিলে কেন বহিরাগতদের আনা হল? আশান্তি করার জন্য কি?’’

অন্যদিকে, অমিত শাহের রোড শোয়ে হামলা ও বিদ্যাসাগর কলেজে তাণ্ডব প্রসঙ্গে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহা৷ মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা-নেত্রীর ছবি দেখিয়ে রাহুল সিনহা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার হামলার সময় বিদ্যাসাগর কলেজে কী করছিলেন প্রাক্তন পডুয়ারা? ওরা কি হামলা করবে বলেই ওখানে জমায়েত করেছিল? এদিনের এই ঘটনা তৃণমূলের প্ররোচনাতে এই ঘটোনা হয়েছে৷ বিজেপি কর্মীরা মূর্তি ভাঙেনি৷’’

এদিন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণ করে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিধানসভা ভাঙচুর করেছিলেন৷ সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে৷ রাজ্যের বিধানসভা ভেঙে এখন বড়বড় কথা বলছেন? মূর্তি ভাঙা নিয়ে রাজনীতি করছেন?’’বলেন, ‘‘কাল ওখানে যাঁরা জখম হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তাঁরা প্রাক্তন পড়ুয়া৷ তৃণমূলের বড় নেতা৷ এদের বিরুদ্ধে কলেজে ভর্তির নামে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷ ছাত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷ এরাই কি না আজ বলছে, বিজেপি মূর্তি ভেঙেছে৷’’

ব়্যালিতে হামলা প্রসঙ্গে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ আজ, নয়াদিল্লিতে সংবাদিক বৈঠক করে বেশ কিছু ছবি দেখি কলেজে হামলার দায় পুরোপুরি তৃণমূলের উপর চাপালেন অমিত শাহ৷

বলেন, ‘‘আজ সারা দেশে ছ’দফার ভোট হয়ে গিয়েছে৷ শুধুমাত্র বাংলা ছাড়া বাকি শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে৷ তৃণমূল ৪২ আসনে লড়ছে৷ আর বিজেপি সারা দেশে লড়ছে৷ আমরা যদি আশান্তি করতাম, তাহলে সারাদেশে কী হতে পারত৷ কিন্তু, অশান্তিতে বিশ্বাস করি না৷’’ মঙ্গলবার সন্ধ্যার হামলার প্রসঙ্গ তুলে অমিত শাহরে মন্তব্য, ‘‘আমার সঙ্গে সিআরপিএফের জওয়ানরা না থাকলে ওখান থেকে বেঁচে ফারা আমার হতো না৷ যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, আমরা প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা ছিল৷’’

কলেজে হামলার দায় তৃণমূলের উপর চাপিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘‘কাল রাত সাতটায় কেন কলেজ খোলা ছিল৷ কলেজের গেট তো ভিরত থেকে বন্ধ ছিল৷ তাহলে কলেজে ভাঙচুর, মূর্তি ভাঙল কে? তৃণমূলের গুন্ডারা কলেজের ভিতর থেকে ভাঙচুর করে বিজেপিকে বদনাম করছে৷’’ ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘‘এখানে মূর্তি রাখা ছিল৷ তাহলে বলুন, এটা খুলল কে? সন্ধ্যা সাতটায় সময় কলেজের মধ্যে তৃণমূলের গুন্ডারা কী করছিল৷ ওই দিন তৃণমূলের গুন্ডা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে৷’’ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমি ভেবে হতাশ হয়েছে যাচ্ছি, ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে তৃণমূল কীভাবে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাল?’’ এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি জানান অমিত শাহ৷ বলেন, ‘‘মমতাজি আমাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে৷ মমতাদির পুলিশে ভাই পায় না৷ ২৩ মের পর সব দেখা যাবে৷ যদি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চান, তাহলে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করছেন না কেন?’’

বলেন, ‘‘মহান শিক্ষাবিদ বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে নোংরা ভোটব্যাংকের রাজনীতি করে টিএমসি৷ নিজেদের শেষের দিন গণনা শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল৷’’ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সন্ধ্যা ৭.৩০টা’র সময় কলেজের গেট খোলা রাখা হয়েছিল কেন? গেটের চাবি কার কাছে থাকে? কলেজ বন্ধ থাকার সময়েও কেন বাইরের লোক ভিতরে ছিল? মমতা দিদির হিম্মত থাকলে, কোনও নিরপেক্ষ তদন্ত করিয়ে প্রমান করুন বিজেপি ঝামেলা শুরু করেছিল৷ রোড শো প্রায় ২.৩০ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলেছে। যে সংখ্যায় ভিড় হয়ে মানুষের সমর্থন চলছিল তাতে মমতা দিদির রাগ হয়েছিল। নির্দিষ্ট সূচনা থাকার সত্ত্বেও বাংলার পুলিশ টিএমসির বিক্ষোভ বিরত করার বা তাঁদের সরিয়ে দেবার কোনো প্রচেষ্টা করেনি৷ ’’

অমিত শাহের ব়্যালিতে হামলা প্রসঙ্গে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আগেই তোলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ বিদ্যাসাগর কলেজে হামলার পিছনে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা দিলীপের৷ হামলার পর সংবাদমাধ্যমে বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘মিছিল যখন যাচ্ছিল, তখন আমার সামনেই ইটের ঘায়ে দু’জনের মাথা ফাটে৷ কলেজের মধ্য থেকে ইট ছোড়া হয়৷ তাতেই আমাদের কয়েকজন আহত হয়৷ আচ্ছা, এত তো চ্যালেনে সবাই দেখাচ্ছে, কিন্তু কেউ কি দেখেছেন, বিজেপি কর্মীরা কলেজে ঢুকে ভাঙচুর করেছে? কলেজের গেট ভেতর থেকে বন্ধ ছিল৷ তাহলে ভাঙচুর হল কীভাবে?’’

অন্যদিকে, অমিত শাহের ব়্যালিতে হামলা, পাল্টা হামলার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর দাবি জানাল বিজেপি৷ মঙ্গলবার রাতে কমিশনে গিয়ে অভিযোগ জানান মুক্তার আব্বাস নাকভি ও নির্মলা সীতারমন৷

কমিশনে গিয়ে বিজেপির তরফে বলা হয়, ‘‘বাংলায় গণতন্ত্রের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজে তার দলের লোকদের হামলার জন্য প্রভাবিত করছে৷ আজ, অমিত শাহরে কলকাতার ব়্যালিতে হামলা চালানো হয়েছে৷ আমাদের বেশ কয়েকজন জখম৷ এই ঘটনা পর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা নেবেন৷ মমতাজি নিজেই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে৷ এই পরিস্থিতি আমরা চাই, মুখ্যমন্ত্রীর উপর প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করুক নির্বাচন কমিশন৷’’

এদিন সন্ধ্যায় বিবেকানন্দ কলেজে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন ধরনের রাজনৈতিক দাঙ্গা আমি আগে কখনও দেখেনি৷ কলেজটা পুরো ভাঙচুর করেছে৷ এই ঘটনার নিন্দা জানানো ভাষা নেই আমার৷ আমরা এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করব৷ এমন ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের ছেড়ে কথা বলব না৷’’ এদিন সিপি বলেন, ‘‘আমরা ১১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি৷ আমরা এর তদন্ত করে দেখছি৷’’

অমিত শাহর রোড শো’র মাঝেই ধুন্ধুমার বাধে কলেজ স্ট্রিটের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। মঙ্গলবার অমিত শাহর পদযাত্রা যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছায় তখন সেখানে টিএমসিপি কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল৷ এর পালটা হিসাবে বিজেপি-র ওই পদযাত্রা থেকেও কর্মী সমর্থকরা ইঁট, পাথর, লোহার রড, বাঁশ, লাঠি জলের বোতল সবই ছোঁড়েন। পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের ব্যারিকেড ভেঙে মারমুখি হয় ওঠেন পড়ুয়ারাও। তবে পদযাত্রা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে বিজেপি, এটা প্রমাণিত: তৃণমূলপদযাত্রা বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে গেলে সেখানেও চলে ইটবৃষ্টি৷ অভিযোগ, কলেজের ভিরত থেকে মিছিল লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়৷ পাল্টা হামলা চালায় বিজেপি৷ দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন জখম হন৷ পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে৷ অভিযোগ, পাঁচিল টপকে বিজেপি সমর্থকরা বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে ভাঙচুর চালায়৷ ভাঙা হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তি৷ কলেজের বাইরে থেকে পাল্টা ইট, বাঁশ, লাঠি ছোড়া হয়৷ পরে, কলেজের বাইরে থাকা তিনটি বাইকে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়৷ কোনওক্রমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ৷

এদিনের এই ঘটনা প্রসঙ্গে অমিত শাহের অভিযোগ, রোড শো ভণ্ডুল করতে তৃণমূলের গুন্ডারা এই হিংসা ছড়িয়েছে৷ পদপৃষ্ট করিয়ে মানুষ মারতে চেয়েছিল শাসক দল! বলেন, ‘‘কলেজের ভিতর থেকে কালো ঝান্ডা নিয়ে বেরিয়ে আসে তৃণমূলের গুন্ডারা। কিন্তু পুলিশ কিছুই করেনি৷ তৃণমূলের গুন্ডা ও আমাদের কর্মীদের মধ্যে ঝামেলা বাঁধে৷ আজ মিছিলে ভিড় দেখে তৃণমূলের গুন্ডারা মরিয়া হয়ে ওঠে৷ আর সেই কারণে এই হামলা৷ আজ মানুষকে পদপৃষ্ট করে মারার পরিকল্পনা করেছিল। প্ররোচনা সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে রোড শো। এজন্য বিজেপি কর্মীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 5 =