চুঁচুড়া: মুদির দোকানের তেল নুন ডালের হিসাব দেখা থেকে সোজা আইপিএলের স্কোরার৷ ক্রিকেট তারকাদের চার-ছয়ের হিসাব এবার সূর্য'র নির্দেশেই স্কোরবোর্ডে ফুটে উঠবে আইপিএল বোর্ডে৷ স্বপ্ন পূরণ চুঁচুড়া নিবাসি সূর্যকান্ত পাণ্ডা'র৷
আনন্দ, উত্তেজনার পাশাপাশি কিছুটা ভয়ের সঙ্গেই সূর্য আজ পাড়ি দিলেন বেঙ্গালুরু৷ সেখান থেকে সোজা উড়ে যাবেন আরব আমিরশাহি৷ চলতি মাসের এক দুপুরে ফোন পেয়েছিলেন সূর্য৷ তখন তিনি মুদির দোকানে চাল ডালের হিসাব সামলাচ্ছেন৷ বাংলার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা জানালেন, আইপিএলের স্কোরার হিসাবে সূর্য মনোনিত হয়েছেন৷ যেতে হবে সুদূর আরব আমিরশাহি৷ চোখের জল বাঁধ মানেনি সূর্য বাবুর৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই প্রথম বার পা রাখবেন, তাও আবার বিদেশের মাটিতে৷
ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটার কিংবা ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন সূর্যকান্ত৷ কিন্তু অভাবের সংসারের ঘানী টানতে গিয়ে খেলা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন৷ বাবার হাত ধরে ওড়িশা থেকে চলে এসে হুগলী জেলার চুঁচুড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন৷ মা ও বোনের দেখা শোনার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ২০০৩ সাল থেকে মুদির দোকানের চাল ডালের হিসাব করাই সূর্যকান্তের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়৷ ক্রমশ কুরে কুরে খাচ্ছিল খেলা ছেড়ে দেওয়ার যন্ত্রণা৷ সংসারের সংগ্রাম সামলাতে গিয়ে ভিতর থেকে ভেঙে পড়ছিলেন ক্রমশ৷ কিন্তু শত বাঁধাও আটকাতে পারেনি সূর্যকে৷
সপ্তাহে একদিন দু’দিন মাঠে যাওয়া শুরু করেছিলেন সুর্য৷ খেলার প্রতি তীব্র ভালবাসা যেকোনও কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে শিখিয়েছিল সূর্যকে৷ এরপর জেলা ক্রিকেটের স্কোরার হিসাবে হাতেখড়ি হয় সূর্যর৷ ক্রমশ এই কাজে দক্ষতা অর্জন করতে শুরু করেন তিনি৷ কিছুদিন পর বাংলার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ডাক আসে সূর্যকান্তের৷ শুরু হয় মাঠে কঠোর প্র্যাকটিস৷ একদিন কোচবিহার ট্রফির ম্যাচে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার ফলে রঞ্জি ট্রফিতে নির্বাচিত হন তিনি স্কোরার হিসাবে৷
গত বছর সিএবি সচিব অভিষেক ডালমিয়ার হাত থেকে বর্ষসেরা স্কোরারের সম্মান কুরিয়েছেন সূর্য৷ আন্তর্জাতিক ম্যাচে যাওয়ার খিদে তাড়া করছিল সূর্যকান্তকে৷ এবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলল৷ ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আরব আমিরশাহিতে শুরু হবে এ বছরের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ৷ সেখানে স্কোরারের ভূমিকা পালন করবেন চুঁচুড়ার সূর্যকান্ত পাণ্ডা৷