লন্ডন: কোণায় কোণায় ভর্তি ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। ৫২ হাজার ব্রিটিশ সমর্থক উচ্ছাস করছেন তাদের সাধের হ্যারি কেন, রহিম স্টার্লিং, জ্যাক গ্রিলিশদের জন্য। তারা একরকম ধরেই নিয়েছেন ইতিহাসে প্রথমবার ইউরোর ফাইনালে তারা যাচ্ছেনই। অন্যদিকে রয়েছেন ৮ হাজার ড্যানিশ সমর্থক। তারা খুব বেশি উচ্ছাস দেখাচ্ছেন না, তবে তাদের ভিতরে যেন কোথাও একটা দাউদাউ করে লড়াইয়ের আগুন জ্বলছে। ইউরো কাপ ২০২০-এর প্রথম ম্যাচেই সতীর্থ ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের গুরুতর শারীরিক দুর্ঘটনায় একেবারে ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল গোটা ডেনমার্ক দল। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচের পর থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় তারা। এরিকসনকে মনে করে তার জন্যই জ্বলে ওঠেন ব্রেথওয়েটরা। শুরু হয় ঐতিহাসিক ড্যানিশ লড়াই।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৯৯২ সালের পর এই প্রথমবার ইউরো কাপের সেমিফাইনালে পা রাখল ডেনমার্ক। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের সঙ্গে লন্ডনে ঐতিহাসিক ওয়েম্বলিতে ৫২ হাজার ইংরেজ দর্শকদের সামনে ড্যানিশ যোদ্ধারা তাদের শ্রেষ্ঠ লড়াইটা দেখিয়ে দিল। ইংরেজদের বিরুদ্ধে শুধু ১১ জন ড্যানিশই মাঠে নামেনি। তারা প্রত্যেকে ১০০ ড্যানিশ যোদ্ধার শক্তি নিয়ে নেমেছিল ইতিহাস গড়তে। শক্তিশালী অপ্রতিরোধ্য ইংরেজদের প্রায় রুখেই দিয়েছিল তারা। চোখে চোখ রেখে হয়েছিল সংগ্রাম। গোটা প্রতিযোগীতায় যেখানে একটাও গোল হজম করেননি ইংরেজ গোলরক্ষক জর্ডন পিকফোর্ড, সেখানে ড্যানিশ যোদ্ধা ড্যামসগার্ড ফ্রি-কিক থেকে অব্যর্থ নিশানায় এদিন অবশেষে পরাস্ত করেন পিকফোর্ডকে। যেখানে ইংরেজদের জমাট রক্ষণ ভয় ধরিয়েছিল সমস্ত দলকে, সেই রক্ষণকেও ড্যানিশ যোদ্ধারা বারবার ভেদ করেছেন।
ইংরেজ প্রশিক্ষক গ্যারেথ সাউথগেট হয়তো ভেবেছিলেন ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ইউরোর সেমিফাইনালটা খুব একটা কঠিন হবে না। কিন্তু ডেনমার্কের যোদ্ধাদের পরিকল্পনাই ধরতে পারেননি তিনি। খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এদিন যে লড়াইটা ড্যানিশরা দিয়েছে তা ডেনমার্কের ফুটবল ইতিহাসে সোনার অক্ষরে চিরকাল লেখা থাকবে। ডেনমার্কের প্রত্যেক খেলোয়াড় এদিন ইংরেজদের বিরুদ্ধে ১২০ মিনিট রক্ত জল করে লড়াই করেছে। ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের জন্য তাদের এই যুদ্ধকে গোটা ফুটবল বিশ্ব কুর্নিশ জানাচ্ছে। প্রথম ম্যাচেই ছাড়খার হয়ে যাওয়া ডেনমার্ক ঘুরে দাঁড়িয়ে ওয়েম্বলির ৫২ হাজার ইংরেজ সমর্থকের সামনে যে পাল্টা লড়াই দিয়েছে সেটা চিরকাল ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে রয়ে যাবে।