গাড়িচালক বাবার মেয়ে থেকে মহিলা হকি দলের অধিনায়ক! সুশীলার স্বপ্নের উড়ান

গাড়িচালক বাবার মেয়ে থেকে মহিলা হকি দলের অধিনায়ক! সুশীলার স্বপ্নের উড়ান

62d9aea3876db861b7193dff42d35aa7

মুম্বই: অস্বচ্ছল পরিবার৷ দিন আনি দিন খাই ঘরে জন্ম নেওয়া একটা মেয়ে স্বপ্ন দেখেছিল৷ তা সফল করার সাহসও দেখিয়েছিল বটে৷ মুম্বই স্টেশনে কেউ কেউ তাঁকে দেখে থাকবেন৷ গায়ে কালো কোট চাপিয়ে টিকিট পরীক্ষা করছেন৷ আর কালো কোটের উপর জ্বলজ্বল করছে অলিম্পিক্সের পাঁচটি রিং৷ 

আরও পড়ুন- RCB-র ক্যাপ্টেন হিসাবে এটাই শেষ মরশুম, আইপিএল নিয়েও ‘বিরাট’ ঘোষণা কোহলির

সুশীলা

মুম্বই স্টেশনের এই টিকিট পরীক্ষকের একটা বড় পরিচয় রয়েছে৷ যে পরিচয়ের জন্যই তাঁর এই চাকরি৷ তিনি আর কেউ নন সুশীলা চানু৷ রিও অলিম্পিক্সে ভারতীয় মহিলা হকি দলের প্রতিনিধিত্ব করা প্রতিভাবান এক খেলোয়ার৷ সম্প্রতি তাঁর টিকিট চেকিংয়ের কিছু ছবি টুইটারে শেয়ার করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু৷ সেই সঙ্গে সুশীলার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাও প্রদর্শন করেন তিনি৷ 

সুশীলা

সুশীলার জন্ম মণিপুরের ইম্ফলে৷ ১৯৯২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দরিদ্র পরিবারে জন্ম তাঁর৷ সুশীলার বাবা ছিলেন গাড়ির চালক৷ আর মা সংসার সামলাতেন৷ তবে সুশীলার গায়ে ছিল খেলোয়াড়ের রক্ত৷ তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন পোলো খেলোয়াড়৷ ছোট থেকে খেলাধুলো করতে পছন্দ করতেন সুশীলাও৷ তবে খেলোয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন বাবার হাত ধরেই৷ ১৯৯৯ সালে বাবার সঙ্গে মণিপুর স্টেডিয়ারে একটি ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন তিনি৷ ওই ম্যাচের উদ্দীপনা আলোড়ন তৈরি করেছিল সুশীলার মধ্যে৷ জেগে উঠেছিল তাঁর খেলোয়ার সত্ত্বা৷

sushila

মাত্র ১১ বছর বয়সে হকি স্টিক হাতে তুলে নিয়েছিলেন এই মণিপুরী কন্যা৷ প্রতিভার জোড়ে কিছু দিনের মধ্যেই সুযোগ আসে জাতীয় স্তরে খেলার৷ জুনিয়র ন্যাশনাল হকি চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর খেলা মুগ্ধ করেছিল জাতীয় নির্বাচক কমিটিকে। 

sushila

তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল ২০০৮ সালে কুয়ালা লামপুরে৷ মহিলা হকি জুনিয়র এশিয়া কাপে ফিল্ডে নামেন সুশীলা৷ ওই ম্যাচে ব্রোঞ্জ জেতে ভারত। কিন্তু এর পরের বছরই চোটের কারণে সাময়িক ভাবে দল থেকে বাদ পড়েন ৷ ইতিমধ্যে মধ্যপ্রদেশের হকি অ্যাকাডেমি থেকে স্নাতক হন সুশীলা৷ এর পরেই যোগ দেন মুম্বই স্টেশনে টিকিট কালেক্টর হিসাবে৷ ২০১০ সাল থেকে তাঁর ঠিকানা মুম্বই৷ তবে কোনও ঝাঁ চকচকে অ্যাপার্টমেন্ট নয়, আরও এক হকি খেলোয়াড়ের সঙ্গে রেলেরই দেওয়া একটি ঘরে থাকেন সুশীলা।

সুশীলা

২০১৬-র রিও অলিম্পিক্স-এ ভারতীয় জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছেন  সুশীলাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, অলিম্পিক্স শুরুর মাস খানেক আগে হাঁটুতে ভয়ঙ্কর চোট পান তিনি। অস্ত্রোপচার করতে হয়৷ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল তাঁর।

সুশীলা

তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছিলেন৷ ভারতের হয়ে অলিম্পিক্সে প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন সুশীলা। তাঁর অধিনায়কত্বেই দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ভারতী মহিলা হকি দল সুযোগ পেয়েছিল অলিম্পিক্স-এ খেলার৷ সুশীলার স্বপ্ন ছিল,  অন্তত এক বার যেন দেশের নীল জার্সি গায়ে তিনি মাঠে নামতে পারেন৷ কিন্তু সব মিলিয়ে মোট ১৫০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। স্বপ্ন পূরণ করেছেন বাবার৷ কঠিন লড়াই করেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাঁর৷ 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *