ছিল না প্রশিক্ষণ নেওয়ার টাকা, IPL খেলার টাকায় বাবা-মা’র জন্য বাড়ি কিনতে চান তিলক

ছিল না প্রশিক্ষণ নেওয়ার টাকা, IPL খেলার টাকায় বাবা-মা’র জন্য বাড়ি কিনতে চান তিলক

মুম্বই: এক সময় প্রশিক্ষণ নেওয়ার টাকাও ছিল না তাঁর কাছে৷ সেই সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কোচ৷ সেই ছেলেরই নজরকাড়া পারফরম্যান্সে মুগ্ধ ক্রিকেট বিশ্ব৷ 

আরও পড়ুন- নিলামে উঠতে চলেছে ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনার ঐতিহাসিক ‘হ্যান্ড অব গড’ জার্সি

বহু খেলোয়াড়ই জাতীয় দলে সুযোগ পেতে পাখির চোখ করে আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টকে৷ কিন্তু শুধু জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নয়, হায়দরাবাদের এই ব্যাটারের লক্ষ্য অন্য কিছু। জাতীয় দলের দরজা খোলার আগে আইপিএলের রোজগার থেকে বাবা-মায়ের মাথার উপর পাকা ছাদের বন্দোবস্ত করতে চান তিনি।

tilak

আইপিএলে এখনও পর্যন্ত সাকুল্যে দু’টি ম্যাচে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে এর মধ্যেই ক্রিকেট-জহুরিদের নজরে চলে এসেছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ব্যাটার নাম্বুরি ঠাকুর তিলক বর্মা। সংক্ষেপে যিনি পরিচিত তিলক বর্মা নামে৷ আইপিএলে’র অভিষেক নজর কেড়েছিলেন তিলক। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ১৫ বলে ২২ রান করেছিলেন তিনি৷ পরিসংখ্যানের নিরিখে এটা খুব বেশি নয়৷ ৪ উইকেটে সেই ম্যাচটি হেরে গিয়েছিল রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ানস। তবে হায়দরাবাদী ব্যাটার নাম্বুরির উপস্থিতি চোখে পড়েছিল৷ 

দ্বিতীয় ম্যাচে ফের গর্জে উঠেছিল তিলকের ব্যাট! বিপক্ষের সব দাপুটে বোলারদের বিরুদ্ধে বন বন করে ঘুরেছিল নাম্বুরির  ব্যাট৷ দলকে প্রায় জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ৩৩ বলে ৬১ রান হাঁকিয়েছিলেন৷ মেরেছিলেন ৫টি ছয় আর ৩টি চার৷ এক সময় আইপিএলের মতো টুর্নামেন্ট থেকেই জাতীয় নির্বাচকদের চোখে পড়েছিলেন হার্দিক পাণ্ড্য, যশপ্রীত বুমরাদের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা। আইপিএল থেকেই তিলকের উত্থানের কাহিনি লেখা হবে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা৷ 

রাজস্থানের বিরুদ্ধে ১৯ বছরের তিলক বর্মার ইনিংস অনেককেই মুগ্ধ করেছিল। সাবলীল ভাবেই তাঁর ব্যাট থেকে বল ছিটকে গিয়েছিল বাউন্ডারির বাইরে৷ বেশ পরিষ্কার শট মারেন তিলক। তাঁর ব্যাট ঘোরে গজের সব দিকেই৷ দ্বিতীয় ম্যাচে আউট হওয়ার আগে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো বাগা স্পিনারকে থার্ড ম্যানের উপর দিয়ে রিভার্স স্যুইপে তিলকের ছয় এখনও অনেকের স্পষ্ট৷ যদিও অশ্বিনের পরের বলেই প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়েছিল তিলককে।

 

তিলক

দ্বিতীয় ম্যাচের শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে অশ্বিনের প্রশংসা করেছিলেন তিলক৷ সেই সঙ্গে নিজের লক্ষ্য নিয়েও মুখ খুলেছিলেন হায়দরাবাদী ব্যাটার। তরুণ ক্রিকেটার  বলেছিলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব কোনও বাড়ি নেই। এখন আমার একটাই লক্ষ্য৷  আইপিএল থেকে রোজগারের টাকায় বাবা-মা’কে একটা বাড়ি কিনে দেওয়া৷’’

তিলকের বাবা নাম্বুরি নাগারাজু পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। যৎ সামান্য রোজগারের টাকায় কোনও মতে সংসার চালান। একটা সময় এমনও গিয়েছে, যখন ছেলের ক্রিকেট কোচিংয়ের অর্থ জোগাড় করাও তার কাছে বড় দায় হয়ে উঠেছিল৷ সে সময় তিলকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন কোচ সালাম বায়েশ। তিলকের খরচাপাতি তো বটেই তাঁকে প্রশিক্ষণও দেন তিনি।

আইপিএলের নিলামে তিলকের মূল্য ছিল মাত্র ২০ লক্ষ টাকা। তবে তাঁকে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকায় কিনে নেন মুম্বই কর্তারা। আইপিএলের পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন দল কেন এক জন আনকোরা ব্যাটারের জন্য এত টাকা ঢালল? মুম্বইয়ের কোচ মাহেলা জয়বর্ধনে এবং ক্রিকেট ডিরেক্টর জাহির খানের কথায়,  তিলকের উপর দু’বছর ধরে নজর ছিল তাঁদের।   সেই কারণেই বেস প্রাইস থেকে সাড়ে ৮ গুণ টাকা বেশি দিয়ে তাঁরে ঘরে তুলে নেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স৷ 

তবে এই ব্যপারটা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তিলক। তিনি বলেন, ‘‘যখন আইপিএলের নিলাম চলছে, তখন কোচকে ভিডিয়ো কল করেছিলাম। নিলামে যখন আমার দর উপরের দিকে চড়তে শুরু করে, তখন তিনি কেঁদে ফেলেন। মুম্বইয়ে সুযোগ পেয়েই মা-বাবাকেও ফোন করেছিলাম। ওঁরাও শুনে কেঁদে ফেলেন। মা তো কথাই বলতে পারছিলেন না৷’

সদ্যসমাপ্ত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপেও খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিলক। তবে সে ভাবে নজর কাড়তে  পড়েননি। ছ’টি ম্যাচে তাঁর রান মাত্র ৮৬৷ গড় মাত্র ২৮.৬৬৷ তিলকের কথায়, ‘‘কেরিয়ারের বাকি দিনগুলো যাতে খোলা মনে খেলতে পারি, সেই সুযোগ করে দেবে আইপিএলের উপার্জন।’’