নয়াদিল্লি: দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আজ ঘরে ফেরার পালা। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ফল আজ পেয়েছেন দেশের কৃষকরা। দীর্ঘ ৩৭৮ দিনের লড়াই আজ কার্যত শেষ। আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন কৃষকরা। রাজধানী দিল্লির সীমানায় গত ১৫ মাস ধরে চলছিল কৃষি আন্দোলন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন তারা। আজ সেই আন্দোলনের ইতি টানলেন বিক্ষোভরত কৃষকরা।
কিছুদিন আগেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত সংসদে এই ইস্যুতে প্রস্তাব পাস হয়েছে ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন কৃষকরা। তবে ইতিমধ্যেই আইন প্রত্যাহারের পদ্ধতি নেওয়া হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রের এবং আজ তাদের কাছ থেকে চিঠি এসে গিয়েছে কৃষকদের কাছে। তাই আন্দোলন তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন তারা। যদিও আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও কেন্দ্রের কাছে ছয় দফা দাবি রেখেছিলেন বিক্ষোভরত কৃষকরা। সেই দাবি মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনিকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত এবং গ্রেফতারের দাবি তুলেছিলেন কৃষকরা, যা মানা হয়নি। আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আইন প্রত্যাহারের ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের অনুরোধ করেছিলেন যাতে তারা আন্দোলন তুলে নেন। কিন্তু তখন কৃষকরা আন্দোলন বহাল রেখে ছিলেন। তাদের দাবি ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে বিল প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সময়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথায় বিশ্বাস করেননি কৃষকরা তাই আন্দোলন বজায় ছিল। কিন্তু এখন দোটানার কোনও জায়গা নেই তাই অবশেষে এই কৃষক আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হল।
কৃষক আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও কেন্দ্রীয় সরকার যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে বিরোধীদের দ্বারা। কংগ্রেস সহ সব বিরোধী দলের বক্তব্য ছিল যে আগামী কয়েক মাসে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে এবং তার দিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ তারা বুঝতে পেরেছে যে এই আন্দোলন জারি থাকলে বিজেপি ভোটে হেরে যেতে পারে। অনেকেই মনে করছেন যে বিধানসভা ভোট মিটে গেলে আবার হয়তো নতুনভাবে কৃষি আইন লাগু হতে পারে। তবে পুরোটাই এখন অনুমানের জায়গায় রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এই আইন প্রত্যাহার করে নিজেদের অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছে যা নিয়ে যথেষ্ট চর্চা চলছে। কেন্দ্রের দাবি ছিল, নিরাপত্তার স্বার্থে এই আইন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাতে আন্দোলন উঠে যায়।
ব্যাপক সমালোচনার শিকার হওয়ার পর কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, কৃষক আন্দোলনের আড়ালে ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছিল দেশ-বিরোধী শক্তি। এই আন্দোলনকে সামনে রেখে অনেকেই দেশ বিরোধী কার্যকলাপ করছিল, সন্ত্রাসের আবহ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছিল। সেই কারণেই এই আইন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরও জানান হয়েছিল, কৃষক আন্দোলনের নামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টাও করা হচ্ছিল, তাই দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই তিনটি আইন প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।