চুঁচুড়া: তৃণমূল ছাত্রপরিষদের হাতে মার খাওয়া কোন্নগর নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজের অধ্যাপক ডঃ সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে অভয় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ পর আজ কলেজে গিয়ে পা ধরে ক্ষমা চাইলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি৷ হাত জোড় করে অধ্যাপকের কাছে ক্ষমা চাইলেন দিলীপ যাদব৷ অধ্যাপক নিগ্রহের ঘটনায় যুক্ত থাকার ঘটনায় দুই তৃণমূল ছাত্র নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ ধৃতদের নাম বিজয় সরকার ও সন্দ্বীপ পাল৷
কলেজে অধ্যাপককে রাস্তায় ফেলে মারধরের ঘটনায় চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মমতা নিজেই অধ্যাপককে ফোন করে অভয় দেন৷ জানান, তিনি যেন আগের মতোই কলেজে যান৷ কলেজে যেতে কোনও সমস্যা হলে তিনি যান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন৷ এই ধরনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীও অধ্যাপকের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন৷ জানান, আগামী দিনে যাতে এমন কোনও ঘটনা না ঘটে, তার ব্যবস্থা তিনি করবেন৷
বুধবার তৃণমুল নেত্রীর নামে ‘জিন্দাবাদ’ ধ্বনি না দেওয়ায় অধ্যাপককে রাস্তায় ফেলে পাটাল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা৷ যদিও, অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের৷ তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের নেতারাই তাঁকে মারধো করে বলে থাকায় অভিযোগ দায়ের করছেন আক্রান্ত অধ্যাপক৷ পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করলেও পরে দায়ের হয় অভিযোগ৷ গোটা ঘটনায় ইতিমধ্যেই শিক্ষক মহলে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে৷
কোন্নগর নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজ৷ আজ ছিল এমএ বাংলার শেষ দিন৷ শেষ দিন উপলক্ষ্যে ছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে ছবি তুলছিলেন৷ অভিযোগ, ডিগ্রি কোর্সের ছাত্রীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূল ছাত্রপরিষদ৷ বিবাদ মেটাতে হস্তক্ষেপ করে বিভাগীয় প্রধান৷ উভয় পক্ষকে ডেকে বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করা হয়৷ উভয় পক্ষকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়৷ কিন্তু, ছাত্রপরিষদের তরফে ক্ষমা চাওয়া শর্ত হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর নামে জিন্দাবাদ ধ্বনি দিতে বলা হয়৷ এমএ পড়ুয়ারা প্রতিবাদ জানান৷ প্রতিবাদ জানাতেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে৷ বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ ছাত্রীদের নিয়ে বেরোনোর সময় সংঘর্ষ বেধে যায়৷ কলেজের অধ্যাপক ডঃ সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে বেধরক মারধোর করা হয় বলে অভিযোগ৷ তাঁকে কলেজের গেটেই ফেলে পেটানো হয়৷ এরপরই কলেজ চত্বরে ব্যপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে কোন্নগর থানার পুলিশ৷ তাঁরাই ওই অধ্যাপককে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা করান৷ এই হামলার পিছনে টিএমসিপির সদস্যরাই রয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রহত অধ্যাপক৷ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে টিএমসিপি৷
এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী৷ আজ বিকেল ডট কমকে বলেন, ‘‘অধ্যাপকের উপর দলীয় ছাত্র (দুষ্কৃতী)-দের পৈশাচিক আক্রমণের নিন্দার কোন ভাষা নেই। তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হোন সবাই। ভিডিও থেকে ছাত্র(দুষ্কৃতী)-দের চিহ্নিত করে কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে৷’’
মুর্শিদাবাদের শিক্ষক নেতা তন্ময় ঘোষ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘‘এই সরকারের নেত্রী মুখে শিক্ষকের সম্মান দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে শিক্ষকরা আক্রান্ত ও অসম্মানিত হয়ে চলেছেন৷ এটা মেনে নেওয়া যায় না৷ দোষীদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে ও শিক্ষাঙ্গনে বহিরাগত বখাটেদের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে৷’’