ঝাড়ুদার থেকে মেসিদের দুঃস্বপ্নের ‘খলনায়ক’, সৌদির কোচ রেনার্ডের জীবন এক কঠিন বাস্তব

ঝাড়ুদার থেকে মেসিদের দুঃস্বপ্নের ‘খলনায়ক’, সৌদির কোচ রেনার্ডের জীবন এক কঠিন বাস্তব

76c360a7ba3bda5b51e33d0cfe5a9b97

দোহা: বিশ্বকাপের শুরুতেই ঘটেছে অঘটন৷ মেসিদের হারিয়ে ম্যাচ জিতেছে সৌদি আরব৷ কিন্তু, এই জয়ের নেপথ্যে যে কারিগর রয়েছেন, তাঁর জীবন যেন এক সংগ্রামের অধ্যায়৷ 

আরও পড়ুন- যন্ত্রণায় চোখে জল নেইমারের, চোট পেয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেন ব্রাজিল অধিনায়ক?

ফ্রান্সের অ্যায়েক্স গ্রামে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম তাঁর। ছোট থেকে ফুটবলই তাঁর জীবন৷ ফুটবলকে জড়িয়েই বাঁচতে শিখেছিলেন হার্ভে রেনার্ড৷ তিনি জিনেদিন জিদানের একদা সতীর্থ৷ কিন্তু সংসারের বোঝা টানতে এক সময় ঝাড়ুদারের কাজ করতে হয়েছে তাঁকে৷ কাজ করেছেন বাসের কন্ডাক্টার হিসেবে। এহেন এক লড়াকু মানুষ ‘সাদা জামা’ গায়ে জড়িয়ে হয়ে উঠলেন আর্জেন্তিনার ত্রাস৷ ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন লিওনেল মেসির দেশকে হারিয়ে। 

কাপ জয়ের বর্ণময় স্বপ্নের জগৎ থেকে যিনি এক লহমায় আর্জেন্টিনাকে বাস্তবের রুক্ষ্ম  ভূমিতে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনলেন, যাঁর মগজাস্ত্রে  মাটিতে আছড়ে পড়লেন লিওনেল মেসিরা, ৫৪ বছরের সেই ফরাসি কোচ রেনার্ডের জীবন যে কর্কশ বাস্তবের মোড়কে ঢাকা। যেখানে উত্থানের চেয়ে পতন বেশি, সাফল্যের চেয়ে পাল্লা ভারী ব্যর্থতার।

ফ্রান্সের কান, স্ট্যাডে দ্য ভ্যালেরি, এসসি ড্রাগুইনান ক্লাবে ১৫ বছর ফুটবল খেলেছেন। তেমন ভাবে দাগ কাটতে পারেননি। বেশ কিছু অনামী ক্লাবেও কোচিং করিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও সাফল্য আসেনি। এক সময় মন কষ্টে ফুটবল থেকে দূরে সরে যান৷ সংসার চালাতে নেন সাফাইকর্মীর কাজ৷ পরে নিজের সাফাই সংস্থাও খোলেন রেনার্ড। কিন্তু ফুটবলের পাগলামি তাঁকে বারবার টেনে নিয়ে গিয়েছে সবুজ মাঠে।  
 

এর আগে বিশ্বকাপে সৌদি আরবের সাফল্য বলতে মরক্কো, বেলজিয়াম, মিসরের বিরুদ্ধে জয়। কিন্তু, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে শুরুতেই উলটপুরান৷ শুরুতেই বধ দু’বারের বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা। সৌজন্যে ডাকাবুকো কোচ হার্ভে রেনার্ড৷ তবে কোচ হিসাবে এর আগেও সাফল্য ছুঁয়েছেন রেনার্ড। দুটি ভিন্ন দেশের হয়ে আফ্রিকা কাপ অব নেশনস জিতেছিলেন এই ফরাসি কোচ। 

রেনার্ডের কোচিং কেরিয়ার শুরু হয়েছিল ফরাসি ক্লাব দ্রাগিনিয়াঁর সঙ্গে। পরে ইংল্যান্ডের চতুর্থ ডিভিশন ক্লাবের দায়িত্ব নেন। একদা জিদানের সতীর্থের ‘ম্যান ম্যানেজমেন্ট’ দক্ষতা হয়ে উঠেছিল সাজঘরে চর্চার বিষয়৷ চমকটা আসে জাম্বিয়ার কোচ হওয়ার পর। তাঁর দ্বিতীয় মরসুমেই কাপ অব নেশনসের ফাইনালে আইভরিকোস্টকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় জাম্বিয়া। এরপর আইভরিকোস্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর একই শিরোপা জেতেন হার্ভে রেনার্ড৷ 

সোমবার আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে প্রথমার্ধে সে ভাবে পাখা মেলতে পারেনি সৌদি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে রেনার্ডের মন্ত্রে যেন জেগে উঠেছিলেন সালে আল-শেহরি, সালেম আলদসরিরা৷ সেই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই পোস্টের নীচে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন গোলরক্ষক মহম্মদ আল-ওয়েস৷ তাঁর কোন কথা চাগিয়ে দিয়েছিল সৌদির ফুটবলারদের? প্রথমার্ধের পর সাজঘরে দাঁড়িয়ে সৌদির লড়াইয়ের কাহিনীটাই তুলে ধরেছিলেন ফরাসি কোচ৷ কীভাবে এই দলটা বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে, এই পথ পেরতে তারা কী ভাবে লড়াই করেছে, সে কথাটাই স্মরণ করিয়েছিলেন রেনার্ড৷ এর পর ১ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থাতে মাঠে নেমেই খেলার মোড় ঘুড়িয়ে দেন সৌদির ছেলেরা৷ কাতারের আরব্য রজনীতে তিনিই হয়ে ওঠেন শ্বেত জাদুকর!