এই বিশ্বকাপ কি এশিয়ার? সৌদি-জাপানে উদয়ে স্বপ্নভঙ্গ দুই শক্তিধর দেশের!

এই বিশ্বকাপ কি এশিয়ার? সৌদি-জাপানে উদয়ে স্বপ্নভঙ্গ দুই শক্তিধর দেশের!

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিশ্বকাপের শুরুতেই সৌদি আরব এবং জাপানের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হল বিশ্ব ফুটবলে সারা জাগানো দুটি দেশ আর্জেন্টিনা ও জার্মানিকে। এই দুটি দেশই অতীতে একাধিকবার বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে। সেখানে সৌদি আরব এবং জাপান কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীই নয় তাদের কাছে। কিন্তু খেলার মাঠের অঙ্কটা পাল্টে গেল। তাদের কিছুটা হালকা ভাবে দেখতে গিয়ে তার মাসুল দিল আর্জেন্টিনা ও জার্মানি। দুটি দেশই পরাজয় স্বীকার করেছে ২-১ গোলে। যেভাবে কাতার বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে সৌদি আরবের পর জাপানের সূর্যোদয় হল, তাতে এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে চিন্তা বেড়ে গেল তথাকথিত শক্তিশালী ফুটবল শক্তি হিসেবে পরিচিত ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলির। এখন প্রশ্ন এই দুটি খেলার ফল কি নিতান্তই অঘটন, নাকি যোগ্যতার ভিত্তিতেই তারা জয় পেয়েছে? ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই দুটি ম্যাচের ফলকে অঘটন বলে উড়িয়ে দিলে ভুল করা হবে। এর পিছনে একাধিক কারণ তুলে ধরছেন তাঁরা। 

উল্লেখ্য এই প্রথম কোনও বিশ্বকাপে এশিয়ার ছটি দেশ খেলছে। দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, জাপান, ইরানের পাশাপাশি এশিয়া গ্রুপ থেকে অস্ট্রেলিয়া মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এছাড়া আয়োজক দেশ হিসেবে খেলছে কাতার। মূলত ২০০২ সালের বিশ্বকাপ থেকে এশিয়ার দেশগুলির পারফরম্যান্স সবার নজর কাড়তে শুরু করে। সেই বিশ্বকাপ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সম্মিলিতভাবে আয়োজন করেছিল। দক্ষিণ কোরিয়া সেমিফাইনালেও যায়। ২০১০ বিশ্বকাপেও দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান নকআউট পর্বে পৌঁছে গিয়েছিল। এমনকী রাশিয়ায় হওয়া গত বিশ্বকাপেও দক্ষিণ কোরিয়া নকআউট পর্বে  পৌঁছে যায়। আর গতবারেও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে কাছে ২-০ গোলে হেরে জার্মানি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে এশিয়ার দেশগুলির শক্তি দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া রয়েছে আরও একটি বিশেষ কারণ। জার্মানির বিরুদ্ধে জাপানের দুই গোলদাতা রিতসু দোয়ান ও তাকুমা আসানো  জার্মানির লিগে খেলেন।

বুন্দেশলিগায় খেলার সুবাদে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ ক্লাবগুলির ফুটবলারদের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা তাঁদের রয়েছে। প্রায় দুই দশক ধরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ফুটবলাররা নিয়মিত ইউরোপের নামী দলগুলিতে খেলছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার পার্ক জি সং দীর্ঘদিন প্রথম একাদশের ফুটবলার হিসেবে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড খেলেছেন। বহু স্মরণীয় জয়ের সাক্ষী তিনি। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিয়ুঙ মিন বর্তমানে ইংল্যান্ডের টটেনহাম হটস্পারের হয়ে ধারাবাহিক ভাবে যে অসাধারণ ফুটবল খেলছেন, তাতে মোহিত গোটা বিশ্ব। তাঁর একটি অসাধারণ গোলের ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। এশিয়ার ফুটবলাররা ইউরোপের লিগগুলিতে খেলার জন্য তাঁদের পেশাদারিত্ব আগের থেকে বহু গুণে বেড়েছে। বেড়েছে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা। আর সেই কারণেই এশিয়ার দেশগুলি ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এছাড়া জুনিয়র লেভেল থেকে যেভাবে তাঁদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে তাতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, ইরান প্রভৃতি দেশগুলি ইউরোপ বা লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সাহস দেখাতে পারছে। দুঃখের কথা এই তালিকায় ভারত নেই। অথচ একটা সময় ভারতে এসে তৎকালীন ফিফা প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্লাটার ভারতীয় ফুটবলের ব্যাপক প্রশংসা করেছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেছিলেন ভারত এশিয়া ফুটবলের ‘ঘুমন্ত দৈত্য’। কিন্তু অন্য দেশগুলি জেগে উঠলেও ভারতের ঘুম ভাঙেনি। তবে জাপান ও সৌদি আরব যেভাবে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে তাতে ভারতেরও গর্ববোধ করার কথা। এমনকী ইংল্যান্ডের কাছে ছয় গোল খেলেও দুটি গোল করে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা করেছে ইরান। সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে এশিয়ার দেশগুলি নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছে প্রত্যেকেই। তবে কি এবারের বিশ্বকাপ এশিয়ার হয়ে উঠবে? হয়ত এমন কথা বলার সময় এখনই আসেনি। কিন্তু সেই সময় যে আর বেশি দূরে নেই সেই ইঙ্গিত দিয়ে দিল কাতার বিশ্বকাপের আসর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *