সেবার পেলেকে ছাড়াই কাপ জিতেছিল ব্রাজিল! এবার কি পারবে নেইমারহীন ব্রাজিল?

সেবার পেলেকে ছাড়াই কাপ জিতেছিল ব্রাজিল! এবার কি পারবে নেইমারহীন ব্রাজিল?

নিজস্ব প্রতিনিধি: লবিশ্বকাপ জ্বরে ভুগছে গোটা বিশ্ব। ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স দেশগুলিকে নিয়ে চর্চা এখন তুঙ্গে। কোন দেশ কাপ জিতবে, সেরা খেলোয়াড় হয়ে গোল্ডেন বল কে পাবেন, সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে গোল্ডেন বুট কে পাবেন, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে চায়ের কাপে তুফান তুলছেন কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত জুড়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের নিরিখে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় দুটি দেশ হল ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। এই দুটি দলের সমর্থক সবচেয়ে বেশি। আর এই দুই দলের নয়নের মণি নেইমার এবং মেসিকে ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা কি পর্যায়ে গিয়েছে, সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু মাঠে নেমে মেসি যখন আর্জেন্টিনার হয়ে ফুল ফোটাতে শুরু করেছেন ঠিক তখনই প্রথম ম্যাচ খেলে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছেন নেইমার। ইতিমধ্যেই ব্রাজিল নকআউট পর্বে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু নেইমার ছাড়া সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচে ব্রাজিলকে অনেকটাই নিষ্প্রভ দেখিয়েছে। ম্যাচ জিতলেও ব্রাজিলের খেলা সেভাবে খুশি করেনি  ফুটবলপ্রেমীদের। তাই প্রশ্ন, নেইমার-হীন ব্রাজিলকে কাপ জেতাতে পারবেন দলের অন্য দুই প্রাণভোমরা রিচার্লিসন-ভিনিসিয়াসরা? সেক্ষেত্রে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরছেন ৬০ বছর আগেকার স্মৃতি।

১৯৬২ সালের বিশ্বকাপের আসর বসেছিল চিলিতে। সেবার ব্রাজিলের প্রধান ভরসা ছিলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। কারণ তার আগে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে মাত্র ১৬ বছরের পেলে ব্রাজিলের  কাপ জয়ে অন্যতম প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। সকলেই মনে করেন সেই বিশ্বকাপ ব্রাজিলকে জিতিয়েছিলেন পেলেই। পেলে না থাকলে সেবার ব্রাজিলের কাপ জিততে বেশ অসুবিধা হতো বলে মনে করেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। এরপর ১৯৬২ সালে চিলি বিশ্বকাপে পেলের উপর ভরসা করেই ব্রাজিল খেলতে নামে। ততদিনে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের তকমা পেয়ে গিয়েছিলেন পেলে।  প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত শুরু করেন পেলে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে চেকোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে এমন চোট পান টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হয় তাঁকে। বিপক্ষের  ডিফেন্ডারদের কড়া ট্যাকল তো ছিলই, সেই সঙ্গে হ্যামস্ট্রিংয়ের যন্ত্রণা পেলেকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিয়েছিল। কিন্তু তাতে অবশ্য ব্রাজিলকে কাবু করা  যায়নি। গ্যারিঞ্চা আর ভাভা ব্রাজিলকে সুদক্ষভাবে নেতৃত্ব দিতে থাকেন। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল-সহ প্রত্যেকটি ম্যাচে এই যুগলবন্দির খেলা সবাইকে মোহিত করে। মূলত তাঁরাই ব্রাজিলকে ফের বিশ্বকাপ  জিতিয়ে দেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৩-১, সেমিফাইনালে চিলিকে ৪-২ ও ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দেয় ব্রাজিল।  মজার কথা ব্রাজিলের এই দশটি গোলের মধ্যে ভাভা ও গ্যারিঞ্চা জুটি আটটি গোল করেছিলেন।  সকলেই সেই বিশ্বকাপকে ভাভা-গ্যারিঞ্চার বিশ্বকাপ বলে আজও উল্লেখ করেন।

তাই প্রশ্ন, ৬০ বছর পর নেইমার-হীন ব্রাজিলকে কি ফাইনালে টেনে তুলে নিয়ে যেতে পারবেন রিচার্লিসন-ভিনিসিয়াসরা? কারণ নেইমারকে বাদ দিলে এই দু’জনের উপর ব্রাজিল সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে থাকে। বিশ্বকাপের মূল পর্বে ওঠার আগে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে তাঁদের যুগলবন্দি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁরা কি ছয় দশক আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পারবেন? পারবেন ব্রাজিলকে ফাইনালে তুলে কাপ জিতিয়ে আনতে? এ প্রশ্ন ঘুরছে ব্রাজিল সমর্থকদের মুখে মুখে। সবচেয়ে বড় কথা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পেলে এখন শয্যাশায়ী। কিন্তু তিনিও টিভির পর্দায় চোখ রেখে ব্রাজিলের খেলা দেখছেন। আর নেইমারের অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই ৬০ বছর আগে নিজের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে পেলের। তাঁর পুরনো দুই সতীর্থ গ্যারিঞ্চা ও ভাভা প্রয়াত হয়েছেন বহু বছর হয়ে গিয়েছে। তাঁদের কথা কি আজ পেলের বড্ড বেশি মনে পড়ছে? সকলেই এটা মানেন যে ইতিহাস বারবার ফিরে ফিরে আসে। তাই নেইমার-হীন ব্রাজিলের হলুদ-সবুজ জার্সির ঝড় কাতারের সবুজ গালিচায় নিখুঁত তুলির টানে রিচার্লিসন-ভিনিসিয়াসরা কতটা ফোটাতে পারেন, তার উপর ব্রাজিলের কাপ জেতা যে অনেকটাই নির্ভর করছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + 11 =