চায়ের দোকানের কর্মী থেকে ফুটবল সম্রাট! কীভাবে বদলে গেল বস্তির ছেলে পেলেন জীবন?

চায়ের দোকানের কর্মী থেকে ফুটবল সম্রাট! কীভাবে বদলে গেল বস্তির ছেলে পেলেন জীবন?

fb12c35f0afc734219edb8c3e004abb3

ব্রাসিলিয়া: পেলে না মারাদোনা? সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? এনিয়ে বিতর্ক আছে অনেক… ফুটবল প্রেমীরা বলেন, ব্রাজিলের কালো মানিক পেলে যদি হয় ফুটবল সম্রাট, মারাদোনা তবে রাজপুত্র৷ বস্তি থেকে উঠে আসা এক ছেলের ফুটবলের জাদুকর হয়ে ওঠার পথটা কিন্তু এতটাও সহজ ছিলনা। ছোটবেলায় ছিলেন চায়ের দোকানের কর্মচারী৷

দরিদ্র পরিবারের প্রথম সন্তান হওয়ায় পরিবারের অভাব অনটন মেটানোর দায়িত্ব চেপেছিল ছোট থেকেই। কখনও চায়ের দোকানে কাজ, রেলস্টেশন ঝাড়ু দেওয়া, এমনকি জুতো পরিষ্কারের কাজও করেছিলেন পেলে৷ ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর, ব্রাজিলের ত্রেস কোরাকোয়েস শহরের এক বস্তিতে জন্মগ্রহণ করেন ফুটবল সম্রাট। জন্মের পর বাবা-মা তার নাম রাখেন ‘এডসন অ্যারানটিস দো নাসিমেন্ট’। সেই নাম বদলে হয়ে গেল ‘পেলে’।   

ছেলেবেলা থেকেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন পেলের। একদিন সেই স্বপ্ন সত্যি হলো… ফুটবল খেলে বিশ্বজয় করল গরীব ঘরের ছেলেটা… ফুটবলে সহজাত প্রতিভা তো ছিলই, ব্রাজিলের আর দশটা সাধারণ ছেলের মতোই গলির ফুটবল ছিল সর্বক্ষণের সঙ্গী।  যফুটবল কেনার টাকা ছিল না বলে মোজার ভেতরে খবরের কাগজ ঠেসে ফুটবল বানিয়ে অনুশীলন করতেন। ধীরে ধীরে গলির ফুটবলেই প্রতিভা ফুটে ওঠে পেলের। সেই প্রতিভা একদিন চোখে পড়ে স্যান্টোসের গ্রেট ওয়ালডেমার ডি ব্রিটোর।  এরপরই ঘুরে যায় জীবনের মোড়৷

 
গলি থেকে উঠে সোজা স্যান্টোসের ‘বি’ টিমে যোগ দেন পেলে। নিজের সহজাত প্রতিভা দেখিয়ে এক বছরের মধ্যেই স্যান্টোসের মূল দলে নিজের জায়গা করে নেন । প্রথম মরসুমেই সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড অর্জন করেন। প্রতিভা প্রকাশ পেতেই বস্তির সেই ছেলেটিকে নিয়ে ইউরোপের বড় বড় ক্লাব কাড়াকাড়ি শুরু করে দেয়। ব্রাজিলের হয়ে পেলের আন্তর্জাতিক ফুটবল কেরিয়ার শুরু হয় চিরপ্রতিদ্বন্ধী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই, সেই ম্যাচে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার কাছে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে গেলেও প্রথম ম্যাচেই বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেন পেলে। ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে গোল করে অর্জন করেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ড।

 

তাঁর বিশ্বকাপে অভিষেক ১৯৫৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে। সেবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল করে ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বনে যান ১৭ বছর বয়সী পেলে। এভাবে একে একে- ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ এর বিশ্বকাপে খেলেন পেলে। এর মধ্যে ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেন। তবে পেলে তিনবার বিশ্বকাপ জয় করেছেন নাকি দুইবার? তা নিয়ে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কিছুটা বিতর্ক ছিল। কারণ, ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে ২য় ম্যাচেই গূরুতর চোট পেয়ে বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে যান তিনি। ১৯৯৭ সালে, ফিফা বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁকে ১৯৬২’র বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ঘোষণা করলে সেই বিতর্ক থামে। ফুটবল জীবনে ১৩৬৩ ম্যাচে ১২৮৩টি গোল করেছেন পেলে । ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে ভাস্কো-দা-গামা ক্লাবের বিপক্ষে ব্রাজিলিয়ান লিগের এক ম্যাচে হাজারতম গোল করেন তিনি।

সেদিন পুরো ব্রাজিল মেতে উঠেছিল উৎসবে। কোনো একক খেলোয়াড়ের গোল করার ব্যাপারে এটিই ছিল বিশ্বরেকর্ড। ক্লাব ফুটবলে পেলের শুরু এবং শেষ স্যান্টোসে। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ বছরে জিতেছেন ব্রাজিলিয়ান লীগ, কাপ আর আন্তর্জাতিক ক্লাব টুর্নামেন্টের ২৭টি ট্রফি। খেলার মতো ফুটবল জাদুকরের ব্যক্তিগত জীবনও ছিল রঙিন। একাধিকবার প্রেম এসেছে জীবনে-১৯৬৬ সালে রোজমেরিকে বিয়ে করেন পেলে। এক ছেলে এডসন এবং দুই মেয়ে ক্রিস্টিনা এবং জেনিফারের জন্ম হয়। ১৬ বছর পর সেই সম্পর্কে ইতি টানেন ফুটবল কিংবদন্তি। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলিয়ান মডেল জুজার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছেন। ১৯৯৪ সালে সাইকোলজিন্ট অ্যাসারিয়া লেমসের সঙ্গে দ্বিতীয়বার ঘর বাঁধেন পেলে। শেষ পর্যন্ত সে ঘরও টেকেনি।

ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন অনেক আগে… কিন্তু, ফুটবল তার রাজা’কে অবসর দেয়নি… বিশ্বের আনাচে-কানাচে ফুটবলপ্রেমীদের মুখে মুখে আজও ঘুরপাক খায় পেলের নাম।