কলকাতা: তিনি ছিলেন মাঠের রাজা৷ তবে মাঠের বাইরের জীবনও কম রঙিন ছিল না ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা পেলের৷ তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট৷ ছিল একাধিক অবৈধ সম্পর্ক৷ সেই সকল সম্পর্ক থেকে সন্তানও হয়েছিল তাঁর৷ কিন্তু তিনি নিজেই জানতেন না সে কথা৷ জেনেছিলেন অনেক পড়ে৷ বর্ণময় জীবনের অখ্যান এখানেই শেষ নয়৷ কেরিয়ারের শীর্ষ থাকার সময় একাধিক মহিলা ভক্ত তাঁর শয্যা সঙ্গীনি হয়েছিলেন৷ যাঁর পায়ের জাদুতে লেখা হয়েছিল একটা স্বর্ণযুগ, যিনি নিজের দেশ ও ক্লাবের প্রতি ছিলেন দায়বদ্ধ, সেই পেলেই কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে দায়বদ্ধ থাকতে পারেননি৷ যদিও তাঁর কথায়, ‘‘সবটাই সততা৷ আমার বেশ কয়েকটি সম্পর্ক ছিল, যাদের থেকে সন্তানও হয়েছিল৷ কিন্তু আমি পরে জানতে পেরেছিলাম৷’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘আমার প্রথম স্ত্রী আমার প্রথম গার্লফ্রেন্ড আমার বিষয়ে সবটাই জানত৷ আমি কাউকে কোনওদিন মিথ্যা বলিনি৷’’
ফুটবল সম্রাট পেলের প্রথম স্ত্রীর নাম রোজমেরি দস রেইস চোলবি। ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রোজমেরির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কিংবদন্তী৷ তবে সে বিয়ে টেকেনি৷ বিয়ের ১৬ বছর পর, ১৯৮২ সালে তাঁদের ডিভোর্সও হয়ে যায়। পেলে ও তাঁর প্রথম স্ত্রী রোজমেরির তিন সন্তান রয়েছে। তাঁরা হলেন, এডিনহো, কেলি ক্রিস্টিনা আরন্তেস দ নাসিমেন্টো এবং জেনিফার নাসিমেন্টো।
প্রথম স্ত্রী-র সঙ্গে বিচ্ছেদের ১২ বছর পর, দ্বিতীয় বার আংটি বদল করেন ফুটবল সম্রাট৷ তাঁর দ্বিতীয় ছিলেন স্ত্রী জনপ্রিয় ব্রাজিলিয়ান গায়িকা অ্যাসিরিয়া নাসিমেন্টো। বিয়ের ১৪ বছর পর তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ পেলে এবং অ্যাসিরিয়া নাসিমেন্টোর দুই যমজ সন্তান রয়েছে। তাঁদের নাম জোশুয়া নাসিমেন্টো এবং সেলেস্তে নাসিমেন্টো। এছাড়াও রয়েছে আরও দুই অবৈধ সন্তান৷
কেলি ক্রিস্টিনা আরন্তেস ডো নাসিমেন্টো- কেলি হলেন পেল এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী রোজমেরির প্রথম সন্তান৷ ১৯৬৭ সালের ১৩ জানুয়ারি জন্ম হয় তাঁর৷ ছোট থেকেই বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কেলি৷ বড় হওয়ার পর বোনেদের সঙ্গে মিলে নাসচিমেন্টো ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন৷ যার লক্ষ্য ছিল খেলাধুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা৷
ফ্লাভিয়া আরন্তেস ডো নাসিমেন্টো- পেলের দ্বিতীয় সন্তান ফ্লাভিয়া তাঁর বিবাহবহির্ভূত সন্তান৷ প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের মাঝেই সাংবাদিক লেনিতা কুর্তজের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়েছিলে কিংবদন্তী৷ ফ্লাভিয়া সেই ভালোবাসারই সন্তান৷ বর্তমানে ব্রাজিলের একটি বড় হাসপাতালে অ্যাডভাইজারি কাউন্সেলর হিসাবে কর্মরত রয়েছেন ফ্লাভিয়া৷
সান্দ্রা রেজিনা মাচাদো নাসিমেন্টো- আক্ষরিক অর্থে পেলের প্রথম সন্তান হলেন সান্দ্রা৷ প্রথম বিয়ের আগে বাড়ির এক পরিচারিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ব্রাজিলিয়ান এই তারকার৷ সালটা ১৯৬৩৷ সেই সম্পর্ক থেকেই জন্ম সান্দ্রা মাচাদোর৷ কিন্তু, সেই সন্তানকে স্বীকৃতি দিতে চাননি পেলে৷ পিতৃ পরিচয় পেতে বহু বছর আইনি লড়াই চালান সান্দ্রা৷ এমনকি নিজেকে পেলের সন্তান প্রমাণ করার জন্য ডিএনএ টেস্টও করান তিনি৷ তবে প্রথমে ডিএনএ স্যাম্পেল দিতে রাজি ছিলেন না ব্রাজিলের এই কিংবদন্তী ফুটবলার৷ পরে নিজের এই লড়াইয়ের কথা দু’মলাটে বন্দী করেছিলেন সান্দ্রা৷ সেখানে তিনি লিখেছিলেন , ‘দ্য ডটার পেলে নেভার ওয়ানটেড৷’ ১৯৯৩ সালে প্রমাণিত হয় তিনি পেলের কন্যা৷ ১৯৯৬ সালে তিনি বাবার পদবী গ্রহণ করেন৷ ২০০৬ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান সান্দ্রা৷
এডিনহো “এডসন” আরান্তেস ডো নাসিমেন্টো- এডিনহো হলেন পেলের চতুর্থ সন্তান এবং প্রথম পুত্র সন্তান৷ ১৯৭০ সালের ২৭ অগাস্ট তাঁর এবং রোজমেরির কোলে আসেন এডিনহো৷ ছেলের ডাকনাম দেন এডসন, জন্মের পর পেলেকে এই নামেই ডাকত তাঁর পিতা৷ এডিনহো ছিলেন সকার প্লেয়ার৷ ১৯৯৯ সালে তিনি পেশাদার খেলা থেকে অবসর নেন৷
জেনিফার চোলবি আরান্তেস ডো নাসিমেন্টো- তিনবার বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলারের পঞ্চম সন্তান হলেন জেনিফার৷ ১৯৭৮ সালে রোজমেরির কোলে আসেন তিনি৷ বাবা এবং বাকি ভাই বোনেরা খ্যাতির শিখরে থাকলেও, আড়ালে থাকতেই ভালোবাসেন তিনি৷ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্যও পাওয়া যায় না৷
জোশুয়া আরান্তিস লাসিমেন্টো এবং সেলেস্তে নাসিমেন্টো- ১৯৯৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় স্ত্রী অ্যাসিরিয়া নাসিমেন্টোর সঙ্গে যমজ সন্তান হয় পেলের৷ একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান হয় তাঁর৷ জোশুয়া এবং সেলেস্তে হলেন পেলের ষষ্ঠ এবং সপ্তম সন্তান৷ জোশুয়া সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখলেও, জানা জায় তিনি একজন ফুলবল খেলোয়ার৷ তাঁর যমজ বোন সেলেস্তাও দাদার মতো নিজেকে আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন৷ খুব কমই দেখা যায় দুই ভাইবোনকে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>