ইউক্রেনে পুতিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় কূটনৈতিক জয় মোদীরই

ইউক্রেনে পুতিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় কূটনৈতিক জয় মোদীরই

dd7c3452b23fc25cd116b07f576e6241

নয়াদিল্লি: রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাতের দশম দিনে এসে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে মস্কো৷ আজভ সাগরের তীরের বন্দর শহর মারিউপোলের বাসিন্দাদের দেশ ছাড়ার সুযোগ দিয়ে সাময়িক ভাবে এই ঘোষণা করে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক৷ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে আরও কিছু শহরে৷ রাশিয়ার এই যুদ্ধ বিরতিতে আদতে কূটনৈতিক জয় ভারতের৷ যুদ্ধ আবহে মস্কোর সঙ্গে ক্রমাগত আলোচনা চালিয়ে গিয়েছে নয়াদিল্লি৷ সেটাই রুশ  পদক্ষেপের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷ 

আরও পড়ুন- যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে দেশে ফেরা মেডিক্যাল পড়ুয়াদের জন্য বড় ঘোষণা NMC-র

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সেনা আগ্রাসন শুরু হওয়া ইস্তক নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে ভারত৷ যুদ্ধ প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি নয়াদিল্লি৷ শান্তির বার্তা প্রচার করা ছাড়া এক্ষেত্রে অন্য কোনও ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি ভারতকে৷ কোনও পক্ষের হয়ে সওয়ালও করেনি। কারও বিরুদ্ধাচরণও করেনি। তবে গোড়া থাকেই যুদ্ধের বদলে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে মোদী সরকার৷ 

এদিকে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে আটকে পড়েন প্রায় ২০ হাজার ভারতীয়৷ যাঁদের অধিকাংশই ডাক্তারি পড়ুয়া৷ তাঁদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনাটা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়৷ ভারতীয় পড়ুয়াদের দেশে ফেরানোর জন্য চাপ বাড়তে থাকে কেন্দ্রের উপর৷ সমস্যা সমাধানে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে নয়াদিল্লি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দফায় দফায় টেলিফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।  এর পরেই মস্কোর তরফে ঘোষণা করা হয়, ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়রা যদি সেদেশের পূর্ব সীমান্ত পার করে রাশিয়ায় ঢুকে পড়তে পারেন, তাহলে সেখান থেকে তাঁদের নিরাপদে ভারতে ফেরানোর বন্দোবস্ত করা হবে৷ কোনও রকম বাধা ছাড়াই তাঁরা দেশে ফিরতে পারবেন৷ 

কূটনৈতিক স্তরে নিশ্চিতভাবেই ভারতের কাছে এটি ছিল সাফল্যের প্রথম ধাপ। কারণ, যুদ্ধ বাধার পর থেকে কার্যত বদ্ধভূমি হয়ে ওঠে পূর্ব ইউক্রেন৷  তবে সেখানে কিন্তু ভারতীয়রা ছিলেন সুরক্ষিত! এর পর আজ শনিবার ভারতীয় সময় সকাল ১২টা নাগাদ পাঁচ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে রাশিয়া। বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিক, বিদেশি নাগরিক, মহিলা, শিশু, প্রবীণদের ইউক্রেন থেকে বের করে আনা যাবে। দেখতে গেলে এতদিন আলোচনার মাধ্যমে এটাই চাইছিল ভারত৷ রাশিয়ার এই পদক্ষেপ ভারতের কাজ অনেকটাই সহজ করে দিল। এর ফলে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরও দ্রুত ভারতীয়দের উদ্ধার করতে পারবে নয়াদিল্লি৷ 

রাশিয়ার সাময়িক যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্ব কম নয়। কারণ তাঁর সঙ্গে পুতিনের সখ্য রয়েছে৷ এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন রুশ রাষ্ট্রদূত। তাঁর দাবি ছিল, নয়াদিল্লি সরাসরি মস্কোর সঙ্গে কথা বললে হয়তো যুদ্ধের পথ এরিয়ে যেতে পারে রাশিয়া৷ সম্পূর্ণ যুদ্ধ বন্ধ না হলেও, যুদ্ধবিরতিটুকুও ভারতের কাছে একটা বড় সুযোগ।

এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে অবশ্য রাশিয়ার নিজস্ব স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে৷ কারণ যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকেও সমালোচনা শুনতে হচ্ছে৷ যুদ্ধবাজের তকমা লেগেছে রাশিয়ার গায়ে৷ সেই তকমা ঝেড়ে ফেলতেই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে৷ আর এই সিদ্ধান্তে নিজেদের মানবিক দিকটিও তুলে ধরতে চাইছে মস্কো। ইউক্রেনকে কাঠগড়ায় তুলে বোঝাতে চেয়েছে, রাশিয়া যুদ্ধ চায় না৷ কিন্তু কিয়েভই একগুয়ে মনোভাব বজায় রেখেছে৷