ভারতে হকি বিশ্বকাপের আসর, নবীন পট্টনায়কের সুদূরপ্রসারী চিন্তায় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন হরমনপ্রীতরা!

ভারতে হকি বিশ্বকাপের আসর, নবীন পট্টনায়কের সুদূরপ্রসারী চিন্তায় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন হরমনপ্রীতরা!

কলকাতা:  আগামী নভেম্বরে ভারতে বসতে চলেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। এখন থেকেই তা নিয়ে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ তুঙ্গে। কিন্তু একপ্রকার নিঃশব্দে প্রচারের আলোর বাইরে থেকে ওড়িশায় শুরু হল বিশ্বকাপ হকি প্রতিযোগিতা। দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের ক’জন ভাল করে জানেন এই বিশ্বকাপের কথা? প্রথম খেলায় ভারত শক্তিশালী স্পেনকে হারিয়ে পরের ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ম্যাচের জন্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ হকিকে নিয়ে যে ন্যূনতম উন্মাদনা আশা করা গিয়েছিল তা দেখা যাচ্ছে না। আসলে ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ক্রিকেটই যেন সব কিছু। তাই ভারতে খেলাধুলোর ছবিটা বলছে ‘ইট ক্রিকেট, স্লিপ ক্রিকেট, ড্রিম ক্রিকেট’। ভারতের হয়ে মেগা ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলিতে কেউ অসাধারণ খেললে সেই ক্রিকেটার রাতারাতি দেশনায়কের সম্মান পেয়ে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য খেলাধুলোর ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায় না। বস্তুত ক্রিকেট অন্য খেলাকে অনেকটাই যে অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখেছে সেটা স্পষ্ট। কিন্তু তার মধ্যেও ভারতীয় হকিকে আজ যতটা উজ্জ্বল লাগছে তার জন্য বড় কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। সম্পূর্ণ প্রচারের আলোর বাইরে থাকা এই মানুষটি নিঃশব্দে ভারতীয় পুরুষ ও মহিলা হকি দলের জন্য কাজ করে চলেছেন। ৪১ বছর পরে ভারত অলিম্পিক হকিতে ফের পদক জিতেছে। তার জন্য ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর অবদান যে কতটা রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। 

এ প্রসঙ্গে ভারতের পুরুষ ও মহিলা হকি দলের প্রতি ওড়িশা সরকারের দায়বদ্ধতার কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। ২০১৮ সালে ভারতীয় হকি দলের উপর থেকে স্পনসরশিপ তুলে নেয় সাহারা। সেই সময় ওড়িশা সরকার হকি দলকে স্পনসর করার কথা ঘোষণা করে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে তারা হকি দলকে স্পনসর করার চুক্তি করে। সেই প্রথম কোনও রাজ্য সরকার  সরাসরি কোনও খেলাকে স্পনসর করল। এর ফলও হাতেনাতে পায় ভারত। গত অলিম্পিকে ভারতের পুরুষ হকি দল ব্রোঞ্জ পদক জেতে। আর মহিলা দল তুল্যমূল্য লড়াই করে চতুর্থ স্থান পায়। সেই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও দশ বছর স্পনসরশিপের মেয়াদ বাড়িয়েছে ওড়িশা সরকার। নবীন পট্টনায়েক বুঝতে পেরেছিলেন পেশাদার বিদেশি কোচ ও উন্নত মানের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে, হকি খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ মানের ট্রেনিং ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে পারলে সাফল্য আসতে বাধ্য। আর বাস্তবে হয়েছেও তাই। 

১৯৭৫ সালে ভারত বিশ্বকাপ হকি টুর্নামেন্টে জয় পেয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ২-১ গোলে হারিয়ে। সেই ম্যাচে জয়সূচক গোল করে রাতারাতি দেশনায়কের সম্মান পেয়েছিলেন কিংবদন্তি হকি তারকা ধ্যানচাঁদের পুত্র অশোক কুমার। আজ পর্যন্ত ওই একবারই বিশ্বকাপ হকি টুর্নামেন্টে জয়লাভ করেছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে ওড়িশায় শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ হকি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় স্টেডিয়াম-সহ যাবতীয় পরিকাঠামো নির্মাণ করেছে ওড়িশা সরকার। যেভাবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বিশ্বকাপের জন্য মাঠ ও স্টেডিয়াম তৈরি করেছে ওড়িশা সরকার তার জন্য কোনও প্রশংসাই যেন যথেষ্ট নয়। ভারতীয় দলের অস্ট্রেলিয় কোচ গ্রাহাম রিড গোটা বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 

তাঁর কথায়,  ভুবনেশ্বর, রাউরকেল্লার স্টেডিয়াম ও সামগ্রিক আয়োজন অভূতপূর্ব। মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে যে কাজ সরকার করেছে তা অভাবনীয়। অসাধারণ অ্যাস্ট্রোটার্ফ নির্মিত হয়েছে এখানে।

প্রথম ম্যাচে স্পেনকে ২-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছেন হরমনপ্রীতের নেতৃত্বে ভারতীয় খেলোয়াড়রা। তাই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ভারতের হকিপ্রেমীরা। আর ভারতীয় হকিতে পেশাদারিত্ব এনে নতুন করে সেই স্বপ্ন দেখিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। গত মরশুমে ভারত ৬২টি গোল করেছিল বিভিন্ন মিলিয়ে, যা বিশ্বের সব দেশকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও অদ্ভুতভাবে দেশের তামাম মিডিয়া হকি নিয়ে সেভাবে প্রচার করছে না। যথারীতি মিডিয়ার ফোকাসে রয়ে গিয়েছে সেই ক্রিকেটই। আগামী দিনে এই অবস্থার পরিবর্তন হয় কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × three =