আগরতলা: বসন্তের চৈত্র মাসের দাবদাহ গরমে ডাব বিক্রেতারা ডাব নিয়ে হাজির বাজারে। এমনই এক দৃশ্য পরিলক্ষিত হল ত্রিপুরা তেলিয়ামুড়ার বিভিন্ন বাজার এলাকা থেকে। গরম না পড়তে পড়তেই একটা হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ জনমানসের। সে যাই হোক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারনেই হোক অথবা আধুনিক সভ্যতার আস্ফালনেই হোক এই সময়ের মধ্যে কিন্তু গরমের দাপটটাই বেশি থাকে। স্বভাবতই ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের জীবনযাত্রাও পরিচালিত হয়। আর এই জীবনযাত্রা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজেদের সুস্থতার তাগিদেই হউক অথবা তেস্টা মেটানোর প্রয়োজনেই হউক গ্রাম থেকে শহর প্রায় সর্বত্রই ডাবের সুস্বাদু জলের চাহিদা একটু অন্যরকম থাকে।
সবুজ শহর তেলিয়ামুড়াতে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই ডাবের জলের একটা বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণপুর, ঘিলাতলী সহ চাকমাঘাট, খাসিয়ামঙ্গল ইত্যাদি জায়গায় এক সময় বিপুল পরিমাণে নারিকেল গাছের সমারোহ ছিল। এর ফলে স্বভাবতই প্রচুর পরিমাণে ডাবের যোগান তেলিয়ামুড়াতে ছিল। প্রাচীন মানুষরা আজও বলে থাকেন তেলিয়ামুড়ার সুস্বাদু ডাবের জলের সাথে তুলনা মেলা ভার। এরকমই এক প্রাচীন ডাব বিক্রেতার সাথে কথা বলতে গিয়ে জানা গেছে দশকের পর দশক ধরে তিনি এই ব্যবসার সাথে যুক্ত আছেন। আক্ষেপের সাথে বলছেন, ডাবের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বাজারে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মীসহ পথচলতি সাধারণ মানুষ কিংবা ব্যবসায়ীরা সবার মধ্যেই রয়েছে ডাবের নিদারুণ চাহিদা। আর এই গরমের মধ্যে যখন ডাবের চাহিদা যে বাড়ছেই এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
কিন্তু চতুর্দিকে ফলন কমে যাওয়ায় বা যোগান কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী ডাব বাজারে যোগান দেওয়া যাচ্ছেনা। স্বভাবতই এক সময়ে ডাব ১০ থেকে ১৫ টাকা করে তেলিয়ামুড়া শহরে বিক্রি হতো, গত তিন চার বছর আগেও একই ছবি ছিল। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অনায়াসে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে ডাব। সমস্ত চাষই হচ্ছে কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা থাকা সত্ত্বেও এই লাভজনক নারিকেল চাষ কেউ করছেন না৷ যার ফলে আজকে বাজারে ডাবের জলের প্রচন্ড চাহিদা সত্ত্বেও ডাবের যোগান ততটা দেওয়া যাচ্ছে না। আর এর ফলেই ডাবের দাম হু হু করে বাড়ছে।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ডাবের জলের ব্যবসা করে বা ডাবের ব্যবসা করে কতটা লাভের মুখ দেখছেন? প্রতিবেদক এই প্রশ্নের জবাবে বলতে দ্বিধা করেননি৷ এই সময়ের মধ্যে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ডাবের ক্রয় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, আর ডাবের চাহিদা থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় সেই লাভটা ততটা হচ্ছে না। এ থেকে উত্তরণের কোনো উপায় আছে কি? এই প্রশ্নের জবাবে পঞ্চাশোর্ধ ডাব বিক্রেতার সরাসরি উত্তর, যদি সবাই মিলে আবারো তেলিয়ামুড়া মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে বাণিজ্যিকভাবে নারিকেল চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তাহলে একদিকে যেমন যারা নারিকেলের চাষ করবেন বাণিজ্যিকভাবে উপকৃত হবেন তেমনি আমাদের মত যারা ডাব বিক্রেতা আছে তারাও দুটো পয়সার মুখ দেখতে পাবেন, ঠিক তেমনি গরমের দিন হোক কিংবা শরৎকাল এই হোক ডাবের চাহিদা সাধারণ মানুষরা মেটাতে পারবেন।অর্থাৎ সবমিলিয়ে বলা চলে তেলিয়ামুড়া মহকুমা জুড়ে ডাবের জলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে কিন্তু চাহিদার তুলনায় যোগানের সংখ্যাটা কম হওয়ায় বর্তমান সময়ে ডাবের দাম অগ্নিমূল্য।