ময়দানের ‘কালো দিন’ ১৬ আগস্ট, যন্ত্রণা আজও রয়ে গিয়েছে

ময়দানের ‘কালো দিন’ ১৬ আগস্ট, যন্ত্রণা আজও রয়ে গিয়েছে

কলকাতা: ৪৩ বছর আগের এই দিনটার কথা মনে পড়লে এখনও কেঁদে ওঠে বাঙালি তথা ভারতীয় ফুটবল প্রেমীর মন। কলকাতা লীগের ডার্বি ম্যাচকে কেন্দ্র করে যে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটেছিল তার যন্ত্রণা আজও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আপামর ফুটবল প্রেমী মানুষকে। মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের সেই দিন আজ কলকাতা তথা ভারতীয় ফুটবলের জন্য ‘কালো দিন’ হিসেবেই পরিচিত। ১৬টি তরতাজা প্রাণ সেদিন চলে গিয়েছিল ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়াম থেকে। সেই ম্যাচে এমন কিছু ঘটেছিল যার জন্য এখনও বুক কেঁপে ওঠে অনেকের। আজও ডার্বি ম্যাচ আসলে অনেকের ভয় হয়। 

দেশের দুই সেরা ক্লাব মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল। তাদের ডার্বি ম্যাচের ইতিহাস কী তা নতুন করে বলার নয়। এই দুই দল নিয়ে বাঙালির গর্বের শেষ নেই। আবার এই ম্যাচ ঘিরে বাঙালি যে দুই ভাগও হয়ে যায় সেটাও সত্যি। ১৯৮০ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে চির-প্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ ছিল। সেই ডার্বি ম্যাচের দিনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়। দুই দলের সমর্থকদের উন্মত্ত সংঘর্ষে পদপিষ্ট হয়ে ১৬ জন অকালে মারা গিয়েছিলেন। কলঙ্কিত হয়েছিল কলকাতার ফুটবল ময়দান। ওই ডার্বি ম্যাচকে কেন্দ্র করে কার্যত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল ফুটবল মাঠে। 

ওই ম্যাচের প্রথমার্ধটা বেশ নির্বিঘ্নে কেটেছিল। কোনও রকম উত্তেজনা যে হবে তার কোনও আঁচ মেলেনি। কিন্তু ম্যাচের রঙ পালটে যায় দ্বিতীয়ার্ধে। মোহনবাগানের ফরোয়ার্ড বিদেশ বসুকে ট্যাকল করতে গিয়ে মাটিতে ফেলে দেন ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডার দিলীপ পালিত। এরপরই তাঁদের মধ্যে হঠাৎ প্রায় হাতাহাতি হয়। বিদেশ বসু দিলীপ পালিতকে লাথি মারেন। অ-খেলোয়াড়চিত আচরণের জন্য রেফারি দুজনেকেই রেড কার্ড দেখিয়ে ম্যাচ থেকে বের করে দেন। ওদিকে গ্যালারিতে তখন রোষ যেন চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই এক দলের সমর্থক অন্য দলের সমর্থকদের গালিগালাজ করা, অঙ্গভঙ্গি করা শুরু করেছে। তবে তাদের বাঁধ ভাঙল যখন রেফারি ম্যাচ শুরু করলেন মোহনবাগানের পক্ষে ফাউল দিয়ে নয়, ড্রপ বলে। ব্যস। এই ঘটনায় ক্ষোভের আগুন ছড়ায় ইডেনের গ্যালারিতে।

দুই দলের উত্তেজিত সমর্থকরা ইট, লোহার রড, কংক্রিটের ভাঙা অংশ যথেচ্ছ ছোড়াছুড়ি করতে শুরু করে। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। হুড়োহুড়ি পড়ে যায় দর্শকদের মধ্যে, চলে ধাক্কাধাক্কি, ছুটোছুটি। পরিস্থিতি এমন হয় যে, ভিড়ের চাপে লুটিয়ে পড়েন অসংখ্য দর্শক। বাকিদের দ্বারা তারা পদপিষ্ট হয়। এই ঘটনাতেই ১৬ জনের প্রাণহানি হয়। মাঠেই মারা যান ১৩ জন, পরে হাসপাতালে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়।   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 3 =