কলকাতা: এনআরসি ইস্যুতে এবার কৌশল বদল করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ রাজ্য নেতৃত্বকে এনআরসি নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ রাজ্য নেতৃত্ব অমিত শাহ নির্দেশ দিয়েছেন, এনআরসির পরিবর্তে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আলোচনা করা৷
বিজেপি সূত্রে খবর, অমিত শাহ চান না, নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আর কোনও আলোচনা করা হোক৷ এনআরসির পরিবর্তে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে যে বিল আনতে চলেছে কেন্দ্র, সেই বিলের উপকারিতা, কার্যকারিতা নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে আলোচনা করা৷ যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন, শরণার্থীরা ভারতীয় নাগরিক পাতে কোনও সমস্যা হবে না৷ বিজেপি যে তাঁদের পাশে আছে, তা বোঝাতে বঙ্গ নেতৃত্বকে গ্রামে গ্রামে যেতে হবে৷ একই সঙ্গে শরণার্থীদের নাগরিকত্বের দাবিতে বাংলা থেকে যাতে এক কোটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো যায়, তার লক্ষ্যমাত্রাও বেধে দিয়েছেন শাহ৷
নাগরিকপঞ্জির দামামা বাজিয়ে আজ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে অমিত শাহের মন্তব্য, ‘‘এনআরসি নিয়ে বিজেপির নীতি স্পষ্ট করতে আমি এখানে এসেছি৷ সাফ জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছি, হিন্দু ধর্মালম্বী সমস্ত শরণার্থীরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন৷ এনআরসি থেকে তাঁদের নাম বাদ যাবে না৷ এর জন্য নাগরিকত্ব বিল আনবে মোদি সরকার৷ তবে একজন অনুপ্রবেশকারীকে আমরা থাকতে দেব না৷ অনুপ্রবেশকারীদের ভোট ব্যাঙ্ক বানাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে৷ বিরোধী থাকার সময় অনুপ্রবেশ নিয়ে বড় বড় কথা বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এখন তিনি উল্টো কথা বলছেন৷ আপনাদের বলছি, বাড়ির বাড়ির গিয়ে শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলুন৷ ওঁদের আশ্বাস দিন, তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না৷ সমস্ত হিন্দু শরণার্থী ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন৷’’
পাল্টা রাজ্যের প্রশাসনিক কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘আজ উৎসবের মধ্যে বাংলা এসে এনআরসির আতঙ্ক ছড়ালেন অমিত শাহ৷ আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি৷ আমি তো নিজে যশোহর জেলার মানুষ ছিলাম৷ আমার তো নিজের বাথ সার্টিফিকেট নেই৷ আমি কী করব? কী দেখাব? সেই সমস্ত নথিপত্র পাব কোথা থেকে? আজ এই নিয়েই গোটা দেশের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন৷’’ এদিন নবান্ন থেকে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিভেদ সৃষ্টি করছেন৷ হিন্দু ধর্মের নাম করে অন্য ধর্মের মানুষদের অপমান করছেন৷ এনআরসির নামে বাংলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন৷ দেশ কাকে রাখবে, কাকে রাখবে না, ধর্মের ভিত্তিতে এটা ঠিক করা যায়? এটাও চূড়ান্ত অন্যায় হচ্ছে৷ বাংলার মানুষ অমিত শাহকে ক্ষমা করবেন না৷ আজ বাংলার প্রায় এক কোটি মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন অমিত শাহ৷ ধর্মের নামে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে৷ উৎসবের মধ্যে আতঙ্ক কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না৷ আমরা মনে করি, আজ অমিত শাহ যে মন্তব্য রেখেছেন তা বাংলার মানুষ জবাব দেবেন৷ আজ গ্রামেগঞ্জে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করার জন্য দায়ী থাকবেন অমিত শাহ৷’’ বলেন, ‘‘আসুন না দুর্গাপুজোয় আনন্দ করি৷ প্রসাদ খান৷ দেখুন বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য৷ বাংলার মানুষের সৃষ্টি৷ উৎসবের মধ্যে দয়াকরে আতঙ্ক ছড়াবেন না৷’’