নয়াদিল্লি: এপ্রিলের শুরু থেকেই তীব্র দাবদাহের আগুনে জ্বলছে দেশ। গ্রীষ্মকাল শুরু হতে না হতেই এমন রেকর্ড গরমে কার্যত নাজেহাল অবস্থা দেশবাসীর। সেই সঙ্গে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত দেশজুড়ে সেই অর্থে বৃষ্টি শুরু না হওয়ার কারণেই উত্তরোত্তর বাড়ছে তাপমাত্রা, যা ইতিমধ্যেই কয়েক দশকের রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। এমতাবস্থায় এই তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দেশ। গরমের দোসর হিসেবে দেশের একাধিক রাজ্যে ইতিমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই দেশের একাধিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার ঘাটতি দেখা দিয়েছে, মূলত সেই কারণেই রাজ্যগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে সরকারকে। এর মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা রাজধানী দিল্লির। বিগত কয়েকদিনে দিল্লির বিস্তীর্ণ এলাকায় ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর সামনে এসেছে। কিন্তু ঠিক কি কি কারণে হচ্ছে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট, এবার সামনে এল সেই সমস্ত তথ্য।
জানা যাচ্ছে, গত দুই মাসে দেশজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ঘণ্টায় ১৩.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৩৫.৪ শতাংশ বিলিয়ান কিলোওয়াটে পৌঁছেছে। শুধুমাত্র উত্তর ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ শতাংশ। সরকারি হিসাব অন্তত তাই বলছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে খবর, পশ্চিম মধ্য, উত্তর-পশ্চিম, উত্তর এবং উত্তর-পূর্বের বেশিরভাগ অংশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার দাপট চলছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা আকাশছোঁয়া। আরেকটি প্রধান কারণ হল এয়ারকন্ডিশনের ব্যবহার বৃদ্ধি। জানা যাচ্ছে, চলতি বছরে প্রাক গ্রীষ্মকালীন মাসগুলোতে যে পরিমাণ এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে তা ছয় বছরেরও বেশি সময়ের রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে।
অন্যদিকে নজিরবিহীন বিদ্যুত ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন বিদ্যুতের চাহিদা কয়েকশো গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে ঠিক তেমনই কয়লা সরবরাহ কমেছে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গুলিতে। রিপোর্ট বলছে, সম্প্রতি বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদার তুলনায় ২.৪১ বিলিয়ন ইউনিট কমেছে, যা মোট বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় ১.৮ শতাংশ। হিসেব অনুযায়ী গরমকালে ভারতে এত কম বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০১৫-এর পরে আর কখনও হয়নি।
এবার যদি এই বিদ্যুতের চাহিদাকে রাজ্যভেদে ভাগ করা যায় তাহলে দেখা যাবে রাজধানী দিল্লিতে বিদ্যুতের চাহিদা এপ্রিলে ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি যথা পাঞ্জাব, রাজস্থানে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ৩৬ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ। তবে কল্পনাতীতভাবে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে সিকিমে। জানা যাচ্ছে, তাপপ্রবাহের দাপট থেকে বাদ যায়নি শীতপ্রধান রাজ্য হিসেবে পরিচিত এই রাজ্যও। আর তাই এক ধাক্কায় সিকিমের বিদ্যুতের চাহিদা ৭৪.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের মতো শীতপ্রধান রাজ্যগুলিতে যেহেতু গরমকালে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাই এই দুটি পর্বতাবৃত রাজ্যেও বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে কমপক্ষে ছয় শতাংশ করে।
এই চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরবরাহের তারতম্যের কারণেই শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। রিপোর্ট বলছে এখনও পর্যন্ত দেশের সাতটি রাজ্য চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হয়েছে। গত ছয় বছরে রাজ্যগুলিতে এত ভয়াবহ অবস্থা কখনও দেখা যায়নি। এর মধ্যে অধিকাংশ রাজ্যগুলি উত্তর ভারতের, তবে আশ্চর্যজনকভাবে দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে যখন বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে তখন জানা যাচ্ছে গত ৯ বছরে মূলত গ্রীষ্মকালগুলিতে এত কম কয়লা সরবরাহ হয়নি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে। রিপোর্ট বলছে, এপ্রিলের শুরুতে কয়লা সরবরাহের হার ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছে। আর তাতেই রীতিমত অন্ধকার দেশের একাংশ।