নয়াদিল্লি: দেশজুড়ে চলা তাপপ্রবাহের দোসর হিসেবে সম্প্রতি দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এপ্রিলের শুরু থেকেই গ্রীষ্মকাল পড়তে না পড়তেই একদিকে যেমন মাত্রাছাড়া হারে বেড়েছে তাপপ্রবাহ এবং দাবদাহ, অন্যদিকে তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ইতিমধ্যেই দেশের তেরোটি রাজ্যে ক্রমবর্ধমান ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটেছে।সাধারণত কয়লার পর্যাপ্ত যোগানের ঘাটতি দেখা দেওয়ার কারণেই মাথাচাড়া দিয়েছে এই সমস্যা। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি এই মুহূর্তে যদি কয়লার সরবরাহ স্বাভাবিক না করা হয় তাহলে আগামী দিনে আরও বড় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যায় পড়বে দেশ। এমতাবস্থায় ক্রমবর্ধমান ব্ল্যাকআউটের হাত থেকে দেশকে সুরক্ষিত করতে জরুরী ভিত্তিতে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের ইউনিটগুলিকে জুনের শেষের মধ্যে বিদেশ থেকে ১৯ মিলিয়ন টন কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলেছে বিদ্যুৎ মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তরফ থেকে একটি চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারত হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা আমদানিকৃত দেশ। আর ভারতের ইতিহাসে এটাই প্রথমবার যখন এই দেশকে বৈশ্বিক কয়লা সরবরাহের উপর রীতিমত চাপ সৃষ্টি করতে হচ্ছে কয়লা আমদানি করার জন্য।
এর আগেই জানা গিয়েছে, ভারতে চলা লাগামহীন তাপপ্রবাহের কারণেই এপ্রিল মাসে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ইতিমধ্যেই সমস্ত রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। আর তার জেরেই এই মুহূর্তে দেশ ব্যাপক বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে গত ছয় বছরে এটাই দেশের সবথেকে বড় বিদ্যুৎ সংকট। আর এই সংকটের মোকাবেলায় রাজ্য সরকার তো বটেই কেন্দ্রীয় সরকারও সম্ভাব্য সমস্ত রকম প্রচেষ্টা করছে বলে খবর। ইতিমধ্যেই জানা যাচ্ছে ফেডারেল সরকার রাজ্য সরকারের মালিকানাধীন ইউনিটগুলোকে ২২ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করতে বলেছে। অন্যদিকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে বলা হয়েছে ১৫.৯৪ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করতে। এক্ষেত্রে সমস্ত ইউনিটগুলোকে বিদ্যুৎ মন্ত্রক একটি টাইমলাইনও বেঁধে দিয়েছে বলে খবর। জানা যাচ্ছে ইউনিটগুলোকে বরাদ্দ পরিমাণের ৫০ শতাংশ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে আমদানি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে বাকি ৪০ শতাংশ আগস্টের শেষের দিকে এবং পড়ে থাকা ১০ শতাংশ অক্টোবরের শেষের দিকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো রাজ্যের কোন ইউনিটই ফেডারেল সরকারের এই নির্দেশ মানতে বাধ্য নয়। তবে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে যদি বিদ্যুৎ মন্ত্রকের এই দাবি না মানা হয় তাহলে আগামী দিনে রাজ্যগুলিকে আরও বড় বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখি হতে পারে বলে মনে করছে সরকারি কর্মকর্তারা। জানা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ মন্ত্রকের পাঠানো চিঠিতে লেখা হয়েছে রাজ্য এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে অবশ্যই কয়লা আমদানি করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে অবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
এর সঙ্গেই জানা গিয়েছে আদানি পাওয়ার, টাটা পাওয়ার, রিলায়েন্স পাওয়ার, জিন্দাল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার, টরেন্ট পাওয়ার এবং স্ট্যাম্পসহ বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কয়লা আমদানির লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।