হিন্দু হয়ে মুসলিম তরুণীকে বিয়ে, প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে খুন করা হল যুবককে

হিন্দু হয়ে মুসলিম তরুণীকে বিয়ে, প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে খুন করা হল যুবককে

হায়দরাবাদ: হিন্দু হয়ে পরিবারের অমতে মুসলিম প্রেমিকাকে বিয়ে। আর সেই অপরাধেই বুধবার রাতে প্রকাশ্য রাস্তায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হাতেই বেঘোরে প্রাণ হারালেন হায়দরাবাদের এক যুবক। উত্তর ভারতের অনার কিলিংয়ের ছায়া এবার দক্ষিণ ভারতেও। জানা যাচ্ছে, ভিন্ন ধর্মের তরুণীকে বিয়ে করার কারণেই হায়দ্রাবাদের সারুণগরের বাসিন্দা ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে মৃত ওই যুবকের সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর ভাইকেও। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান হিন্দু-মুসলিম বিবাদের জেরে প্রথমে দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তি এবং সেই অশান্তির কারণেই এভাবে নিশংসভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় যুবককে খুন করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মৃত ওই যুবক বিল্লাপুরম নাগরাজু পেশায় একজন গাড়ির সেলসম্যান। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী আসরিন সুলতানা। বাড়ির অমতে গত জানুয়ারি মাসেই তাঁরা বিয়ে করেন। মৃত ওই যুবকের সঙ্গে মুসলিম এই তরুণীর কলেজের সময় থেকেই প্রেম। কিন্তু দুজনের ধর্ম আলাদা হওয়ায় কোনও পরিবারের লোকজনই তাঁদের এই সম্পর্ক মেনে নেননি। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের আপত্তির পরেও নাগরাজু এবং আসরিন দু মাস আগে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সেইমতো তাঁরা বিয়েও করে এবং পরিবারের থেকে আলাদা নিজেদের সংসার শুরু করেন। বিষয়টি মোটেও ভাল চোখে দেখেননি আফরিনের পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে এই বিয়ের বিরোধী ছিলেন আসরিনের ভাই এবং অন্যান্য আত্মীয়রা। আর সেই ক্রোধের বসেই ওই যুবককে আসরিনের পরিবারের সদস্যরা খুন করেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার রাত ন’টা নাগাদ বাইকে করে এক ব্যক্তি এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সজোরে আঘাত করে নাগরাজুকে। সেই সময় তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। আততায়ী একটি বাইকে করে আসে এবং হামলার পরে বাইকে করেই পালিয়ে যায়। এদিকে হামলায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। তাকে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা নাগরাজুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা গিয়েছে মুখ ঢাকা অবস্থায় কয়েকজন দুষ্কৃতী বাইকে করে এসে সজোরে পিছন দিক থেকে ওই যুবককে আঘাত করে এবং ওই যুবক পড়ে গেলে বাইকে চেপে দুষ্কৃতীরা আবার পালিয়ে যায় ঘটনাস্থল থেকে।

অন্যদিকে এ ঘটনার মধ্যেই সাম্প্রদায়িক উস্কানির গন্ধ খুঁজে পেয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বরা। তাঁদের দাবি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রয়োজন। বিষয়টি জানা দরকার যে শুধুমাত্র পারিবারিক কারণে ওই হিন্দু যুবককে খুন হয়েছে খুন করা হয়েছে কিনা, নাকি স্থানীয় কোনও ধর্মীয় দল এক্ষেত্রে উস্কানির কাজ করেছে। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র এই ঘটনা প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন। সেহজাদ পুনাওয়ালা বলেছেন, ‘যদি কোন মুসলিম খুন হতেন তাহলে তৃণমূলসহ রাজনৈতিক দলগুলি এতক্ষনে রাষ্ট্রসঙ্ঘে পৌঁছে যেত কিন্তু এখন একজন হিন্দু খুন হয়েছেন তাই সবাই এখন চুপ করে আছেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 5 =