কলকাতা: মমতা বলুন কিংবা নাই বা বলুন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখর বিনা নেমন্তন্নতেও তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন৷ এই কথা জানিয়ে রাজ্য সরকারকে আবার বিড়ম্বনায় ফেলতে চেয়েছেন রাজ্যপাল নিজেই৷ পরিস্থিতি যা, রাজ ভবনের সঙ্গে নবান্নের অম্ল মধুর সম্পর্ক আগামী দিনেও বজায় থাকবে, তা বলাই যায়৷
কালী পুজোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল৷ ৪০ বছরের কালীপুজো দেখেছেন৷ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলিঙ্গনও করেছেন৷ অনেকেই ভেবেছিলেন, রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের চলতি ঝগড়ার ইতি পড়ল হয়ত৷ কিন্তু, রাজ্যপালের সাম্প্রতিকতম বক্তব্য – রাজ্য সরকার তাঁকে কোনও অনুষ্ঠানেই আমন্ত্রণ জানাননি৷ এই বক্তব্যের পর নবান্ন-রাজভবনে দূরত্ব বেড়েছে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, নবান্নকে যেভাবে চাপে রাখতে চাইছেন রাজ্যপাল, তা আর আগে বিশেষ দেখা যায়নি৷
বাম জমানার শেষের দিকে৷ রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী৷ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালনার ঘটনাকে কড়া শব্দে নিন্দা করেছিলেন তিনি৷ সিঙ্গুর প্রশ্নে সরকার এবং বিরোধী পক্ষ (তৃণমূল কংগ্রেসের) মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি৷ যদিও কাজ হয়নি৷ তবে একথা বলে যায়, বামফ্রন্ট সরকারের সুনজরে ছিলেন না গান্ধী৷
তৃণমূল কংগ্রেস জমানায় রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠির সঙ্গে বারবার নবান্নের দ্বন্দ্ব বেঁধেছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বিভিন্ন কারণে সমালোচনায় বিদ্ধ করে গিয়েছেন কেশরিনাথ৷ বিজেপি সহ বিরোধী দলগুলি বার বার রাজভবনে ছুটে গিয়েছে৷ তা দেখে মমতার মন্ত্রীরা বলেছেন, রাজভবনে নয়, ওটা তো পার্টি অফিস৷
কেশরিনাথ ত্রিপাঠি বারবার রাজ্যে আইনের শাসন আছে কি নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও একাধিকবার তাঁকে সরব হতে দেখা গিয়েছে৷ বিদায় বেলায়ও তিনি রাজ্য সরকারকে সমালোচনা করতে ছাড়েন নি৷
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের আগমন একটি বিশেষ ঘটনার মধ্যে দিয়ে৷ প্রথামাফিক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে রাজ্যপালের নিয়োগের কথা জানান৷ মমতাও সম্মতি জানান৷ কিন্তু, নতুন রাজ্যপাল রাজ্য এসে সরকারকে সমালোচনা করতে ছাড়েন নি৷ তিনি নিজেকে কপিবুক রাজ্যপাল বলেছেন৷ এও বলেছেন, তিনি রাজভবনে আবদ্ধ থেকে কাজ করবেন না৷
উত্তরবঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চান, নবান্ন থেকে সারা পাননি৷ উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বৈঠকেও একটি ঘটনা ঘটেছে৷ অবাক হয়ে বলেছেন, রাজ্যপাল ডাকলে সরকারি আধিকারিকরা আসেন না , তা জানা ছিল না৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করতে নিজেই যান রাজ্যপাল৷ মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের গাড়ি করে মন্ত্রীকে বার করে আনেন৷ এই ঘটনার পরই রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের দূরত্ব বাড়তে থাকে৷ মুর্শিদাবাদে আরএসএস ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষক এবং তার স্ত্রী-পুত্রকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়৷ ওই ঘটনার পর রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে আইনের শাসন নেই৷ দুর্গাপুজো কার্নিভালেও রাজ্য সরকার তাঁকে ভালো করে বসে দেখার আসন দেয়নি বলে কটাক্ষ করেছিলেন রাজ্যপাল৷ এরপর নিজেই মমতাকে ফোন করে কালীপুজোয় তাঁর বাড়িতে অতিথি হয়েছেন৷ অনেকেই বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে সময়ের সময়ে বেকায়দায় ফেলাই উদ্দেশ্য এই রাজ্যপালের৷ তৃণমূলের রাজনীতিও রাজ্যোপালকে কিছুটা সুবিধা করে দিচ্ছে৷