কলকাতা: ফের প্রকাশ্যে রাজভবন-নবান্ন সংঘাত! এবার খোদ রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘আদালত অবমাননা’র অভিযোগ তুললেন খোদ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান৷ রবীন্দ্র সরোবরে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ছট পুজোর আয়োজনের ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকাকে কাঠ গড়ায় তুললেন তিনি৷ একইসঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে চূড়ান্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর৷
আজ সকালে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন রাজ্যপাল৷ সেখানে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকায় চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ উষ্মা প্রকাশ করে রাজ্যপাল জানান, আদালতের রায় সবাইকে মেনে চলা উচিত৷ সকলকে আইন মেনে চলা উচিত৷ আইন যতটুকু অধিকার দেবে, ততটুকু মেনে নেওয়া উচিত৷ মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের আদেশ গত বছর ধরে এখানে পালন হয়নি৷ ভারতীয় সংবিধান রক্ষা করা আমার কর্তব্য৷ রাজ্যপাল পদে দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমি এটাই শপথ নিয়েছিলাম৷’’
উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যপাল ধনকর আরও জানান, ট্রাইব্যুনালে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ এখন মামলা আদালতে রয়েছে৷ এই নিয়ে আমি কিছু বলব না৷ তবে আদালতের নির্দেশ সকলকেই মেনে চলা উচিত৷ বহু বছর ধরে বাংলা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করা হচ্ছে না৷ এটা খুব উদ্বেগের বিষয়ে৷ আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়৷ আইন যদি বলে, এটা করা যাবে না৷ তো করা যাবেনা৷ আইন যা বলবে, সেটাই মেনে চলতে হবে আমাদের৷’’
রবীন্দ্র সরোবরে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ছট পুজোর আয়োজন নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল৷ জানিয়েছেন, দর্শকের ভূমিকায় ছিল পুলিশ৷ রবীন্দ্র সরোবরে অবাধে হয়েছে ছট পুজো৷ রবীন্দ্র সরোবরে দূষণবিধি উপেক্ষিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল৷
মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ঘুরপথে সমালোচনা করেন তিনি৷ সাফ জানিয়ে দেন, ফোনে আড়িপাতা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কী তথ্য আছে আমি জানি না৷ আমার কাছে অনেকেই অভিযোগ করছেন৷ বাংলায় গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে৷ সন্দেশখালিতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ভিলেজ পুলিশের মৃত্য ও এসআই-সহ সিভিক ভলেন্টিয়ারের গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল৷ জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে৷ কেন বারবার এরকম হচ্ছে দেখা উচিত৷’’
পাল্টা দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ সংবাদমাধ্যমের দাবি করেছেন, রাজ্যপাল দলীয় মুখপাত্রের কাজ করছেন৷ তিনি সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে এমন মন্তব্য করতে পারেন না৷ তিনি বলছেন, তাঁর কাছে অনেকে গিয়ে বলেছেন গোপনীয়তা লঙ্ঘন করার অভিযোগ করেছেন৷ কিন্তু, আমরা জানতে চাই, কারা কারা এসে সেই অভিযোগ করেছেন৷ তালিকা দেখলে বোঝা যাবে সবই বিজেপি নেতাদের নাম থাকতে পারে৷’’
গতকাল শনিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জানিয়ে দেন, তাঁর ফোনে আড়িপাতার হচ্ছে৷ এতে তিনি উদ্বিগ্ন৷ ফোনে আড়িপাতার প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রী ফোনে আড়িপাতার অভিযোগের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রাজ্যপালের ঘুরপথে সমালোচনা ঘিরে শুরু হয়েছে নয় রাজনৈতিক চর্চা৷