‘কাশ্মীর না ছাড়লে মৃত্যু’, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের হুমকি চিঠি

‘কাশ্মীর না ছাড়লে মৃত্যু’, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের হুমকি চিঠি

শ্রীনগর: ‘উপত্যাকার সমস্ত শরণার্থী এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতিনিধিদের বলছি, এখনই জম্মু কাশ্মীর থেকে পালাও, না হলে মৃত্যুর মুখোমুখি হও। উপত্যকার অমুসলিম সম্প্রদায় তথা হিন্দু এবং কাশ্মীরি পন্ডিত সম্প্রদায় এবার জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর এ ইসলামের কাছ থেকে ঠিক এই ভাষাতেই পেল হুমকি চিঠি।

গত বৃহস্পতিবার উপত্যাকার এক জঙ্গি গোষ্ঠীর দুই সদস্যের হাতে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয়েছে রাহুল ভাট নামে কাশ্মীরি পন্ডিত সম্প্রদায়ের এক সরকারি আধিকারিককে। জানা যায়, তহশিলদারের সরকারি অফিসে ঢুকে ওই যুবককে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় জঙ্গিরা। ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো উত্তপ্ত জম্মু ও কাশ্মীর। উপত্যকার বাসিন্দা অমুসলিম সম্প্রদায় এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অনেকেরই মত, ফের উপত্যাকায় ফিরছে নব্বইয়ের দশকের কাশ্মীরি পণ্ডিতদের আতঙ্ক ও দুর্দশা এবং সবকিছু জেনেও কেন্দ্র তাঁদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই সমস্ত চাপানউতোরের মধ্যেই রবিবার রাতে জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছ থেকে একটি হুমকি চিঠি পেল কাশ্মীরি পন্ডিতরা।

চিঠিটি লস্কর এ ইসলামের লেটারহেড এ লেখা। তাতে লেখা রয়েছে, ‘সমস্ত শরণার্থী এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতিনিধিদের বলছি। হয় উপত্যাকা ছেলে পালাও, নয়তো মৃত্যুর মুখোমুখি হও। যে সমস্ত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাশ্মীরকে ইজরায়েল বানাতে চাই এবং এখানকার মুসলিমদের খুন করতে চায় তাদের কাশ্মীরে কোনও জায়গা নেই।’ ওই চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘কাশ্মীরে পণ্ডিতরা নিজেদের নিরাপত্তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ এমনকি তিন গুণ পর্যন্ত করতে পারে। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হবে না।’ ওই চিঠিতে হুমকি দিয়ে জঙ্গি সংগঠনের তরফ থেকে বড়বড় আদ্যক্ষরে লেখা হয়েছে, ‘তোমরা মরবেই’।

উল্লেখ্য গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই জম্মু কাশ্মীর উপত্যকায় একাধিকবার জঙ্গিদের গুলির শিকার হয়েছেন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বিশেষ করে কাশ্মীরি পন্ডিতরা। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পরপর ৫ দিন এইভাবেই হামলা চালিয়ে ৭ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে জঙ্গীরা। মৃত ওই সাতজনই অমুসলিম এবং তাঁদের মধ্যে যেমন ছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত, ঠিক তেমনই কয়েকজন শিখ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও সেই সময় জঙ্গিদের হাতে নিহত হন। এরপরই ভিন রাজ্য থেকে আসা অমুসলিম সম্প্রদায়ের পরিযায়ী শ্রমিক এবং অন্যান্য কর্মচারীরা ফের প্রাণ বাঁচাতে কাশ্মীর ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। ফেরে নব্বইয়ের দশকের কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সেই ভয়াবহ স্মৃতি। মাস খানেক ধরে জঙ্গিদের এমন তাণ্ডব চলার পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয় সেই সময়। কিন্তু ২০২১-এর অক্টোবর, নভেম্বরের পর চলতি বছরে ফের নতুন করে স্থানীয় বাসিন্দারা জঙ্গিদের টার্গেট হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × four =