কলকাতা: ফের সংবাদ শিরোনামে জগ্গি বাসুদেব ওরফে সদ্গুরু। বিতর্ক জড়িয়ে আরও একবার ফোকাস কাড়লেন তিনি৷
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর ‘ইশা ফাউন্ডেশন’ এবং ভবিষ্যৎ কিছু প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল সদগুরুকে৷ সেই সকল প্রশ্ন শুনে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যান জগ্গি। রেগে-মেগে মাঝপথে সাক্ষাৎকার থামিয়ে জোড় করে ক্যামেরা বন্ধ করে দিতে বলেন৷ তবে তাঁকে ঘিরে বিতর্ক এই প্রথম নয়৷ সদগুরু আর বিতর্ক যেন সমার্থক৷ কখনও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে সওয়াল করে, কখনও নারীবাদের বিপক্ষে গিয়ে, কখনও আবার ‘ইশা ফাউন্ডেশন’ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে তাঁর নাম। নানা কারণে খবরে থাকা এই জগ্গি বাসুদেব ওরফে সদ্গুরু আসলে কে?
আরও পড়ুন- ‘যদি হজরত মহম্মদ বেঁচে থাকতেন তাহলে…’ মুখ খুললেন ‘বিতর্কিত’ তসলিমা
১৯৫৭ সালে ৩ ডিসেম্বর মহীশূরে জন্ম তাঁর৷ সুশীলা বাসুদেব এবং ভিবি বাসুদেবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ তিনি৷ পড়াশোনা করেছেন ডেমোনস্ট্রেশন স্কুল থেকে৷ এর পর মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক৷ মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে মল্লাদিহাল্লি রাঘবেন্দ্র স্বামীর কাছে যোগপাঠ নেওয়া শুরু করেছিলেন সদগুরু৷ কলেজের পাঠ শেষ করার মন দেন ব্যবসায়৷ কর্মজীবনের গোড়ার দিকে ব্যবসা শুরুর জন্য কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন৷ এর পর মহীশূরের এক প্রত্যন্ত এলাকায় একটি পোল্ট্রি ফার্ম খোলেন। ফার্মের কাজের পাশাপাশি শুরু করেন নির্মাণ ব্যবসাও৷ ২৫ বছর বয়সে ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব এক বন্ধুকে দিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিশ্বভ্রমণে৷ পরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ব্যবসায় করতে নেমেছিলেন টাকা উপার্জন করে বিশ্বভ্রমণ করবেন বলেই।
১৯৭৪ সালে ঋষি প্রভাকরের কাছে ‘সমাধি যোগ’ শিক্ষা শুরু তাঁর৷ কয়েক বছরের চেষ্টায় সেটি রপ্তও করে ফেলেন জগ্গি বাসুদেব। এই যোগব্যায়ামই ‘ইশা যোগ’ নামে খ্যাত। ১৯৮২ সাল থেকে শুরু হয় অন্য সফর৷ যোগ শেখাতে শুরু করেন সদগুরু৷ ১৯৮৩ সালে মহীশূরে মাত্র সাত জন অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম যোগ ক্লাস করেন৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ব্যাপ্তি। কর্নাটকের পাশাপাশি হায়দরাবাদেও ক্লাস শুরু করেন তিনি৷
১৯৯২ সালে কোয়াম্বাটুরে গড়ে তোলেন ‘ইশা ফাউন্ডেশন’ ৷ যেখানে যোগের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক জীবনের পাঠও দেওয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান জগ্গি বাসুদেব নিজেই। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের বহু দেশে ‘ইশা ফাউন্ডেশন’-এর কেন্দ্র রয়েছে। গোটা প্রতিষ্ঠানের কাজ চলে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে।জানা যায়, গোটা বিশ্বজুড়ে সব মিলিয়ে ‘ইশা ফাউন্ডেশনে’র হয়ে কাজ করেন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার স্থায়ী এবং প্রায় নব্বই লক্ষ অস্থায়ী স্বেচ্ছাসেবক৷
তবে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে বিতর্ক৷ অভিযোগ, কোয়ম্বাটুরে পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা ‘ইশা ফাউন্ডেশনে’র সদর দফতরটি নাকি অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে। এর জন্য বহু জঙ্গল নষ্ট করা হয়েছে৷ হাতিদের জন্য সংরক্ষিত এলাকার ঠিক পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ আরও আছে৷ শোনা যায়, কোনও রকম অনুমতি ছাড়াই ইশা ফাউন্ডেশনের একটি বিশাল জলাধার এবং বহু ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এক অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে তাঁকে একবার প্রশ্ন করেছিলেন এক ছাত্রী৷ রেগে গিয়ে ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দিয়েছিলেন সদ্গুরু।
এই প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রে রয়েছে ১১২ ফুট লম্বা আদিযোগীর একটি মূর্তি৷ ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রির দিন এই বিতর্কিত কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনাচক্রে ওই বছরই যোগব্যায়াম এবং আধ্যাত্মিক জীবন নিয়ে চর্চার জন্য সদগুরুকে পদ্মবিভূষণে ভূষিত করা হয়।
‘ইশা ফাউন্ডেশন’ ছাড়াও বহু ছোট ছোট ব্যবসায়িক সংস্থা রয়েছে সদগুরুর৷ দৈনন্দিন জীবনের নানা সামগ্রী থেকে শুরু করে প্রসাধনী— যাবতীয় পণ্যই বিক্রি করে থাকে এই সংস্থাগুলি৷
কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক সূত্রে খবর, এই সকল সংস্থাগুলি থেকে ২০১৯-২০ সালে প্রায় ১২০ কোটি টাকা লাভ করেন সদগুরু। শুধু তাই নয়, কেউ কৈলাস যাত্রা করতে চাইলে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকা চাই৷ বিনিময়ে কৈলাস যাত্রায় সঙ্গ দেবেন সদগুরু। ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সদগুরুর সঙ্গে মোটরবাইকে চড়ে হিমালয়ের কোলে ঘোরার সুযোগও রয়েছে।
প্রতি বছর মহাশিবরাত্রিতে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে জগ্গির ‘ইশা ফাউন্ডেশন’৷ টিকিটের মূল্য শুরু ‘মাত্র’ ৫০ হাজার টাকা থেকে৷ শুরু৷ এসবের জন্য সদগুরুকে একটা টাকাও কর দিতে হয় না। কারণ সরকারের খাতায় ‘ইশা ফাউন্ডেশন’ একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান৷ সদগুরুর এই চ্যারিটি ট্রাস্টে কারও কাছ থেকে কোনও ফি নেওয়া হয় না। পুরো প্রতিষ্ঠানটিই নাকি চলে ভক্তদের দানের উপর! তবে ‘ইশা ফাউন্ডেশনে’র বিরুদ্ধে বহু মামলা রয়েছে। যার কোনওটিরই মীমাংসা হয়নি।
দেশ-বিদেশের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আধ্যাত্মিক জীবন নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন জগ্গি বাসুদেব৷ বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন তিনি৷ তাঁর অনুগামীদের মধ্যে নেতা-মন্ত্রী থেকে বলিউড তারকাও রয়েছেন।
বিতর্কের এখানেই শেষ নয়৷ স্ত্রীর খুনের অভিযোগও রয়েছে সদগুরুর বিরুদ্ধে৷ তাঁর বিরুদ্ধে কোয়ম্বাটুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তাঁর শ্বশুর তথা বিজির বাবা৷ এমনকী আশ্রমের কোনও একজনের সঙ্গে সদগুরুর অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগও আনেন তিনি৷ বিজির বাবার দাবি, বিজি সদগুরু ও ওই মহিলার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ তাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷
বিজির বাবা আরও জানান, তাঁদের মধ্যে মৃতদেহ দাহ করার নিয়ম নেই৷ কিন্তু জোড় করে বিজির দেহ সৎকার করেছিলেন সদগুরু৷ উল্টে দাবি করেছিলেন, তাঁর স্ত্রীর মহা সমাধি হয়েছে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>