আলিমুদ্দিনের বুড়ো কর্তারাই কি ‘অগ্নিকন্য’ ঐশীর পথের কাঁটা?

আলিমুদ্দিনের বুড়ো কর্তারাই কি ‘অগ্নিকন্য’ ঐশীর পথের কাঁটা?

কলকাতা: জ্যোতিবাবু নেই, হরকিশন সিং সুরজিৎ নেই, বুদ্ধবাবু তো থেকেও নেই। ভোট যন্ত্রের দেওয়া হিসাবের নিরিখে বিচার করলে, সারা দেশেই বাম রাজনীতি যেন আশ্চর্য নিষ্প্রভ। লাল রং ফিকে হতে হতে কোথাও কী সাদা হয়ে গিয়েছে? দূরবীন দিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই। বাংলা এবং ত্রিপুরার দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। কেরলে বামফ্রন্ট কতদিন সরকার ধরে রাখতে পারবে, তা জোর দিয়ে বলতে পারেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

তবে এ শুধু মুদ্রার একপিঠ। গল্পের অর্ধেক মাত্র। এখনও ক্লাইম্যাক্স-এ পৌঁছতে ঢের দেরি। সারা দেশে বামপন্থা ফিকে হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-ক্যাম্পাসে লাল পতাকা পতপত করে উড়ছে। সৌজন্য বাম ছাত্র আন্দোলন – এসএফএই। তবে এর মধ্যেই যে প্রশ্নটি জ্বলন্ত – এই ছাত্ররা কোথায় যান। কেন কানহাইয়া কুমার বা ঐশী ঘোষরা বৃহত্তর বাম রাজনীতিতে মুখ হিসাবে উঠে আসতে পারেন না?

জাতীয় স্তরে বামফ্রন্টের সব থেকে জনপ্রিয় মুখ সিপিএম থেকে উঠে আসেনি। এসেছে সিপিআই থেকেই। শেষ পাঁচ বছর নিজের আজাদী স্লোগানের মাধ্যমে দেশে অন্যতম সেরা মোদী বিরোধী মুখ হিসাবে উঠে এসেছেন কানহাইয়া। সিপিআই-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তিনি। তবে, রাজনীতিতে উত্থান জে এন ইউ থেকেই। যে বিশ্ব বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে নেত্রী হয়ে উঠেছেন বর্ধমানের মেয়ে ঐশী। মাথাও ফাটিয়েছে। আজ, সারা দেশের কাছে 'ইউথ আইকন' ঐশী। অনেকেই ঐশী হতে চায়। লাল ঝাণ্ডা তুলে ধরতে চাই। তাই, বাম দলগুলির কাছে মরুভূমিতে মরুদ্যান হয়ে উঠেছেন ঐশী ঘোষ। ঐশীর সাফল্য, জনপ্রিয়তা, বাচনভঙ্গিতে মুগ্ধ প্রকাশ কারাত থেকে সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বোস থেকে পিনরাই বিজয়ন।

তবে এই ওপার বিস্ময়ের মাঝেও তাঁরা জোর গলায় বলতে পারেন না , ভবিষ্যতের নেত্রী ঐশীই। কারণ, পরবর্তী নেতৃত্ব নির্মাণে তাঁদের রেকর্ড যে অতি খারাপ-লজ্জাজনক। রাজনীতি এগিয়ে গিয়েছে তীব্র গতিতে। কিন্তু, উজ্জ্বল বামপন্থী নেতারা যেন কালের নিয়মেই হ্যালির ধূমকেতুর মত হঠাৎ জ্বলে উঠে নিভে গিয়েছেন। সেই বিমান, অশক্ত বুদ্ধ, প্রাচীন ইয়েচুরি, কারাত , মানিক সরকার – নতুন কেউ নেই। ঐশীর ফিনিক্স পাখী। আসবেন , যাবেন।

অনেকেই বলেন, 'বাংলার অগ্নিকন্য' হিসাবে পরিচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংবাদমাধ্যম তৈরি করেছে। কথা সম্পুর্ন মিথ্যা নয়। প্রবল বাম যুগে, প্রবল সিপিএম বিরোধী নেত্রী হিসাবে উঠে এসেছেন মমতা। এমন নয় যে সেই সময় সিপিএম বিরোধী অন্য কোনও নেতা ছিলেন না। কিন্ত, মমতার সিপিএম বিরোধিতার মধ্যে জনতা কোনও খাদ দেখেনি। আজ এত বছর পর ঐশীর সামনে যেন পুরান সময় ফিরে এসেছে। সারা ভারতের মিডিয়া ঐশীর দিকে ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। এই সৌভাগ্য কী কারাত-ইয়েচুরীদের সম্প্রতি হয়েছিল? তারা তো অতীত হতে থাকে একটি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হয়েই ইনিংস শেষ করতে চললেন। কিন্তু, আজ দেশে সেরা মোদী বিরোধী মুখের মধ্যে প্রথমেই ঐশী। সহজ ভাষায় স্পষ্ট কথা বলে তিনি মোদী বিরোধী জনতার মন জয় করে নিয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাকে আটকাতে চেয়েছে তৃণমূল সরকারও।

কিন্তু, অগ্নিকন্যার সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও বড়দের রাজনীতিতে হারিয়েই যাবেন ঐশী। কারণ, তাঁর পার্টির নেতারা পরবর্তী প্রজন্ম তৈরিতে ইচ্ছুক নন। সেক্ষেত্রে, সারা জীবন যুব নেতা থেকে যেতে হয় চল্লিশোর্ধ কমরেডদের। ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার ৭-৮ বরণ পর কোনও এক মরিয়া ব্রিগেডে জন্ম নেন দেবলীনা হেমব্রম। 'অগ্নিকন্য' ঐশীর পথের কাঁটা 'ফায়ার ব্রিগেড' হয়ে থেকে যায় আলিমুদ্দিনের বুড়ো কর্তারাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 8 =