কলকাতা: করোনা মহামারীর এই উৎকণ্ঠাময় দিনে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছে। কিন্তু, শুধু প্রতিশ্রুতি এবং সরকারি ‘বিজ্ঞাপন’ মানুষের চোখের জল মুছতে পারেনি বা পারে না, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছেন ঘাটালের অনুপ মাইতি। বছর ৩২-এর এই যুবক পেশায় ছিলেন গৃহশিক্ষক। পূর্ব মেদিনীপুরের ঘাটালের মনশুকা কিশোরচক গ্রামের বাসিন্দা এই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, লকডাউনে নামমাত্র উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই গৃহশিক্ষক কয়েকদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন৷ সম্প্রতি, বেশ কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ওই যুবক৷ দীর্ঘ লকডাউনে একদিকে উপার্জন বন্ধ, অন্যদিকে ঋণগ্রস্ত জীবন, সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনগুণ ছিলেন তিনি৷ স্থানীয়দের অনুমান, মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন তিনি৷ তবে, যুবক আদৌও আত্মঘাতী হয়েছেন কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ঘাটাল থানার পুলিশ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ঠিক কী কারণে মৃত্যু, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
তবে প্রশ্ন অন্যখানে। নিম্ন মধ্যবিত্ত ভদ্র পরিবারের ওই যুবকের রোজগার বন্ধ ছিল দুই মাস। পাকা বাড়ি করার কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে ফাঁকা পকেটে কী তাঁর মানসিক চাপ বাড়তে থাকে বলেই মনে করছেন অনেকে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি কোনও যোজনাই ওই যুবকের প্রাণ বাঁচাতে পারেনি। জানা গিয়েছে, দীর্ঘ পরিশ্রমের পর টেটে উত্তীর্ণ হয়েও মেলেনি চাকরি৷ চেয়েছিলেন ইংরেজির শিক্ষক হতে৷ সেই আশার আলো বুকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার মনশুকা কিশোরচক গ্রামের অনুপ৷ কিন্তু, বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ মা-বাবা৷ সংসার চালাতে বেছে নিয়েছিলেন গৃহ শিক্ষকতা৷ সকাল-বিকেল গৃহশিক্ষকতা করে কোনও রকমে চলত তিন জনের অভাবী সংসার৷ খেয়ে না খেয়ে কাটছিল দিন৷ তবে, সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে করোনা মহামারী৷ দীর্ঘ লকডাউন৷ বন্ধ গৃহশিক্ষকতা৷ থমকে উপার্জন৷ চরম দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন ইংরেজিতে স্নাতক মেধাবী যুবক অনুপ৷
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এপ্রিল মাসে থেকে কেন্দ্রীয় সরকার রেশন দিচ্ছে। এদিকে রাজ্যের মানুষ রেশন পাচ্ছেন না। এদিকে, ওঁরা বলছেন রাজ্যে নাকি ৯ কোটি রেশন কার্ড আছে। দু’মাস রোজগার বন্ধ। একজন মানুষের মানসিক চাপ আসতে বাধ্য। মুখ্যমন্ত্রী টিভিতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। মুখ দেখাচ্ছেন। কাজের কাজ হচ্ছে কী? মানুষ খাদ্য শস্য পাচ্ছে না। চিকিৎসা পাচ্ছে না। দিন আনি দিন খাই মানুষদের রেশন দেওয়া গেল না। টিভি খুললেই মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ৷’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, ‘‘করোনার সময়ে মানুষ মন আতঙ্ক নিয়ে বাস করছে। তার উপর সরকারের একটি কড়া বিধি নিয়ম রয়েছে। মানুষ আটকে রয়েছে। এই বিচ্ছিন্ন সমাজকে আত্মবিশ্বাস যোগান সরকারের কাজ। কিন্ত, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি শুধুই টিভিতে সীমাবদ্ধ। মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে না। ওই গৃহ শিক্ষককে দোষ দেব না। কিন্তু, আমাদের রাজ্যে দিদিকে দেখছি টিভিতে তিন মিনিট অন্তর অন্তর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আর কেন্দ্র সরকার তো নাকি মানুষকে ভুরি ভুরি দিচ্ছে। কিন্তু, মানুষের পকেট ফাঁকা। ওই শিক্ষকের পকেট ফাঁকা। কথায় ও কাজে বড় ফাঁক থেকে গিয়েছে।’’
নজর থাকুক AajBikel.com-এর পাতায়…