কলকাতা: ঘূর্ণিঝড় উমপুনের পর সারা কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রায় দু'দিন বিদ্যুৎ না থাকার পর যদিও রবিবার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে, কিন্তু সঙ্গে নিয়ে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের জন্য কিছু অপ্রিয় প্রশ্ন। কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদান করার একচ্ছত্র অধিকার কেন থাকবে শুধু সিইএসসি – এর কাছে? দীর্ঘ বছর ধরে (ব্রিটিশ আমলে শুরু) যা চলে আসছে, তা বাম আমলে প্রতিবাদ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, ২০১১ সালে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর, সেকথা বলেননি আর৷ কলকাতার এই বিপর্যয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী সিইএসসি – এর দফতরে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, সিইএসসি ১৫০টি পাওয়ার জেনারেটর চালাবে। আপাতত, তাতে বিদ্যুৎ ফিরে আসবে। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্য সরকার ১০০ জেনারেটর দেবে। পাশাপাশি, সিইএসসি, বেসরকারি সংস্থা থেকে জেনারেটর ভাড়া নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিক, চান মমতা৷
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কলকতাবাসী জন্য সিইএসসি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে শুরু করে ১৮৯৯ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে। ১৪.৪৪ বর্গ কিলোমিটার জায়গা এবং কয়েকশ গ্রাহক নিয়েই পথচলা শুরু। বর্তমানে কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকার ৫৬৭ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে সিইএসসি – এর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ ৩০ হাজার। ২৪০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বণ্টন করে এই সংস্থা। ইন্ডিয়ান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি হিসাবে লাইসেন্স পায় সিইএসসি। তারপর, ১৯৭৮ সালে ক্যালকাটা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই করপোরেশন নামে পরিচিত হয়। ১৯৮৭ সালে রাজ্য পরিচালিত এই সংস্থা সিইএসসি লিমিটেড নামে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আমলে সিইএসসিকে অধিগ্রহণ করে আরপি গোয়েনকা গ্রুপ (আরপিজি)।
'দ্য টেলিগ্রাফ' পত্রিকায় সিইএসসি জানিয়েছে, ৮৫ শতাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ঠিক হয়ে গিয়েছে। সময়টা কোভিড-১৯ মহামারীর। নয়ত, পরিষেবা আরও তাড়াতাড়ি ঠিক করা যেত৷ আর পর সংস্থা যা যুক্তি দিয়েছে তা মেনে নেওয়া বা প্রত্যাখ্যান করার দায়িত্ব পাঠকের। সিইএসসি, জানিয়েছে, ১৪০টি প্রশিক্ষিত দল বিদ্যুৎ পরিষেবা মেরামতির কাজে রয়েছে। কিন্তু অর্ধেকই কাজে লাগতে পেরেছে। কারণ, লকডাউন চলাকালীন তারা অনেকেই তাদের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, বিহারে আটকে পড়েছে। প্রশ্ন এসে যায়, লকডাউন ঘোষণার আগে ৫০ শতাংশ প্রশিক্ষিত কর্মীরা রাজ্যের বাইরে কেন ছিলেন৷ যদিও, সংস্থার যুক্তি, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাঁরা খুব ভাল কাজ করেছে। একে তো হতে ৫০ শতাংশ কর্মী নেই। তার উপর, এই ব্যাপক বিপর্যয় কখনও হয়নি।
এমনকি, আয়লাতেও নয়। সংস্থার এক পদস্থ কর্তা বলেছেন, এই জন্যই সিইএসসি দেশের অন্যতম সেরা। শেষ পাঁচ বছরে বণ্টনেই ১০ হাজার কোটি খরচ করেছে সংস্থা। নতুন ট্রান্সফরমার, নতুন কেবল, লোডশেডিং নেই। কোভিড-১৯ না থাকলে ৯৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে আসত। পরিষেবা আরও মজবুত করা যায়না? সংস্থার বক্তব্য, আরও লোক লাগান যেতে পারে। কিন্তু, বিদ্যুতের দাম তাতে বাড়বে। গ্রাহকদের বেশি টাকা দিতে হবে। সিইএসসি-র বক্তব্য, কলকাতায় ব্যাবসা করতে আরও সংস্থা আসুক না৷ তাতে অন্তত, দুর্যোগের সময় একার ঘাড়ে দোষ নিতে হয় না…।
মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তনের দিশারী। প্রতি মুহূর্তেই কোনও না কোনও পরিবর্তনের কথা বলেন। রাজ্য কী ছিল, কী হয়েছে … উদাহরণ দেন তিনি৷ কলকাতার বিদ্যুৎ বাজারে একটি কোম্পানিই 'একা কুম্ভ' হয়ে রইল কেন? সিইএসসি কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েনকা তাঁর বিশেষ স্নেহ পান, তাই? -ফাইল ছবি৷